খাটের তলায় শিশুর দেহ, ধৃত মা

হরিদেবপুরের দরগাতলা এলাকায় এক সদ্যোজাতের মৃতদেহ উদ্ধারের পরে মায়ের বিরুদ্ধে এ ভাবেই সন্তানকে ‘খুনের’ অভিযোগ উঠেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে সেই মা, বছর সাঁইত্রিশের মানোয়ারা বিবিকে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনা জানাজানি হতেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

দরজা-জানলা বন্ধ করে এক চিলতে ঘরেই জন্ম হয় শিশুপুত্রের। অভিযোগ, এর পরেই শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলা হয় সেই সদ্যোজাতকে। প্লাস্টিক জড়িয়ে দেহটি লুকিয়ে রাখা হয় খাটের নীচের একটি বাক্সে।

Advertisement

হরিদেবপুরের দরগাতলা এলাকায় এক সদ্যোজাতের মৃতদেহ উদ্ধারের পরে মায়ের বিরুদ্ধে এ ভাবেই সন্তানকে ‘খুনের’ অভিযোগ উঠেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে সেই মা, বছর সাঁইত্রিশের মানোয়ারা বিবিকে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনা জানাজানি হতেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। মানোয়ারার বড় মেয়ে দাবি করেছে, তার চোখের সামনেই ঘটেছে গোটা ঘটনা। কিন্তু স্ত্রী কেন ‘খুন’ করলেন সন্তানকে, সে সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণাই নেই বলে দাবি স্বামীর। চিকিৎসকদের অবশ্য বক্তব্য, সন্তান প্রসবের পরে অনেক মা-ই ভোগেন চরম অবসাদে। তার থেকে সন্তানকে খুন কিংবা আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয় অনেকের মধ্যে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, দরগাতলায় কয়েক মাস আগে দু’টি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন শেখ হান্নান ও তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী মানোয়ারা। শহরের এক বইয়ের দোকানের কর্মী হান্নানের পরিবারে ছিল তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলেও। মানোয়ারা গ্রেফতার হওয়ার পরে ছ’বছরের ভাই আর সাড়ে তিন বছরের বোনকে নিয়ে পাশের পাড়ায় দিদার কাছে চলে গিয়েছে মানোয়ারার বড় মেয়ে, চোদ্দ বছরের রুকসানা। তার দাবি, পুরো ঘটনাটাই সে দেখেছে। মঙ্গলবার বিকেল ৩টে নাগাদ মানোয়ারার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ করে গরম জল, কাঁচি এনে নিজেই প্রসবের ব্যবস্থা করেন মানোয়ারা। তার পরে জন্ম দেন পুত্রসন্তানের। রুকসানা বলে, ‘‘কিছু ক্ষণ পরেই মা বলল, ওকে আর রাখবে না। মেরে ফেলতে হবে। এর পরেই নুন নিয়ে ওর মুখে ঢুকিয়ে দেয়। তার পরে গলা টিপে ধরে।’’ তবে মায়ের এই আচরণের কারণ জানা নেই বলেই দাবি মেয়ের।

Advertisement

আরও পড়ুন: গলায় কলা আটকে মৃত্যু আট মাসের শিশুর

প্রতিবেশীদের দাবি, মঙ্গলবার রাতে হান্নানের ঘর থেকে সদ্যোজাতের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু অভিযোগ, বুধবার সেই বাড়িতে গিয়ে সদ্যোজাতের খোঁজ করলে মানোয়ারা তাঁদের চলে যেতে বলেন। অভিযোগ, মানোয়ারা প্রতিবেশীদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কোনও সন্তান হয়নি। পড়শিদের বক্তব্য, মানোয়ারার আচরণে সন্দেহ হয় তাঁদের। এর পরেই তাঁরা হরিদেবপুর থানায় খবর পাঠান।

আরও পড়ুন: চোর সন্দেহে যুবককে ‘মারধর’ মেডিক্যাল পড়ুয়াদের

স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতেই বুধবার বিকেল চারটে নাগাদ হান্নানের বাড়িতে যায় পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, মানোয়ারা বিবিকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিছু ক্ষণ পরে মানোয়ারা নিজেই জানান, সদ্যোজাতের দেহ রয়েছে খাটের নীচে একটি বাক্সে। সেখান থেকেই প্লাস্টিকে জড়ানো অবস্থায় শিশুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরে পরিবারের বাকি সদস্যদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের পরে গ্রেফতার হন মানোয়ারা।

এ দিন হান্নান দাবি করেন, মঙ্গল ও বুধবার বাড়িতে ছিলেন না তিনি। ফলে সন্তানের জন্ম এবং মৃত্যুর ব্যাপারে বুধবার বিকেলের আগে কিছুই জানতেন না। সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, মানোয়ারা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। প্রায় ছ’বছর ধরে এক যুবকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের জেরেই এই সন্তান বলে দাবি তাঁর। তবে প্রসবের পরে কেন মানোয়ারা সদ্যোজাতকে মেরে ফেললেন, সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে বক্তব্য হান্নানের।

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ ও তা নিয়ে অশান্তির জেরেই কি এই চরম সিদ্ধান্ত? মানোয়ারার মা আজেয়া বিবির দাবি, ‘‘মেয়ে-জামাইয়ের মধ্যে অশান্তি হত, সেটাই জানতাম না। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, বুঝতে পারছি না।’’

লালবাজার সূত্রে অবশ্য খবর, মানোয়ারাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অনেক সময়ে সন্তান প্রসবের পরে মানসিক অবসাদ হয় মায়েদের। চিকিৎসার ভাষায় যাকে ‘পোস্টপার্টম ডিপ্রেশন’ বলে। এ সব ক্ষেত্রে আত্মহত্যা কিংবা সন্তানকে খুন করার প্রবণতা তৈরি হয় মায়ের। মানোয়ারার এমন মানসিক সমস্যা রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রসবের পরে অনেক সময়ে শিশুকে বড় করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয় মায়ের মনে। তার জেরেও চরম অবসাদ হতে পারে। শিশুর ক্ষতি করে ফেলার প্রবণতা দেখা দেয় সে সময়ে। তখন মা ও সন্তানকে আলাদা রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রেও সমস্যাটা তেমনই কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন