মহিলার মৃত্যু কী ভাবে, ধরাল ক্যামেরা

সি সি ক্যামেরায় ধরা পড়া এমনই একটি ফুটেজ দেখে এক রেলকর্মীর মৃত্যুর রহস্য কাটল। তবে ট্র্যাফিক বুথের অদূরেই ঘটনাটি ঘটলেও, কেন কেউ টের পেলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েই গেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৯
Share:

মিতালি মণ্ডল

ট্র্যাফিক বুথ থেকে কিছুটা দূরে বাসস্ট্যান্ডে একটির পিছনে দাঁড়িয়ে আর একটি বাস। মাঝে সামান্য ফাঁক। পিছনের বাসটি আচমকাই সামনের বাসটিকে কাটিয়ে চলে যাওয়ার পরে দেখা গেল, এক মহিলা মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে থাকতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন।

Advertisement

সি সি ক্যামেরায় ধরা পড়া এমনই একটি ফুটেজ দেখে এক রেলকর্মীর মৃত্যুর রহস্য কাটল। তবে ট্র্যাফিক বুথের অদূরেই ঘটনাটি ঘটলেও, কেন কেউ টের পেলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েই গেল।

বৃহস্পতিবার রাত দশটা নাগাদ হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন জি আর রোডের গোলাবাড়ি ট্র্যাফিক বুথের সামনের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় এক মহিলাকে। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান তিনি মৃত। কিন্তু শরীরে তেমন কোনও গুরুতর আঘাতের চিহ্ন নেই। ফলে ওই মহিলার মৃত্যুর কারণ নিয়ে চরম ধন্দে পড়েন তদন্তকারীরা। শেষরক্ষা করে সিসি ক্যামেরার ওই ফুটেজ। তা দেখেই জানা যায়, দাঁড়িয়ে থাকা দু’টি বাসের মাঝখান দিয়ে বেরোতে গিয়ে পিছনের বাসের ধাক্কাতেই মৃত্যু হয় ওই মহিলার।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম মিতালি মণ্ডল (৪২)। বাড়ি ব্যারাকপুরের পূর্ব মঠপাড়ায়। তিনি পূর্ব রেলের চিফ কমার্শিয়াল ক্লার্ক পদে কর্মরত ছিলেন। পুলিশ জানায়, ওই রাতে বাড়ি থেকে হাওড়া স্টেশনে নাইট ডিউটিতে আসছিলেন তিনি। বাস থেকে নামার পরে স্টেশনের দিকে যাওয়ার সময়ে ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।

ওই মহিলাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা পাশের ট্র্যাফিক পুলিশ বুথে খবর দেন। এর পরেই পুলিশ ওই মহিলাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মহিলার ব্যাগে পাওয়া রেলের পরিচয়পত্র থেকে জানা যায় তিনি পূর্ব রেলের কর্মী। ওই পরিচয়পত্র থেকে তাঁর বাড়ির ঠিকানাও মেলে। তাই রাতেই বাড়িতে খবর দেয় পুলিশ। এর পরে ওই মহিলার বাড়ির লোকজন হাসপাতালে গিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে মিতালিদেবীর সহকর্মীরাও হাসপাতালে পৌঁছন। কিন্তু ওই মহিলার মৃত্যু ঠিক কী ভাবে হয়েছে, তা তদন্তকারীরা বুঝতে না পারায় পরিজনেরাও সন্দিহান হয়ে ওঠেন। মিতালিদেবীর মৃত্যুর তদন্তের জন্য পুলিশের কাছে আর্জি জানান তাঁরা। রাতে সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকে হাওড়া স্টেশন ও সংলগ্ন রাস্তায় লাগানো প্রত্যেকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা শুরু হয়।

পুলিশের দাবি, ওই ফুটেজ দেখেই মহিলার মৃত্যুর কারণ জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, দু’টি বাসের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার সময়ে পিছনের বাসের চালকের অসাবধানতাতেই ওই মহিলা গুরুতর আহত হন। যার জেরেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পুলিশ জানায়, এ দিন সিসি টিভি-র ফুটেজ থেকেই বাসটি শনাক্ত করা হয়েছে। সেটির নম্বর দেখে ওই বাসের চালককে গ্রেফতার করা হয়।

মৃতার পরিবার জানিয়েছে, মিতালিদেবী বিবাহবিচ্ছিন্না। একমাত্র ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র অনুরাগ মণ্ডল এ দিন হাওড়ার গোলাবাড়ি থানায় গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন