নয়া গাড়িতে বাজিমাত থানার

মামুলি মাল্টি ইউটিলিটি ভেহিকেল। তবে ঝকঝকে, সর্বাধুনিক মডেলের। আর সেই গাড়িই শহর থেকে দূরে কিংবা ভিন্ রাজ্যে থাকা সন্দেহভাজনকে তাড়া করে তাকে সময় মতো ধরতে সাহায্য করছে। এত দিন প্রতিটি থানায় গাড়ি থাকত তিনটি। এখন একটি বেড়েছে। আর কামাল দেখাচ্ছে ওই ৪ নম্বর গাড়িই।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০৪
Share:

আধুনিক মডেলের সেই গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

শহর কিংবা রাজ্যের বাইরে গিয়ে অভিযুক্তকে ধরে আনতে কলকাতা পুলিশের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এ বার গাড়ি।

Advertisement

তা বলে ইয়ান ফ্লেমিংয়ের কাহিনিতে জিরো জিরো সেভেন বা জেমস বন্ড যেমন একাধিক গুপ্ত হাতিয়ার সমৃদ্ধ ও জেট গতির গাড়ি ব্যবহার করেন, তেমন বিশেষ গাড়ি নয়। মামুলি মাল্টি ইউটিলিটি ভেহিকেল। তবে ঝকঝকে, সর্বাধুনিক মডেলের। আর সেই গাড়িই শহর থেকে দূরে কিংবা ভিন্ রাজ্যে থাকা সন্দেহভাজনকে তাড়া করে তাকে সময় মতো ধরতে সাহায্য করছে। এত দিন প্রতিটি থানায় গাড়ি থাকত তিনটি। এখন একটি বেড়েছে। আর কামাল দেখাচ্ছে ওই ৪ নম্বর গাড়িই।

পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার একটি থানার পুলিশ খুনের মামলার এক সন্দেহভাজনকে ধরতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপিতে যায়। ওই ব্যক্তি যে কুলপিতে এসেছে, সেই খবর পুলিশ পায় রাত পৌনে ১২টা নাগাদ। কিন্তু ভোর সাড়ে তিনটের মধ্যে না গেলে সে ফস্কে যাবে, তেমনই খবর ছিল পুলিশের কাছে। ঘটনাচক্রে ৪ নম্বর গাড়ি ওই থানা পেয়েছিল ঠিক তার আগের দিন। রাত ১২টায় রওনা হয়ে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে কুলপি পৌঁছে পুলিশ গ্রেফতার করে অভিযুক্তকে। পুলিশ স্বীকার করে নিয়েছে, হাতে অতিরিক্ত ওই গাড়িটি না থাকলে সময় মতো পৌঁছনোই যেত না।

Advertisement

আবার বড়বাজারের এক দোকান থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার পোশাক ভুয়ো কোম্পানির নামে চেক কেটে হাতিয়ে হায়দরাবাদে নিয়ে গিয়েছিল এক যুবক। মধ্য কলকাতার একটি থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে উলুবেড়িয়ার প্রত্যন্ত তল্লাট থেকে। তাকে ধরতেও সহায়ক হয় ওই ৪ নম্বর গাড়ি। হায়দরাবাদ থেকে সে বাড়িতে ফিরেছে, সেটা জানার সঙ্গে সঙ্গে ওই গাড়ি নিয়ে মধ্য কলকাতা থেকে উলুবেড়িয়ার উদ্দেশে পুলিশ রওনা হয়েছিল।

একই ভাবে হুগলির আরামবাগ থেকে প্রতারণায় অভিযুক্তকে থানার পুলিশ দ্রুত তুলে আনতে পেরেছে ৪ নম্বর গাড়ির সৌজন্যে।

পুলিশ সূত্রের খবর, এই অতিরিক্ত গাড়ি আসলে থানাগুলির দীর্ঘ কালের একটি রীতি বা অনিয়মের অবসান ঘটাতে চলেছে।

সন্দেহভাজনকে ধরার জন্য শহর বা রাজ্যের বাইরে হানা দিতে থানার পুলিশরা পড়তেন সমস্যায়। তাঁদের হাতে সাকুল্যে তিনটি গাড়ি। শহরের বাইরে নেওয়া দূর, সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় টহলদারি, আইনশৃঙ্খলা সামলানো এবং কিছু ঘটলে ছুটে যাওয়ার কাজের চাপও ওই তিনটি গাড়ি দিয়ে সামাল দেওয়া যায় না। থানার পুলিশের তাই বহু ক্ষেত্রেই রেওয়াজ ছিল, দূরবর্তী জায়গায় সন্দেহভাজনের খোঁজে হানা দিতে যিনি অভিযোগ করছেন, তাঁর কাছ থেকে গাড়ি ভাড়ার খরচ আদায় করে নেওয়া। অথবা তাঁকে গাড়ির বন্দোবস্ত করে দিতে বলা।

এক অফিসার বলেন, ‘‘এক বার পণ্যবোঝাই ট্রাক নির্দিষ্ট জায়গায় না পৌঁছে চালক ও পরিবহণ সংস্থার দু’-এক জন সেটা লোপাট করে দেওয়ার তালে ছিল। বিহার থেকে তাদের বমাল ধরার জন্য যাওয়া আসায় চার-পাঁচ দিনের গাড়ি ভাড়া পড়ে ৬০ হাজার টাকা। মিটিয়েছিল অভিযোগকারী সংস্থাটি।’’ কোনও সংস্থা হয়তো নিজেদের স্বার্থে সেই খরচ বহন করতে পারে, সব গৃহস্থের পক্ষে সম্ভব হয় না। তা ছাড়া, গোটা ব্যাপারটাই অনিয়ম। অনেক অভিযোগকারী পাল্টা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেন স্বাভাবিক কারণে। বলতেন, তিনি কেন খরচ দেবেন?

অথচ বেশির ভাগ সময় নিয়ম মেনে আবেদন করে প্রয়োজনীয় আর্থিক অনুমোদন নিয়ে গাড়ি ভাড়া করতে বা লালবাজার থেকে গাড়ি পেতে যা সময় লাগত, অভিযুক্ত ততক্ষণ পগার পার। সব জেনেশুনেও ওই অনিয়মে তাই চোখ বুজে থাকতেন লালবাজারের কর্তারা।

থানার ৪ নম্বর গাড়ি সেই বিড়ম্বনা কাটাবে বলে পুলিশের আশা।

তবে লালবাজারের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, অতিরিক্ত গাড়ি যেন সত্যিকার উপযোগিতা পেতে কাজে লাগানো হয়, অফিসারদের কারও কারও ব্যক্তিগত কাজে না লাগে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন