সস্তায় হবে রেক, ‘গিনিপিগ’ ইস্ট-ওয়েস্ট

“আমরা মন্ত্রকের নির্দেশে কাজ শুরু করেছি। বিদেশ থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশের পরিমাণ কমিয়ে দেশি প্রযুক্তিতে উন্নত মানের যন্ত্রাংশ তৈরিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। মানের সঙ্গে আপস না করেই খরচ কমানো হবে।”

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২১
Share:

রেল মন্ত্রকের নির্দেশে সস্তার কোপে পড়তে চলেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো।

Advertisement

‘গুণমান’ অক্ষুণ্ণ রেখে ভবিষ্যতে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কোচ তৈরির খরচ অর্ধেকে নামাতে চায় রেল মন্ত্রক। সরকারি নির্দেশ মেনে প্রায় অর্ধেক খরচে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কোচ তৈরির প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন রেলের অধীনস্থ চেন্নাইয়ের ‘ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি’ (আইসিএফ)-র জেনারেল ম্যানেজার সুধাংশু মণি।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সূত্রের খবর, বছর দু’য়েক আগে প্রায় ৯০০ কোটি টাকায় বেঙ্গালুরুর ‘ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড’ (বিইএমএল)-কে ছয় কোচের ১৪টি রেক সরবরাহের বরাত দেওয়া হয়েছিল। সেই বরাত অনুযায়ী ১৪টির মধ্যে চারটি রেক এসে পৌঁছেছে। বাকি রেকগুলিরও ধাপে ধাপে এসে পৌঁছনোর কথা।

Advertisement

উন্নত মানের ওই স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেকের প্রত্যেকটি কোচে সিসি ক্যামেরা, ইন্টারকম, প্রশস্ত ভেস্টিবিউল ছাড়াও আধুনিক ব্রেকিং ব্যবস্থা রয়েছে। ওই ব্যবস্থায় ট্রেনের ব্রেক কষার সময়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। ‘কমিউনিকেশন বেস্ড ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম’ (সিবিটিসিএস)-এর আওতায় কন্ট্রোল রুম থেকে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে ট্রেন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রত্যেক ট্রেনে বিশেষ যন্ত্রও বসানো হয়েছে। যা থেকে প্রতি মুহূর্তে ধাবমান ট্রেনের অবস্থান জানা যায়।

যাবতীয় আধুনিক সুবিধা-সহ ছয় কোচের এমন এক-একটি রেক পাওয়ার জন্য মেট্রো কর্তৃপক্ষকে ৬৫ কোটি টাকা গুনতে হয়েছে। অর্থাৎ, কোচ পিছু খরচ পড়েছে গড়ে সাড়ে ১০ কোটি টাকার কাছাকাছি। রেল মন্ত্রক চায়, যাবতীয় বৈশিষ্ট্য রেখেই অর্ধেক টাকায় দেশি প্রযুক্তিতে ওই কোচ তৈরি হোক।

কিন্তু কেন এমন সাশ্রয়ের পথে হাঁটা? রেল মন্ত্রকের কর্তাদের ব্যাখ্যা, ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ গতির ট্রেন-১৮ তৈরি করার পরে চেন্নাইয়ের কারখানার পরিকাঠামো এবং দক্ষতা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী তাঁরা। ইতিমধ্যেই আইসিএফ শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে মেট্রোর কোচ রফতানির বরাত পেয়েছে। এই অবস্থায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কোচ তৈরির বরাত পেলে চেন্নাইয়ের সরকারি সংস্থার দক্ষতা বাড়ার পাশাপাশি রেলেরও টাকা বাঁচবে।

কিন্তু নতুন কোচ তৈরির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিইএমএল বরাত পাবে না কেন? রেলকর্তাদের ব্যাখ্যা, বিইএমএল নিয়ে তাঁদের আপত্তি নেই। তবে কম খরচে রেলের নিজস্ব সংস্থায় (আইসিএফ) উন্নত মানের কোচ তৈরি করা গেলে সব দিক দিয়েই সুবিধা হবে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এখনকার কোচে বিদেশ থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশের পরিমাণ বেশি হওয়াতেই দাম বেশি পড়ে বলে দাবি রেল দফতরের কর্তাদের।

কম খরচে দেশে উন্নত মানের যন্ত্রাংশ তৈরি হবে কী ভাবে?

আইসিএফ-এর জেনারেল ম্যানেজার সুধাংশু মণি বলেন, “আমরা মন্ত্রকের নির্দেশে কাজ শুরু করেছি। বিদেশ থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশের পরিমাণ কমিয়ে দেশি প্রযুক্তিতে উন্নত মানের যন্ত্রাংশ তৈরিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। মানের সঙ্গে আপস না করেই খরচ কমানো হবে।”

রেল মন্ত্রকের পরিকল্পনার মধ্যে অবশ্য অশনি সঙ্কেত দেখছেন কলকাতা মেট্রো রেলের প্রাক্তন এবং বর্তমান আধিকারিকদের একাংশ। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘রেলের অধীনস্থ সংস্থা হওয়ায় সস্তায় প্রযুক্তি উদ্ভাবনের যাবতীয় পরীক্ষার ক্ষেত্রে কলকাতা মেট্রোকেই বারবার গিনিপিগ করা হয়। ত্রুটিপূর্ণ কোচ আনায় ক্ষতি হয় ভাবমূর্তির। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর মতো আন্তর্জাতিক মানের প্রকল্প নিয়ে এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা না হলেই ভাল।’’

সুধাংশু অবশ্য জানিয়েছেন, জার্মানির একটি সংস্থার সরবরাহ করা ‘কনিক্যাল স্প্রিং’-এ ত্রুটি থাকায় কলকাতা মেট্রোর কোচে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ওই ত্রুটি দূর করা হয়েছে। যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শেষ। খুব তাড়াতাড়িই ওই রেক চলবে।

রেকর্ড আয় বৃদ্ধি মেট্রোর


পুজোর মাসে, অক্টোবরে আয় বেড়েছে কলকাতা মেট্রোর। কর্তৃপক্ষের দাবি, গত বছরের তুলনায় আয় বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা। একই সঙ্গে গত বছর অক্টোবরের তুলনায় এ বারে ৪১ লক্ষ যাত্রীও মেট্রোতে বেশি যাতায়াত করেছেন। দু’ ক্ষেত্রেই বৃদ্ধির হার এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ।
মেট্রো সূত্রের খবর, গত অক্টোবরে মেট্রোয় যাতায়াত করেছেন ১ কোটি ৯৮ লক্ষ ১৩ হাজার ১৯৬ জন। ২০১৭ সালে ওই সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৫৬ লক্ষ ৮৮ হাজার ৯২। যাত্রী সংখ্যার নিরিখে শুধু অক্টোবরেই গত বছরের তুলনায় মেট্রোতে ৪১ লক্ষ ২৫ হাজার ১০৪ জন যাত্রী বেশি যাতায়াত করেছেন। গত অক্টোবরে মেট্রোর আয় হয়েছে ১৮ কোটি ৮২ লক্ষ ২২ হাজার ৫৮১ টাকা। গত বছর অক্টোবরে যা ছিল ১৪ কোটি ৮৮ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭৪৬ টাকা। মেট্রো জানিয়েছে, পুজোর মাসে যাত্রী-সংখ্যা ৩ বার আট লক্ষের সীমা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে গত ১৫ অক্টোবর ষষ্ঠীর দিনে মেট্রোতে সর্বোচ্চ ৯ লক্ষ ১১ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছেন।
মেট্রো কর্তাদের মতে, বাসের ভাড়া বৃদ্ধির পরে মেট্রোতে যাত্রী-সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। গত ৪ সেপ্টেম্বর মাঝেরহাটে সেতু বিপর্যয়ের পরে মেট্রোতে দিনে গড়ে ৩০-৩৫ হাজার যাত্রী বেড়েছে। পুজোর মাসে ওই সংখ্যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক হিসেবে। পাশাপাশি, পুজোর দিনে কাগজের টিকিটের বদলে টোকেন ব্যবহার যাত্রী-সংখ্যা ও আয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা। জীর্ণ নন এসি রেক, বিকল এসক্যালেটর, প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের স্বয়ংক্রিয় গেটের সমস্যা সত্ত্বেও মেট্রোতে যাত্রী-সংখ্যা বৃদ্ধির ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন মেট্রো কর্তারা। মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সমস্যা সত্ত্বেও যাত্রীদের মেট্রোর উপরে আস্থা বাড়ছে। আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যে পরিকাঠামো সংক্রান্ত সমস্যা অনেকটাই মিটবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন