Everest Day Celebration

এভারেস্ট-আড্ডায় আরোহীদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল তেনজিং, পেম্বা

এ দিন বৌবাজারের এক ছাদের আড্ডায় একত্রিত হন বাংলার পর্বতারোহী এবং পাহাড়প্রেমীরা। কেক কেটে তেনজিংয়ের জন্মদিন পালন করে নিজেদের পাহাড়-অভিজ্ঞতার ঝুলি উপুড় করে দেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৩ ০৮:২৯
Share:

এভারেস্ট দিবসে তেনজিং-হিলারির পুত্রেরা। ছবি: সমাজমাধ্যম।

বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গের শীর্ষে পৌঁছে আইস অ্যাক্সে চারটি পতাকা (রাষ্ট্রসঙ্ঘ, নেপাল, ব্রিটেন ও ভারত) বেঁধে তুলে ধরেছিলেন তেনজিং নোরগে। আর ক্যামেরা হাতে তেনজিংয়ের ছবি তুলে দিয়েছিলেন এডমন্ড হিলারি। তাঁর নিজের ছবি আর তোলা হয়নি।

Advertisement

১৯৫৩ সালের ২৯ মে দিনটিকে এর পর থেকে এভারেস্ট দিবস হিসাবে পালন করা হয়েছে। সোমবার, ৭০তম এভারেস্ট দিবস উপলক্ষে এক জমায়েতে নিজেদের পাহাড় অভিযান এবং এভারেস্ট-স্মৃতির কথাই তুলে আনলেন বাঙালি পর্বতারোহীরা।

এ দিন বৌবাজারের এক ছাদের আড্ডায় একত্রিত হন বাংলার পর্বতারোহী এবং পাহাড়প্রেমীরা। কেক কেটে তেনজিংয়ের জন্মদিন পালন করে নিজেদের পাহাড়-অভিজ্ঞতার ঝুলি উপুড় করে দেন তাঁরা। ২০১০ সালে প্রথম অসামরিক বাঙালিহিসাবে এভারেস্ট ছোঁয়া বসন্ত সিংহরায় শুরুই করেন এভারেস্টআরোহণের গল্প দিয়ে। বলেন, ‘‘অভিযানের সাত দিন আগে চিন ভিসা দেবে না বলে জানায়। ফলে সাউথ কলের দিক দিয়ে এভারেস্ট যেতে কয়েক লক্ষ টাকা বেশি খরচ হয়েছিল। ওঠার সময়ে হিলারি স্টেপ কখন পেরিয়ে এসেছি, দেবাশিস আর আমি বুঝতেই পারিনি। এ নিয়ে পরে অনেক হাসাহাসি করতাম আমরা।’’ আর দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘এভারেস্ট থেকে ফিরে আর পাহাড়ে যাব না ঠিক ছিল। কিন্তু এভারেস্ট ফেরত কেউ আর আমাদের সাধারণ থাকতে দিল না।’’ ২০১৬ সালের এভারেস্ট বেসক্যাম্পে এলাহি নৈশভোজ থেকে গানের আসর, সহ-অভিযাত্রী গৌতম ঘোষ, পরেশ নাথ, সুভাষ পালের মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়েও স্মৃতিচারণ করেন দেবাশিস।

Advertisement

ছোট থেকে এভারেস্টের স্বপ্ন বুকে নিয়ে বড় হওয়া দেবরাজ দত্তের স্বপ্নপূরণে বার তিনেক সময় লেগেছিল। দেবরাজ বলেন, ‘‘২০১৪ সালে প্রথম এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে তুষারধসে শেরপাকে তলিয়ে যেতে দেখেছিলাম। ২০১৫ সালে ভূমিকম্প। ২০১৬-তেশেষমেশ সফল হই। তাই শুধু এভারেস্টই নয়, যার যেটুকু স্বপ্ন থাকুক, সেই পথে যেন সে হাঁটতে পারে।’’ নিজের নিজের এভারেস্ট অভিযানের ছোট ছোট গল্প শোনান দেবদাস নন্দী, শ্যামল সরকার, রাজশেখর ঘোষ প্রমুখ।

এভারেস্ট দিবসে বসন্ত-দেবাশিস-মলয় মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণায় এ দিন ফিরে এসেছেন পেম্বা শেরপা। ২০১৯ সালে সাসের কাংরি ফোর অভিযানে গিয়ে বরফের ফাটলে তলিয়ে যাওয়া পেম্বা ছিলেন বহু বাঙালি পর্বতারোহীর বিশ্বস্ত বন্ধু ও পাহাড়-সঙ্গী। দেবাশিস বলেন, ‘‘পেম্বা থাকত বলেই কোনও দিন অভিযানের আগে ভাল করে পড়াশোনা করতাম না। জানতাম, ও সব সামলে নেবে।’’ ২০১৬ সালে ১৫-১৬টি ছোট-বড় অভিযান সেরে ফেলা মলয়কে এভারেস্টের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন দেবাশিসই। প্রত্যেক বার সামিটে পৌঁছে সেখানেই পেম্বার পা ছুঁয়ে প্রণাম করতেন মলয়। মজা করে তিনি বললেন, ‘‘কামেট অভিযানে গিয়ে পেম্বাজিকে জ্বালিয়ে খেতাম। খালি জানতে চাইতাম, বসন্তদা কি আমাদের থেকেও পাহাড়ে ভাল হাঁটেন?’’ অভিযানের টাকা জোগাড়ে আজও কতটা কালঘাম ছুটে যায় অভিযাত্রীদের, সেই গল্পও করেন অনেকে।

এভারেস্ট দিবস উপলক্ষে রবিবার শ্যামবাজারে আরও একটি মনোজ্ঞ আসরের আয়োজন করেছিলেন নন্দাঘুন্টি অভিযানখ্যাত পর্বতারোহী দীপালি সিংহ। পুলিশের চাকরি সামলে কী করে এভারেস্ট যাওয়া সম্ভব হয়েছিল— সেই গল্প শোনান ২০১৩ সালের এভারেস্টজয়ী উজ্জ্বল রায়। ঘোমটা দেওয়া গৃহবধূ থেকে স্বামী-সন্তানকে রেখে এভারেস্টের পথে পা বাড়ানোর লড়াইয়ের কথা বলেন চেতনা সাহু। আর দীপালি বলেন, ‘‘এভারেস্ট না যেতে পারি, কিন্তু ওই দু’জন মানুষকে কাছ থেকে দেখেছি। তেনজিং ছিলেন আমার শিক্ষক, প্রতিবেশীও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন