বাগুইআটি বইমেলা

খুচরোর জোগান দিতে সহায় লক্ষ্মীর ভাঁড়

কেউ বা়ড়িতে মাটির ঘটে খুচরো পয়সা জমিয়ে ছিলেন। কেউ বা স্বামীর থেকে পাওয়া হাতখরচের টাকা রেখে দিয়েছিলেন আলমারির লকারে। প্রয়োজনে তা সংসারের কাজে লাগত।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

কেউ বা়ড়িতে মাটির ঘটে খুচরো পয়সা জমিয়ে ছিলেন। কেউ বা স্বামীর থেকে পাওয়া হাতখরচের টাকা রেখে দিয়েছিলেন আলমারির লকারে। প্রয়োজনে তা সংসারের কাজে লাগত। নোট বাতিলের সময়ে গৃহবধূদের তিল তিল করে জমানো সেই লক্ষ্মীর ভাঁড়ই হয়ে উঠছে বাগুইআটি বইমেলার ব্যবসায়ীদের সহায়।

Advertisement

আজ, শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বইমেলা। বাজারে নগদ টাকার আকাল। মেলা কমিটি তাই বইবিক্রেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, বেচাকেনা করতে হবে পেটিএম বা কার্ডের মাধ্যমে। সমস্যায় পড়েছিলেন বেশ কিছু লিটল ম্যাগাজিনের ব্যবসায়ী ও ছোট বই বিক্রেতারা। তাঁরা মেলা কমিটির কাছে অনুরোধ জানান খুচরো টাকা দিয়ে সাহায্য করতে। আর সেখানেই ভরসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বধূরা।

মেলা চলবে আগামী ৩১ তারিখ পর্যন্ত। বাগুইআটি বইমেলা কমিটি জানাচ্ছে, প্রতি বছর খুচরো বই ব্যবসায়ীদের জন্য ৫০-৬০ হাজার টাকার খুচরো জোগাড় করা থাকে। এ বার নোট বাতিলের জেরে আরও বেশি জোগান দরকার। মেলার কার্যকরী সভাপতি অমিতাভ বসু জানান— অনেক বই বিক্রেতা তাঁদের জানিয়েছেন যে, ব্যাঙ্ক তাঁদের কার্ড ব্যবহারের যন্ত্র দিতে পারেনি। অমিতাভবাবুর কথায়, ‘‘এই সমস্যার সমাধানে পাড়ার নাগরিকদের কাছে হাত পেতে আবেদন জানিয়েছিলাম আমরা। মেলা কমিটির সদস্যরাও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা উঠেছে। তাতে লক্ষ্মীর ভাঁড় ভেঙে পাড়ার মহিলারাই প্রায় ৫৫ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন মেলা কমিটির হাতে।’’

Advertisement

ওই মহিলাদের মধ্যেই রয়েছেন বাগুইপাড়ার কল্পনা ঘোষ এবং কাকলি বাগুই। কল্পনাদেবীর কথায়, ‘‘বাড়ির পুরুষেরা দোকান-বাজার সেরে ফিরে খুচরো টাকা আমার কাছে দিয়ে দেন। আবার নিজের হাতখরচ থেকেও পয়সা ভাঁড়ে ফেলি। বেশির ভাগটাই হয় ১টাকা বা ২ টাকার কয়েন। সেই টাকাই মেলা কমিটিকে দিয়েছি।’’ নিজের সঞ্চয় থেকে কল্পনাদেবী আড়াই হাজার টাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে মেলা কমিটি।

আবার কাকলীদেবীর কথায়, ‘‘আমি আর আমার মেয়ে দু’জনেই ভাঁড়ে পয়সা জমাই। বহু বার দেখেছি সেই টাকা সংসারে জরুরি সময়ে কাজে লেগেছে। এ বার সেই টাকা বইমেলার কাজে আসবে দেখে ভাল লাগছে।’’ মেলা কমিটির হাতে হাজার পাঁচেক টাকা তুলে দিয়েছেন তিনিও।

এ ভাবে বাগুইপাড়া, অশ্বিনী নগর, শচীন্দ্রলাল সরণির মতো বাগুইআটির নানা এলাকার প্রায় ৩০ জন মহিলার কাছ থেকে খুচরো টাকা মিলেছে বলে জানিয়েছেন বইমেলা কমিটির সদস্যেরা। এ ছাড়া, কমিটির পুরুষ সদস্যরা প্রত্যেকে ব্যাঙ্ক থেকে ১০ হাজার টাকার কয়েন সংগ্রহ করে এনে মেলা কমিটিকে দিয়েছেন। পাশাপাশি, অনলাইন বিকিকিনির সুবিধার্থে মেলা প্রাঙ্গণে বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবাও দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন