অপরিচ্ছন্ন: বাড়ির মধ্যেই জমে জল, আবর্জনা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
ডেঙ্গি শুধু নয়, যে কোনও সংক্রামক রোগে কারও মৃত্যু হলেই সংশ্লিষ্ট পুরসভা তার দায় নিচ্ছে না। প্রথমেই মৃতকে হয় বহিরাগত কিংবা বাইরে থেকে ঘুরে আসা বলে ঘোষণা করে দিচ্ছে তারা। কলকাতা পুরসভা, বিধাননগর পুরসভা গত কয়েক বছর ধরেই এমনই করে আসছে বলে অভিযোগ। এ বার সেই পথ
ধরল হাওড়াও।
গত সোমবার দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে হাওড়া পুরসভা এলাকার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুমিত চৌরারিয়া নামে তেত্রিশ বছরের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ওই হাসপাতালের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার উইথ শক অ্যান্ড মাল্টি অর্গান ফেলিওর’ বলে উল্লেখ করা হয়। হাওড়া পুরসভার চিকিৎসক-মেয়র রথীন চক্রবর্তী ওই ২৮ নম্বর ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর। তাঁর দাবি, ওই যুবক দেওঘর থেকেই অসুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন। যদি ডেঙ্গি হয়েও থাকে হাওড়ায় এসে হয়নি।
ওই যুবক যে এলাকায় থাকতেন বুধবার সেই রাজবল্লভ সাহা লেনের বিভিন্ন বাড়িতে জমে থাকা জলে মিলল অজস্র এডিস মশার লার্ভা। সন্ধান মেলে কয়েক দিন ধরে ‘অজানা’ জ্বরে আক্রান্ত দুই রোগিণীরও। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল সুমিতের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গির কথা পরিষ্কার ভাবে লিখলেও, হাওড়া পুরসভা ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর তা মানতে রাজি নয়। তারা জানাচ্ছে, ওই যুবকের মৃত্যু কী ভাবে হল তা ফের পরীক্ষা করবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তারাই ঘোষণা করবে মৃতের ডেঙ্গি সংক্রমণ হয়েছিল কি না।
চৌবাচ্চায় মশার লার্ভা। হাওড়া পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে মেয়রের ওয়ার্ডে এ দিন যে অভিযান হয় তাতে দেখা যায় গোটা এলাকাটাই মশার আঁতুড় হয়ে রয়েছে। বহুতল-বাড়ির অব্যবহৃত ‘কমন প্যাসেজে’ ভরে থাকা আবর্জনার ভিতরে পড়ে থাকা নানা প্লাস্টিকের পাত্র, প্লাস্টিকের গ্লাস, ভাঙা কাচের বোতল, দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত চৌবাচ্চার জমা জলে গিজগিজ করছে মশার লার্ভা। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা কীটনাশক তেল দিয়ে সেগুলি ধ্বংস করেন। পাশাপাশি বাড়ির মালিকদের হাতে পুরসভার নোটিস ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, তিন দিনের মধ্যে সব জল ফেলে আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। রাস্তার ধারে থাকা একটি মদের দোকানের সামনে রাস্তা দখল করে গজিয়ে ওঠা দু’টি গুমটির পিছন থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর কাচের বোতল ও প্লাস্টিকের গ্লাস। তার ভিতর জমে থাকা জলে মেলে মশার লার্ভা।
ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘যে সব লার্ভা পাওয়া গিয়েছে তা অধিকাংশই এডিস মশার লার্ভা। যে সব বাড়ি ও দোকান থেকে সেগুলি পাওয়া গিয়েছে আমরা নোটিস দিয়েছি।’’ তা হলে কি এতদিন ওই সব এলাকায় পুরসভার কোনও অভিযান হয়নি? মেয়র পারিষদ অবশ্য দায় চাপিয়েছেন নাগরিকদের উপরে। তাঁর দাবি, পুরসভার সাড়ে তিন হাজার স্বাস্থ্যকর্মী সারা বছর ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে সচেতন করেন। কিন্তু মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।
ভাস্করবাবু এ দিন জানান, গত বছর এই সময় পর্যন্ত হাওড়া পুর এলাকায় ২২ জনের রক্তে ডেঙ্গি পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল। একজনেরও মৃত্যু হয়নি। এ বার ৭ অগস্ট পর্যন্ত ২৪ জনের ডেঙ্গি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলে নাগরিকদের আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন মেয়র পারিষদ।
তবে হাওড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাসের আশঙ্কা, গত বছর ডেঙ্গি কম হওয়ায় এ বছর তা বাড়তে পারে। এটাই এই সংক্রমণের নিয়ম। তিনি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত জেলায় ৫৮ জনের ডেঙ্গি পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। এক জনেরও মৃত্যু হয়নি।’’ রাজবল্লভ সাহা লেনে যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর দেখছে বলে ভবানীবাবু জানান।
কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।