দুরবস্থা: এই ভ্যাটই বাসিন্দাদের মাথাব্যথার কারণ।ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
সকাল সকাল এলাকায় জারি হয়ে যায় ‘জরুরি অবস্থা’। বাড়িতে শান্তিতে থাকতে ধুপধাপ জানলা-দরজা বন্ধ করে দেন বাসিন্দারা। বেলা গড়ালে জানলা খোলা হলেও মাস্ক ব্যবহার করা ছাড়া উপায় থাকে না।
কারণ এলাকার একটি খোলা ভ্যাটের কারণে এখানে মুক্ত বাতাস প্রবেশে মানা। এমনই অবস্থা বালিগঞ্জ ডোভার প্লেসের মতো এলাকার। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কলকাতা পুরসভার ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাসকে বারবার বলেও কোনও লাভ হয়নি। তিনি ভ্যাট সরানো তো দূর, কম্প্যাক্টর বসানোর ব্যবস্থাও করতে পারেননি। কাউন্সিলরের দাবি, ‘‘আমি বিজেপি-র। তাই ভ্যাট নিয়ে পুরসভায় গলা ফাটিয়েও কিছু করতে পারিনি। ‘নির্মল বাংলা’র কথা বলছেন যাঁরা, তাঁরাই ভ্যাট সরাতে দিচ্ছেন না।’’ তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের দাবি, ওই কাউন্সিলরেরই ভ্যাট সরানোয় সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।
ময়লা তুলছেন পুরকর্মীরা।ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
স্থানীয় ও পুরসভা সূত্রের খবর, বছর সাতেক আগে ডোভার প্লেসে একটি পুরনো সরকারি আবাসন সংলগ্ন জমিতে ময়লা ফেলা শুরু হয়। ধীরে ধীরে সেখানে খোলা ভ্যাট তৈরি হয়। বর্তমানে সেখানে পুরকর্মীরাই বিভিন্ন এলাকার ময়লা ফেলে যান। অভিযোগ, এর জেরে এলাকায় থাকাই অসুবিধে হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, একটি চোখের হাসপাতালের পাশেই রয়েছে সিপিডব্লিউডি-র (সেন্ট্রাল পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট) আবাসন। বর্তমানে ওই আবাসনে কেউ থাকেন না। পরিত্যক্ত আবাসনের সামনেই ওই ভ্যাট। অবস্থা এমনই যে জঞ্জালে রাস্তা আটকে গিয়েছে।
আতঙ্কিত বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘দুর্গন্ধের কারণে সকালে দরজা-জানলা খোলা যায় না। বৃষ্টি পড়লে আবর্জনার সঙ্গে জল জমে থইথই করে এলাকা। জমা জলে জন্মানো মশার থেকে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় বাড়ছে।’’ এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমার স্বামী মারা গিয়েছেন ম্যালেরিয়ায়। তখন ভ্যাটটি ছিল না, কিন্তু খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা হত। আমি, ভাই এবং আমার ভাইয়ের স্ত্রী এখন প্রাণ হাতে নিয়ে বসবাস করছি।’’ তাঁদের দাবি, ভ্যাট সরানোর আবেদন জানিয়ে পুরসভাকেও চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। তা-ও কিছু না হওয়ায় দিশেহারা অবস্থা এলাকাবাসীর।
এ নিয়ে অদ্ভুত সমাধান সূত্রের সন্ধান দিলেন পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবব্রত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও ওই খোলা ভ্যাট সরাতে চাই। তবে ওই জমি কেন্দ্রীয় সংস্থা সিপিডব্লিউডি-র। কাউন্সিলর তো বিজেপি-র। ওঁকে বলেছি, জমির এক কাঠা পুরসভার নামে লিখে দিতে বলুন সংস্থাকে। আমরা কম্প্যাক্টর বসিয়ে দেব।’’ জমি যখন অন্য সংস্থার, তখন সেখানে কী ভাবে ময়লা ফেলছে পুরসভা? এর উত্তর অবশ্য দিতে পারেননি দেবব্রতবাবু। তিনি বলেছেন, ‘‘হয়ে যাবে, সব হয়ে যাবে।’’ কী করে? জানা নেই কারও।