কৃষ্ণা বসু-সুগত বসুর বাড়িতে এসে হুমকি তোলাবাজদের

ওই ঘটনায় হতচকিত এবং আতঙ্কিত সুগতবাবু রাজ্যে আমজনতার নিরাপত্তা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘আমার বাড়িতে কী হল, তা নিয়ে ভাবছি না। কিন্তু আমি ভাবিত সাধারণ মানুষের সঙ্গে কী হতে পারে, তা নিয়ে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০২:৪৪
Share:

বাড়ির সামনে। নিজস্ব চিত্র

বাড়ি তৈরি বা মেরামতির কাজ করাতে গিয়ে তোলাবাজদের খপ্প়রে পড়ার অভিজ্ঞতা আমজনতার অনেকেরই আছে। কিন্তু এ বার তোলাবাজদের হুমকির মুখে পড়লেন তৃণমূলের সাংসদ সুগত বসু ও তাঁর বৃদ্ধা মা তথা তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কৃষ্ণা বসু।

Advertisement

ওই ঘটনায় হতচকিত এবং আতঙ্কিত সুগতবাবু রাজ্যে আমজনতার নিরাপত্তা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘আমার বাড়িতে কী হল, তা নিয়ে ভাবছি না। কিন্তু আমি ভাবিত সাধারণ মানুষের সঙ্গে কী হতে পারে, তা নিয়ে।’’

যে ভাবে ওই যুবকেরা কৃষ্ণাদেবীকে হুমকি দিয়েছে, তাতে ব্যথিত সুগতবাবুর মন্তব্য, ‘‘আমার এটাই খারাপ লাগছে যে, ওরা আমার ৮৬ বছরের মাকেও হুমকি দিল!’’ কৃষ্ণাদেবীর নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন সাংসদ। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন আমরা দুই ভাই-ই বাড়িতে ছিলাম। কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই আমি ও আমার ভাই বাইরে থাকি। মা একা থাকেন। এটাই উদ্বেগের।’’ ঘটনার পরেই পুরো বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ সুব্রত বক্সীকে জানান সুগতবাবু।

Advertisement

আমজনতার ক্ষেত্রে পুলিশ সাধারণত অভিযুক্তদের ধরতে টালবাহানা করলেও এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। সোমবার সুগতবাবু এবং তাঁর মাকে তোলা চেয়ে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ১০ ঘণ্টার মধ্যেই ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। লালবাজার জানিয়েছে, ধৃতদের নাম রাজু, আকাশ, বাপি, মোটা, বলরাম ও বাবু। পেয়ারাবাগান বস্তির ওই বাসিন্দারা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেই লালবাজার সূত্রের দাবি।

আরও পড়ুন: প্রাতরাশে ইডলি-সম্বর, খোশমেজাজেই কারনান

পেয়ারাবাগান বস্তির আশপাশের বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, অভিযুক্তেরা এলাকার এক তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ। তাদের তৃণমূলের মিছিল ও সভায় দেখে যায়। পেয়ারাবাগান বস্তি কলকাতা পুরসভার ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শুকদেব চক্রবর্তী রাতে বলেন, ‘‘আমি সারা দিন বাইরে ছিলাম। জানি না কী হয়েছে।’’

কী হয়েছিল এ দিন? পুলিশ জানায়, ৯০ নম্বর শরৎ বসু রোডে সুগতবাবুর পৈতৃক বাড়ির দোতলার বারান্দায় জাফরির মেরামতি চলছিল। তার জন্য ভারা বাঁধা হয়েছিল। এ দিন সকালে দু’টি মোটরবাইকে চেপে ছয় যুবক এসে হাজির হয়। নিজেদের তৃণমূলকর্মী পরিচয় দিয়ে তারা জানতে চায়, বাড়ি সারাইয়ের অনুমতি আছে কি না। তার পরে চলে যায় তারা। বেলা একটা নাগাদ ফিরে আসে ওই ছ’জন। কেন তাদের কাছ থেকে সিমেন্ট-বালি নেওয়া হয়নি, তা নিয়ে ৮৬ বছরের কৃষ্ণাদেবীকে তারা হুমকি দেয় বলে পুলিশের কাছে বসু বাড়ি থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। কার অনুমতি নিয়ে বাড়ি মেরামতির কাজ হচ্ছে, তা কৃষ্ণাদেবীর কাছ থেকে জানতে চায় ওই যুবকেরা।

পুলিশ জানায়, চেঁচামেচি শুনে সুগতবাবু দোতলা থেকে নেমে আসেন। সাংসদকেও রেয়াত করেনি অভিযুক্তেরা। সিমেন্ট, বালি তাদের কাছ থেকেই নিতে হবে বলে হুমকি দিয়ে যায় ওই যুবকেরা। শুধু তা-ই নয়, সাংসদ উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে ফোন করতে গেলে ওই যুবকদের এক জন বলে, ‘‘ও সব পুলিশকে জানিয়ে কোনও লাভ হবে না।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, সাংসদের ফোন পেয়েই ঘটনাস্থলে যান বালিগঞ্জ থানার অফিসারেরা। সাংসদের অভিযোগের ভিত্তিতে সিসিটিভি-র ছবি দেখে ওই যুবকদের চিহ্নিত করে তল্লাশি শুরু হয়। প্রথমে পেয়ারাবাগান বস্তি থেকে ধরা হয় রাজুকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ধরা হয় বাকি পাঁচ জনকে। পুলিশের দাবি, কার বাড়িতে তারা তোলা চাইতে গিয়েছিল, তা অভিযুক্তেরা জানতই না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন