এসএমএসে জানা গেল, গায়েব টাকা

রবিবারের বিকেল। কেউ গিয়েছিলেন সিনেমা দেখতে, কেউ আবার ছিলেন বাড়িতেই। পকেট কিংবা ব্যাগে রাখা ছিল এটিএম কার্ড। হঠাৎই মোবাইলে এসএমএস, ‘এই মাত্র অমুক জায়গার এটিএম থেকে আপনি এত টাকা তুলে নিলেন।’ ভয়ে কেউ কেউ ফোন করে এটিএম কার্ড ‘ব্লক’ও করেছিলেন। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। সোমবার অনেকেই ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখেন, কারও খোয়া গিয়েছে ৬ হাজার টাকা, কারও আবার ২ লক্ষ ৪০ হাজার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মধ্যমগ্রাম শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:১০
Share:

ব্যাঙ্কের সামনে উদ্বিগ্ন গ্রাহকেরা। সোমবার, মধ্যমগ্রামে। — নিজস্ব চিত্র

রবিবারের বিকেল। কেউ গিয়েছিলেন সিনেমা দেখতে, কেউ আবার ছিলেন বাড়িতেই। পকেট কিংবা ব্যাগে রাখা ছিল এটিএম কার্ড। হঠাৎই মোবাইলে এসএমএস, ‘এই মাত্র অমুক জায়গার এটিএম থেকে আপনি এত টাকা তুলে নিলেন।’ ভয়ে কেউ কেউ ফোন করে এটিএম কার্ড ‘ব্লক’ও করেছিলেন। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। সোমবার অনেকেই ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখেন, কারও খোয়া গিয়েছে ৬ হাজার টাকা, কারও আবার ২ লক্ষ ৪০ হাজার।

Advertisement

এক-দু’জন নয়, শনিবার রাত ৯টা থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ভাবেই খোয়া গিয়েছে প্রায় জনা দশেক গ্রাহকের টাকা। সবারই বাড়ি মধ্যমগ্রামে। তাঁরা প্রত্যেকেই পুলিশকে জানিয়েছেন, কেউই তাঁদের ফোন করে এটিএম পিন বা কার্ডের খুঁটিনাটি তথ্য জানতে চায়নি। অনলাইনে শপিংও করেননি কেউ। তবুও এমন ঘটনা।

যেমন, মধ্যমগ্রামের বসুনগরের বাসিন্দা চৈতালী ঘোষ। সোমবার মধ্যমগ্রামে ইউকো ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে চৈতালীর বাবা জয়নারায়ণ ঘোষ বলেন, ‘‘রবিবার রাত ১২টা নাগাদ মোবাইলে মেসেজ এল, ৪৯ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। কাউকে পিন বা কার্ড নম্বর দিইনি। কিছুই বুঝতে পারছি না। ব্যাঙ্কও কিছু বলতে পারছে না।’’

Advertisement

প্রতারিতদের মধ্যে অনেকে এ দিন মধ্যমগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যেমন, বঙ্কিমপল্লির বাসিন্দা দেবার্ঘ্য দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘রবিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ এসএমএস আসে, এ জে সি বসু রোডের একটি এটিএম থেকে ৬ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ভয় পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে এটিএম কার্ড ব্লক করে দিই। তার পরে সোমবার সকালে ব্যাঙ্কে এসে জানতে পারি, আমার অ্যাকাউন্ট থেকে আরও ১০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।’’

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশেরও ধারণা হয়েছিল, শুধু ইউকো ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের টাকাই খোয়া যাচ্ছে। কিন্তু পরে দেখা যায়, সিটি ব্যাঙ্কের গ্রাহক পম্পা বিশ্বাসের ২ লক্ষ ৪০ হাজার, স্টেট ব্যাঙ্কের গ্রাহক কৃষ্ণা গঙ্গোপাধ্যায়ের ৪৬ হাজার এবং আরও অনেকের ওই সময়ের মধ্যেই টাকা খোয়া গিয়েছে। আরও দেখা যায়, প্রতারিতদের মধ্যে মিল হল, তাঁরা প্রত্যেকেই মধ্যমগ্রাম ইউকো ব্যাঙ্ক সংলগ্ন নির্দিষ্ট একটি এটিএম থেকেই টাকা তুলেছিলেন।

যেমন সুতপা মুখোপাধ্যায়। তাঁর ছেলে রুদ্রদীপ এ দিন বলেন, ‘‘মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে ৬ হাজার টাকা খোয়া গিয়েছে। ক’দিন আগে ইউকো ব্যাঙ্কের ওই এটিএম থেকেই টাকা তুলেছিলাম। সোমবার মধ্যমগ্রাম থানায় অভিযোগ জানাতে দিয়ে শুনি, প্রতারিতেরা সবাই এক সপ্তাহের মধ্যে ওই এটিএম থেকেই টাকা তুলেছেন। দিন কয়েক আগে এটিএম সারাতে লোকও এসেছিল।’’

কী বলছে ব্যাঙ্ক? ইউকো ব্যাঙ্কের মধ্যমগ্রাম শাখার ম্যানেজার মলয় দে বলেন, ‘‘সমস্ত অভিযোগ উপরমহলে জনিয়েছি।’’ ইউকো ব্যাঙ্কের এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর জে কে গর্গ বলেন, ‘‘আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি দফতর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।’’ ওই ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার (তথ্যপ্রযুক্তি) অতুল সিংহ বলেন, ‘‘ইউকো ব্যাঙ্কের মধ্যমগ্রাম শাখার চার গ্রাহকের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ সোমবার দুপুরে পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্য বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

তবে এমন ঘটনা অসম্ভব বলে মনে করছেন না সাইবার অপরাধের তদন্তকারীরা। সাইবার জগতের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তদন্ত করেছেন, রাজ্য পুলিশের এমন এক কর্তা জানান, এটিএম থেকে গ্রাহকদের তথ্য চুরি হতে পারে। এটিএমে গোপন ক্যামেরা রেখে গ্রাহকের কার্ড নম্বর, পিন, পাসওয়ার্ড জেনে নেওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

এ ছাড়াও এটিএম মেশিনে যেখানে কার্ড পাঞ্চ করা হয়, সেখানে নকল কার্ড রিডার রেখে গ্রাহকদের কার্ডের খুঁটিনাটি তথ্য জানা এবং ভাইরাসের মাধ্যমেও তা চুরি করা যায়। পাসওয়ার্ড টাইপ করার সঙ্গে সঙ্গে তা কপি করে নেবে সেই ভাইরাস। এটিএমে নজরদারির দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীর কারসাজিতেও তথ্য চুরি সম্ভব।

ঘটনাটি জেনে সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, এ ক্ষেত্রে এটিএম থেকেই তথ্য চুরির সম্ভাবনা বেশি। তিনি বলেন, ‘‘এটিএমে তথ্য চুরি হয়ে থাকলে গ্রাহকদের কিছু করার থাকে না। ফলে শুধু গ্রাহকদের সচেতনতা বাড়িয়ে সুবিধা হবে না। ব্যাঙ্কগুলিকেও গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন