নাম বলবে পুরসভা, শাস্তি দেবে সরকার!

পুরসভার খাদ্য অভিযানে নামী রেস্তরাঁ, ফুড চেন থেকে সংগৃহীত খাবারের নমুনায় ক্ষতিকারক ব্যাক্টিরিয়া যে মিলেছে, তা সোমবারই জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যের মেয়র পারিষদ প্রণয় রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮ ০২:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

নাম প্রকাশ করেও ব্যবস্থা গ্রহণে নেই বিধাননগর পুরসভা!

Advertisement

পুরসভার খাদ্য অভিযানে নামী রেস্তরাঁ, ফুড চেন থেকে সংগৃহীত খাবারের নমুনায় ক্ষতিকারক ব্যাক্টিরিয়া যে মিলেছে, তা সোমবারই জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যের মেয়র পারিষদ প্রণয় রায়। বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে মেয়র সব্যসাচী দত্ত জানান, সরকারি পরীক্ষাগারের রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনার পার্কের আমিনিয়া এবং সিএফ ব্লকের ডমিনোজ পিৎজ়া থেকে সংগৃহীত খাবারের নমুনা ‘অস্বাস্থ্যকর’। আমিনিয়া থেকে রান্না করা মুরগির মাংসের পাঁচ রকম নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। মেয়র জানান, রাজ্য সরকারের ল্যাবরেটরির রিপোর্ট অনুযায়ী, মুরগির সব ক’টি রান্নাই স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। খাসির মাংসের একটি নমুনায় ক্ষতিকারক জীবাণু মিলেছে। আমিনিয়া থেকে সংগৃহীত কাঁচা মাংসে কোনও সমস্যা নেই।

এ দিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া রিপোর্টের প্রতিলিপি অনুযায়ী, দু’নম্বর পাত্রে যে নমুনা ছিল তাতে অতিরিক্ত মাত্রায় ছত্রাক এবং ব্যাক্টিরিয়া ই-কোলাই ও স্ট্যাফাইলোকক্কাস মিলেছে। ডমিনোজ পিৎজ়ার পেপার চিকেনে অতিরিক্ত ই-কোলাই এবং ছত্রাক মিলেছে।

Advertisement

মেয়রের কথায়, ‘‘ঘটনাচক্রে, আমিই আবার ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর! পিৎজ়া খেতে ভালবাসি। এখন থেকে ভেজ খেলেও চিকেন পিৎজ়া অন্তত খাব না।’’

কিন্তু মুখে যা-ই বলুন, ব্যবস্থা নেওয়ার ভার সরকারের কোর্টেই রেখেছেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘এই রিপোর্টের প্রতিলিপি আমরা স্বাস্থ্য ভবনে পাঠাব। তাঁরা ঠিক করবেন, ওই রেস্তরাঁগুলির ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সরকারি পরীক্ষাগারের রিপোর্ট বলছে, সংগৃহীত খাবারের নমুনা অস্বাস্থ্যকর। এর পরেও ব্যবস্থাগ্রহণ নয় কেন? মেয়রের বক্তব্য, ‘‘পুর আইনে এই সব রেস্তরাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণে পুরসভার কোনও ক্ষমতা নেই। এমনকি, ট্রেড লাইসেন্সও বাতিল করা যায় না! তবে অভিযান চলবে।’’

অথচ এ দিন দমদমের পুরপ্রধান হরীন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের পুরসভায় ইটালগাছার একটি রেস্তরাঁর খাবার রিপোর্টে অস্বাস্থ্যকর বলা হয়েছে। রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হবে। তাতে কাজ না হলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করব।’’ এর প্রেক্ষিতে সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘রিপোর্টে কী মিলেছে, তা জানানো হবে সংশ্লিষ্ট রেস্তরাঁগুলিকে। সংশোধনের কথাও বলা হবে। আইনত ব্যবস্থা কী নেওয়া উচিত, তা রাজ্য সরকার দেখবে।’’ আর প্রণয়বাবু বলেন, ‘‘মানুষই বিচার করবেন, তাঁরা এই সব রেস্তরাঁয় খাবেন কি না!’’

এরই মধ্যে সরকারি পরীক্ষাগারের রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করেছেন আমিনিয়ার মুখপাত্র রুচিরা কাজারিয়া। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অভিযানের ৪০ দিন পরে রিপোর্ট প্রকাশিত হল। এই দেরি ইচ্ছাকৃত নাকি গাফিলতি আছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত। ৯০ বছর আমরা সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছি। আমাদের খাবার অস্বাস্থ্যকর নয়, সে ব্যাপারে নিশ্চিত। সরকারি পরীক্ষাগারের রিপোর্টে আমরা সন্তুষ্ট নই। কোনও নিরপেক্ষ সংস্থায় ফের নমুনা পরীক্ষা হোক।’’

ডমিনোজ পিৎজ়ার দিল্লির অফিসের বক্তব্য, তাদের খাবার নিরাপদ। সংস্থার সিনিয়র ইমেজ ম্যানেজার পূজা চহ্বাণ লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘যাদের থেকে মাংস কিনি, তারা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়ার স্বীকৃত ভেন্ডার। গরমকালে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠাতে হয়। না হলে ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কি তা করা হয়েছিল, তা দেখতে হবে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন