বিক্ষোভ: ডেঙ্গি নিয়ে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলে মেয়রের ঘরের সামনে প্রতিবাদ বাম কাউন্সিলরদের। মঙ্গলবার পুরসভায়। —নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার পুর অধিবেশনের শুরুটা ভালই হয়েছিল। রসভঙ্গ হল শেষবেলায়। কারণ, সেই ডেঙ্গি!
‘শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা চেপে দেওয়া হচ্ছে’— বামেদের তোলা এই প্রস্তাব ঘিরে চলে তুমুল বাগযুদ্ধ। এক সময়ে শাসক দলের সমবেত চিৎকারে বাম কাউন্সিলরেরা অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। বাইরে বেরিয়ে পুর ভবনের করিডরে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঘুরতে থাকেন তাঁরা। তাতে লেখা ‘কলকাতায় ডেঙ্গির হামলা, শাসক দলের প্রকৃত তথ্য গোপন’। তবে অধিবেশন কক্ষে, বাইরে অলিন্দে ডেঙ্গি নিয়ে শাসক এবং বিরোধী দলের তর্কবিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন প্রায় ‘নির্লিপ্ত’ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। পরে শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর ছোট্ট জবাব, ‘‘পুরসভায় যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা যোগ্য। ঠিক কাজই করছেন।’’
এ দিন দুপুর একটায় পুর অধিবেশন শুরু হয়। প্রথম দিকে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। সেটা শেষ হতেই বিরোধী এবং শাসক দলের কাউন্সিলরদের তোলা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তালিকায় প্রথমেই বাম কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তীর প্রস্তাব ছিল শহরে ডেঙ্গি বাড়ছে। মৃত্যুও হচ্ছে। সেই প্রস্তাব ঘিরে বিতর্ক বাড়তে পারে ভেবেই হয়তো পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায় সেই প্রস্তাব শেষে রাখেন। তা নিয়ে বিরোধীরা কিছুটা হইচই করলেও চেয়ারপার্সনের নির্দেশে মুখ বন্ধ রাখেন।
শেষ বেলায় প্রস্তাবটি উঠতেই মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলতে থাকেন, ‘‘পুরসভা বলছে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫০। তাঁরা অসত্য বলছে। এ ভাবে তথ্য চাপা দিয়ে ডেঙ্গি রোখা যাবে না।’’ তাঁরা এর দায় পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের উপর চাপাতেই রে রে করে ওঠেন শাসক দলের একাধিক কাউন্সিলর। তৃণমূলের তারকেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরসভা সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে বলেই ২০১৩ সালের পর থেকে শহরে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। এই কাজে সহায়তা না করে বিরোধীরা রাজনীতি করছেন।’’
বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রত্না রায়মজুমদার অবশ্য সরাসরি স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ তোলেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘পুরসভার মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ‘সব ঠিক হ্যায়’ বলা যায় না।’’ প্রস্তাবের শেষে মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ (স্বাস্থ্য) জানিয়ে দেন, কোনও তথ্য গোপন করা হচ্ছে না। অধিবেশনে তিনি বলেন, ‘‘কোনও কাউন্সিলর নিজের এলাকার ডেঙ্গি আক্রান্তের তথ্যপ্রমাণ নিয়ে তা পরখ করে দেখতে পারেন। পুরসভার তালিকায় সেই তথ্য না থাকলে তখন অভিযোগ করুন। আমরা মেনে নেব।’’