মা-মেয়ের মৃত্যুতে আরও জোরালো খুনের তত্ত্ব

সূত্রের খবর, সুরতহালের পরে প্রাথমিক রিপোর্টে এমনটাই বলা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০১:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের কারণেই মৃত্যু হয়েছে দমদমের মল রোডের বাসিন্দা দীপ্তি মুখোপাধ্যায় (৭৫) এবং তাঁর মেয়ে স্বাতী মুখোপাধ্যায়ের (৫৩)। দু’জনেরই গলার ক্ষত একই রকমের গভীর। ওই ক্ষত কোনও ভাবেই আত্মহত্যার ইঙ্গিতবাহী নয়। সূত্রের খবর, সুরতহালের পরে প্রাথমিক রিপোর্টে এমনটাই বলা হয়েছে।

Advertisement

গত শুক্রবার মল রোডের এক আবাসনের ‘সি’ ব্লকের ১০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে রহস্যজনক ভাবে মা ও মেয়ের রক্তাক্ত, অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছিল। এর পরে চার দিন পার হয়ে গেলেও দু’জনের মৃত্যুর কারণ নিয়ে মুখ খোলেননি ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কর্তারা। সুরতহালের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টেও প্রতিফলিত হলে, মল রোডের মতো ব্যস্ত এলাকায় আবাসনের ভিতরে নৃশংস জোড়া খুনের ঘটনা কী ভাবে ঘটল, সেই প্রশ্ন উঠবে।

ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গলার পাশাপাশি দু’জনের শরীরে একাধিক ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। সে সবই নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে পাওয়া আঘাত। দীপ্তিদেবীর তুলনায় স্বাতীর দেহে এ ধরনের ক্ষতচিহ্ন বেশি ছিল। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, আত্মরক্ষায় পাওয়া আঘাত দু’ধরনের হয়, ‘অ্যাক্টিভ উন্ড’ এবং ‘প্যাসিভ উন্ড’। কেউ অস্ত্র নিয়ে আঘাত করলে আক্রান্ত ব্যক্তি ডানহাতি হলে, তিনি যে হাত ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ, তা দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করবেন। এ ক্ষেত্রে আঘাত পেলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় সেটিকে ‘অ্যাক্টিভ ডিফেন্স উন্ড’ বলা হয়। আবার ওই ব্যক্তিই যদি বাঁ হাত দিয়ে প্রতিরোধ করেন এবং সেই হাতের পিছনে যদি চোট লাগে, তা হল ‘প্যাসিভ ডিফেন্স উন্ড’। সূত্রের খবর, মা এবং মেয়ের শরীরে দু’ধরনের চোটই রয়েছে। দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে প্রায় একই সময়ে।

Advertisement

কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে মা-মেয়ে একে অপরকে আক্রমণ করেছেন? সেই আক্রমণে এক জনের মৃত্যু হলে অপর জন আত্মঘাতী হয়েছেন। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, তা হলে দু’জনের হাতেই অস্ত্র থাকতে হবে। ঘটনাস্থল থেকে এখনও কোনও অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। তা ছাড়া দু’জনের গলার ক্ষতচিহ্ন সে কথা বলছে না। দু’জনের হাতে, পায়ে, মুখে এমন কোনও আঘাত নেই যা নিজে থেকে করা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, স্বাতীদেবীর দেহে বেশি ক্ষত মিলেছে। ৭৫ বছরের বৃদ্ধা ৫৩ বছরের মেয়ের তুলনায় শারীরিক ভাবে বেশি সক্ষম ছিলেন, এটা মেনে নেওয়া কঠিন। এখানেই বাইরের এক বা একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতির সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে বলে মনে করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, খুনই করা হয়েছে দু’জনকে।

তবে দেহে আগুন লাগা নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে। সূত্রের খবর, দু’জনের শরীরের বেশির ভাগ অংশই প্রথমে বাঁ দিকে, পরে ডান দিকে পুড়েছে। মৃত্যুর আগেই দেহে আগুন লাগানো হয়েছিল, না কি মৃত্যুর পরে, তা নিয়ে আরও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে বলে মত ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের কথায়, ‘‘কাউকে মেরে ফেলা মাত্র আগুন লাগিয়ে দেওয়া হলেও এই ধন্দ তৈরি হতে পারে। এমনও হতে পারে, গলা কাটার পরে প্রমাণ লোপাটে আগুন ধরানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ।’’ ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার রাজেশ সিংহ বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন