আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে টাকা-গয়না লুঠ বেহালায়

মাঝরাতে পরিচারিকা সীমার দরজা ধাক্কাধাক্কি আর আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় বছর সত্তরের দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী সুনন্দাদেবীর। ঘুম চোখে কোনও রকমে দরজা খোলার পরই ভয় পেয়ে যান দীপেনবাবু। পরিচারিকা সীমার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র এবং গলায় ভোজালি ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে গোটা চার-পাঁচ মুখোশধারী দুষ্কৃতী। এর পর আর কোনও কথা নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৩:৫০
Share:

এই বাড়িতেই হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। —নিজস্ব চিত্র।

মাঝরাতে পরিচারিকা সীমার দরজা ধাক্কাধাক্কি আর আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় বছর সত্তরের দীপেন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী সুনন্দাদেবীর। ঘুম চোখে কোনও রকমে দরজা খোলার পরই ভয় পেয়ে যান দীপেনবাবু। পরিচারিকা সীমার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র এবং গলায় ভোজালি ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে গোটা চার-পাঁচ মুখোশধারী দুষ্কৃতী।
এর পর আর কোনও কথা নয়। দরজা খোলা মাত্র তাঁকে ঠেলে ঘরে ঢুকে পড়ে দুষ্কৃতীর দল এবং আলমারি থেকে লক্ষাধিক টাকার গয়না, ৩টি মোবাইল-সহ হাজার খানেক টাকা নিয়ে পালায়। শুধু তাই নয়, দীপেনবাবুর লাইসেন্সপ্রাপ্ত .২৫ বোরের ২০টি কার্তুজ-সহ ব্রাউনি পিস্তলটিও আলমারির ভিতর থেকে বের করে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ বেহালা ৩৩৯ টি ইস্ট পার্কের কালীপদ মুখার্জি রোডের বাড়ি ‘জল্পেশ নিকেতন’-এ লুঠপাঠের ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠে গেল জনবসতি এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।
শুধু তাই নয়। গত মঙ্গলবারও একই কায়দায় রিজেন্ট পার্ক থানার নিউ গভর্নমেন্ট কলোনির একটি বাড়িতে একই ভাবে লুঠপাঠ চালিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। ওই দিন ওই বাড়ির মালিক প্রলয় বিশ্বাসের স্ত্রী ববিতা ও বছর দশেকের ছেলে পুষ্পকের মাথায় ভোজালি এবং আগ্নেয়াস্ত্র ধরে লুঠপাঠ চালায় এক দল দুষ্কৃতী। সেখানে তারা ঢোকে জানালার গ্রিল কেটে এবং লুঠপাঠ সেরে পালোনের সময়ে জানিয়ে যায়, তারা শিক্ষিত এবং পেটের দায়ে ডাকাতিতে নেমেছে।
এ বার অবশ্য দুষ্কৃতী এক তলার জানালার গ্রিল কেটে ঘরে এক জনকে ঢুকিয়ে আগে ‘টার্গেট’ করে সেই ঘরে থাকা ঘুমন্ত পরিচারিকাকে। বছর পঞ্চাশের পরিচারিকার গলায় ভোজালি ও আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভিতর থেকে বাড়ির দরজা খোলায় এবং সেখান দিয়ে বাকিরা ঢোকে। এর পরই ওই পরিচারিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুষ্কৃতীরা বাড়ির বাকি সদস্য সম্পর্কে তথ্য নেয়। পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে ওই পরিচারিকা জানান, বাড়িতে তিনি ছাড়া মালিক এবং তাঁর স্ত্রী রয়েছেন এবং তাঁরা দোতলায় থাকেন। এর পরই তাঁর মাথায় অস্ত্র ধরে সেই ঘরে নিয়ে যেতে বলে দুষ্কৃতীরা।
সেখানে পৌঁছে পরিচারিকার দরজা ধাক্কাধাক্কি এবং ডাকে দরজা খোলার পরই দুষ্কৃতীরা লুঠপাঠ চালায় এবং দোতলা থেকে সিড়ি ধরে নেমে মূল দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। ঘর ছাড়ার আগে অবশ্য পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমকে না জানানোর হুমকি দিয়ে গেল দুষ্কৃতীর দলটি। হুমকি না হলেও যেমন প্রায় একই কায়দায় গত মঙ্গলবার দুষ্কৃতীরা রিজেন্ট পার্কের প্রলয় বিশ্বাসের বাড়িতে লুঠপাঠের পরে নরম, শান্ত গলায় বলে যায় ‘‘দাদা, আমরা শিক্ষিত ছেলে। পেটের দায়ে ডাকাতি করছি। ভয় নেই, কোনও ক্ষতি করব না।’’

Advertisement

পুলিশ জানায়, এ দিনও আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লুঠপাঠ চালালেও, কারও গায়ে কোনও আঁচড় কাটেনি দুষ্কৃতীরা। তবে দুষ্কৃতীরা বেরিয়ে যেতেই দীপেনবাবু হরিদেবপুর থানায় খবর দেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে একটি কথাও বলেননি। এ দিকে ডাকাতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন হরিদেবপুর থানার ওসি-সহ আধিকারিকেরা। আসেন ডিসি রশিদ মুনির খান এবং লালবাজারের গোয়েন্দারা।

সাত দিনের মাথায় শহরের দু’টি আলাদা আলাদা ডিভিশনে একই কায়দায় পুরো ‘অপারেশন’ চালানো দেখে অবশ্য খোদ লালবাজারের কর্তাদের মনে সন্দেহ জেগেছে দুষ্কৃতী দলটিকে নিয়ে। যদিও একই দল যুক্ত কি না, তা তদন্ত সাপেক্ষ বলে জানান ডিসি (এসএসডি) রশিদ মুনির খান।

Advertisement

এ দিন ঘটনার পরে স্থানীয় আরও দু’জন জানান, তাঁদের বাড়িতেও দুষ্কৃতীরা ঢোকার চেষ্টা করেছিল। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, তিনি সকালে উঠে দেখেন তাঁরও নিচের তলার একটি জানালা খোলা এবং পাল্লা ভাঙা রয়েছে। যদিও দীপেনবাবু ছাড়া আর কেউ পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ জানাননি। তবে জনবসতি এলাকায় অস্ত্র-সহ লুঠপাঠ চালিয়ে দুষ্কৃতীরা পালানোয় এলাকার সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, গত বছরেও পুজোর আগে এই একই পাড়ায় ডাকাতি হয়। কিন্তু তার পরও প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রশ্ন উঠেছে গত মঙ্গলবার রিজেন্ট পার্ক এলাকার বাসিন্দা প্রলয় বিশ্বাসের বাড়ির ডাকাতি প্রায়য় একই কায়দায় হয়। সেই দলটিই কী এ দিনের ঘটনায় যুক্ত? রশিদ মুনির খান জানান, রিজেন্ট পার্ক থানাটি অন্য ডিভিশনে। কিন্তু দু’টি ঘটনার মিল থাকায় তদন্তের স্বার্থে তাঁরা ওই ডিভিশনের সঙ্গেও কথা বলবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন