পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষা

পরীক্ষায় ‘টুপি’ রুখতে অস্ত্র টুপিই

দৌড়ের পরীক্ষা দেওয়ার আগে ওঁদের মাথায় পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে একটি করে কাপড়ের টুপি। সাড়ে ছ’মিনিটের মধ্যে ১৬০০ মিটার দৌড় শেষ করতে হবে এই পরীক্ষার্থীদের। তার চেয়ে বেশি সময় লাগার অর্থ অকৃতকার্য হওয়া। আর মাথার ওই টুপির জন্য তো কোনও রকম ফাঁকি বা কারচুপি করে পরীক্ষকদের ‘টুপি’ পরানোরও উপায় নেই।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৫
Share:

দৌড়ের পরীক্ষা দেওয়ার আগে ওঁদের মাথায় পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে একটি করে কাপড়ের টুপি। সাড়ে ছ’মিনিটের মধ্যে ১৬০০ মিটার দৌড় শেষ করতে হবে এই পরীক্ষার্থীদের। তার চেয়ে বেশি সময় লাগার অর্থ অকৃতকার্য হওয়া। আর মাথার ওই টুপির জন্য তো কোনও রকম ফাঁকি বা কারচুপি করে পরীক্ষকদের ‘টুপি’ পরানোরও উপায় নেই।

Advertisement

আসলে এই কাপড়ের টুপিতে রয়েছে মাইক্রোচিপ, যার মধ্যে রয়েছে বিশেষ সফ্‌টওয়্যার। ফলে দৌড়ের সময়ে মাথায় থাকা ওই টুপিই বলে দেয়, পরীক্ষার্থী ১৬০০ মিটার পুরো দৌড়েছেন কি না এবং কত মিনিটে সেই দূরত্ব পেরিয়েছেন। রেসকোর্সের মাঠে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগের জন্য শারীরিক পরীক্ষায় ‘ম্যান মে়ড’ কারচুপি ঠেকাতে এখন সব ব্যবস্থাই কম্পিউটর চালিত, প্রযুক্তি নির্ভর এবং স্বয়ংক্রিয়। অতীতে বহুবার অভিযোগ উঠেছে, শারীরিক পরীক্ষায় কৃতকার্য না হয়েও উতরে গিয়েছেন অনেকে বা উতরে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। দৌড় শেষ করেননি বা অনেক বেশি সময় নিয়ে ফেলেছেন, এমন প্রার্থীও চাকরি পেয়ে গিয়েছেন দিব্যি। এমনকী উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশি— এমন ব্যক্তিও উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সব নিয়ে মামলা হয়েছে বিস্তর, কিছু মামলা আবার ঝুলেও রয়েছে।

আর এ সব থেকে রেহাই পেতেই শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষার শুরুতেই ওজন ও উচ্চতা এক সঙ্গে নির্ধারণ করতে পারে, এমন একটি যন্ত্রে দাঁড় করানো হয় প্রার্থীকে। উচ্চতার সঙ্গে ওজনের ভারসাম্য ঠিকঠাক না হলে ‘অকৃতকার্য’ (ডিসকোয়ালিফায়েড) লেখা একটি কাগজের টুকরো বেরিয়ে আসে ওই যন্ত্র থেকে। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘কোনও ব্যক্তি নয়, এই ব্যবস্থায় পরীক্ষার্থী যন্ত্র তথা কম্পিউটরের নজরদারিতে থাকেন। এমনকী পরীক্ষকও ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কোনও ভুল করতে গেলে তা ধরে ফেলবে যন্ত্র। এর ফলে স্বচ্ছতা বজায় থাকছে।’’ কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা বলছেন, এই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফল নথিবদ্ধ করার প্রক্তিয়াতেও সময় কম লাগে।

Advertisement

একটা সময়ে এই দৌড় নিয়ে বহু অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এখন ১৬০০ মিটারের প্রতি ৫০ মিটারে সিসিটিভির নজরদারি থাকে। লালবাজার সূত্রে খবর, পরীক্ষার যাবতীয় তথ্য প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর জন্য এক-একটি সিডি-তে রাখা থাকে। যা তাঁরা পেয়ে যান পরীক্ষার পরেই। সেই সিডিরই অন্য কপি থাকে পরীক্ষক বা লালবাজার-কর্তৃপক্ষের কাছে। পুলিশকর্তারা জানান, ভবিষ্যতে কোনও প্রার্থী মামলা করলে যাতে আদালতে প্রমাণ পেশ করা যায়, তাই ওই সিডির ব্যবস্থা।

শুধু দৌড়ের সময়ই নয়, নিয়োগের জন্য শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা কবে নেওয়া হবে, তা-ও এখন চিঠির পাশাপাশি মোবাইলে ‘মেসেজ’ করে জানিয়ে দেওয়া হয় পরীক্ষার্থীদের। কোনও কারণে পরীক্ষার্থীর কাছে যদি চিঠি না পৌঁছয়, সে কথা ভেবেই এই ব্যবস্থা।

তবে কিছু দিন আগেই এই পরীক্ষা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, চাকরিপ্রার্থীর বদলে তাঁর হয়ে শারীরিক ভাবে চূড়ান্ত সক্ষম অন্য কেউ দৌড়চ্ছেন। সে ক্ষেত্রে কম্পিউটরই বা কী করবে? আর নজরদারি ক্যামেরাই বা কী করে ধরবে কারচুপি? কলকাতা পুলিশের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় এমন সফ্‌টঅয়্যার রাখা হবে, যাতে ভুয়ো প্রার্থী গোড়াতেই ধরা পড়ে যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন