Brigade

Narendra Modi’s Brigade Rally: ব্রিগেডের মেলায় বিকোলো কপ্টার, নমো টি-শার্টও

বারাণসীর বাসিন্দা দেবীপ্রসাদ বর্মা, চার বছর ধরে কলকাতার রাস্তাতেই খেলনা বিক্রি করেন।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ ০৭:২১
Share:

(বাঁ দিকে) ব্রিগেডে বিক্রি হচ্ছে ‘মোদী দাদা হেলিকপ্টার’। (ডান দিকে) গাছের ডালে ঝুলছে ‘নমো টি-শার্ট’। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

আকাশে চক্কর কাটছে হেলিকপ্টার। নীচে ব্রিগেডমুখী হসপিটাল রোডে তখন বিজেপির কর্মীদের ভিড়। সেখান থেকেই হাত তুলে তাঁরা স্বাগত জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীকে। সেই ভিড় থেকেই শোনা গেল, ‘মোদী দাদা হেলিকপ্টার। মাত্র তিরিশ টাকা!’

Advertisement

‘ব্যাপারটা কী?’— অবাক হয়ে অনেকেই ভিড়-ছুট হয়ে সরে গেলেন রাস্তার ধারের ফুটপাতের দিকে। দেখলেন, ব্যাগ ভর্তি হেলিকপ্টার নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি। যিনি মাঝেমধ্যেই হাত ঘুরিয়ে উপরে ছুড়ে দিচ্ছেন, প্লাস্টিকের হেলিকপ্টার। সোঁ করে আওয়াজ তুলে কিছুটা উপরে উঠেই নীচে নেমে আসছে সেই কপ্টার।

বারাণসীর বাসিন্দা দেবীপ্রসাদ বর্মা, চার বছর ধরে কলকাতার রাস্তাতেই খেলনা বিক্রি করেন। বললেন, ‘‘হেলিকপ্টারে আসছেন মোদী। ভাল বিক্রি হবে বলে ওই খেলনাই নিয়ে এসেছি। আধ ঘণ্টায় একশোটার মতো বিক্রি হয়েছে।’’ তবে গাঢ় সবুজ, খয়েরি, নীল ও বেগুনি রঙের ‘মোদী দাদা হেলিকপ্টার’-এর দাম বদলে গিয়েছে ব্রিগেডের মাঠের কাছাকাছি গিয়ে। সেখানে বারাণসীর অন্য এক বাসিন্দা রামকমল দাম হাঁকছেন, ৫০ টাকা! দাম যাই হোক না কেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী যখন হেলিকপ্টারে শহরে আসছেন, তখন প্রতীকী হিসেবে খেলনা কপ্টার তো বাড়ির খুদের জন্য কিনে নিয়ে যেতেই হবে’’—বললেন ঝড়খালির গোপাল মণ্ডল। তাঁর মতোই বাঁকুড়ার প্রমিলা টুডুও গাঢ় সবুজ রঙের হেলিকপ্টারই পছন্দ করলেন।

Advertisement

কপ্টার থেকে নেমে প্রধানমন্ত্রী তখন মঞ্চে। কর্মীদের একটি দল তখনও ব্রিগেডমুখী। অন্য দল অবশ্য বেরিয়ে আসছে। দুইয়ের যাতায়াতের ধাক্কায় ব্রিগেডের মাঠে তখন ধুলোর ঝড়। তাতে চোখমুখ জ্বালা করলেও, হকারদের হাঁকডাকে তেমন ভাটা পড়েনি। চুলের বাঁধন থেকে জুতো, নকল গয়না, ডিম সেদ্ধ থেকে চপ মুড়ি-ঘুগনি, ব্যাগ থেকে ব্লেজার— সবই এ দিন বিকিয়েছে ব্রিগেডের ময়দানে। যা দেখে পুরুলিয়া থেকে আসা হরিলাল বাউড়ি তাঁর দলের সদস্যদের বললেন, ‘‘এ তো দেখছি মেলা বসেছে গো! কে কী নেবে
নিয়ে নাও।’’

কর্মী-সমর্থকেরা যাতে ফেরার পথে কিছু কিনে নিয়ে যান, সেটাই তো চাইছিলেন সোদপুর ঘোলার বাসিন্দা সুরজ জয়সওয়াল। হাঁকছিলেন, ‘ফেরার পথে পরে যান, নিয়ে যান।’ ব্রিগেডের মাঠে ঢোকার মুখেই গাছের ডালে তিনি ঝুলিয়েছেন ‘নমো 'টি-শার্ট’। দাম ৭৫ টাকা। সাদা গেঞ্জির উপরে কালো রঙে ছাপা প্রধানমন্ত্রী। মোদী থেকে দিদি—প্রতি ভোটের আগে অর্ডার মতো সব দলেরই টি-শার্ট ছাপান সুরজ। হেসে বললেন, ‘‘এটাই আমার রুজিরুটি। ভাটপাড়া উপনির্বাচনে মদন মিত্রকে টি-শার্টের নমুনা দেখাতে গিয়ে অর্জুন সিংহের ছবি ছাপা টি-শার্টই দেখিয়েছিলাম। এখনও পর্যন্ত বিজেপি দু’টি অর্ডার দিয়েছে। তৃণমূলও দেবে।’’

তবে এ দিন ব্রিগেডের মাঠে তেমন বিক্রিবাট্টা নেই বলেও আক্ষেপ করলেন কয়েক জন বিক্রেতা। যেমন, মহম্মদ মোক্তারের কথায়, ‘‘১০০ টাকায় ব্লেজার বিক্রি করছি, কিন্তু তেমন কেনাবেচা নেই।’’ ট্র্যাভেল থেকে স্কুল ব্যাগ হাতে নেড়েচেড়ে দেখে চলে যাচ্ছেন ব্রিগেড ফেরত জনতা, কিনছেন না বেশির ভাগই। তাতেই বেশ রেগেছিলেন ব্যাগ বিক্রেতা মহম্মদ সেলিম। বললেন, ‘‘ভিড় হচ্ছে খাবারের দোকানে। ঘুরছে ফিরছে আর সব আইসক্রিম, ঘুগনি, ফুচকা খাচ্ছে।’’

যদিও ৬০ কেজি চালের ভাত, ৮৪০ পিস ডিমের ঝোল বানিয়ে হোটেল খুললেও, একেবারে বিক্রি হয়নি বলেই জানালেন গুমার বাসিন্দা গোপাল রায়। বাম আমল থেকে ব্রিগেডের ময়দানে অশ্বত্থ গাছের নীচে ত্রিপল টাঙিয়ে হোটেল চালান গোপাল। ভাত, ডাল, তরকারি আর ডিমের ঝোল মিলিয়ে দাম ৪০ টাকা। ভাত ভর্তি গামলা দেখিয়ে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘নিজেরাই রাঁধছেন, আর খাচ্ছেন। আমার প্রায় সব নষ্ট হল।’’

তবে অন্য জিনিসের বিকিকিনি যে একেবারে হয়নি তেমন মোটেও না। যেমন বীরভূমের অশোক হেলা ফেরার পথে মেয়ের জন্য কিনেছেন লাল রঙের জরির কারুকাজ করা সালোয়ার। ‘প্রধানমন্ত্রী তো ভাষণ রাখছেন, আপনারা এ-দিক, ও-দিক ঘুরে জিনিস কিনছেন?’ এক বিজেপি কর্মীর জবাব, ‘‘কান দিয়ে শুনছি। ব্রিগেড ভাঙলে সকলের ফেরার তাড়া থাকবে। তাই আগেই কিছু কেনাকাটা করছি।’’

ব্রিগেড মাঠ জুড়ে হরেক পসরা দেখে এ দিন অনেকেই বললেন, ‘‘এ তো বসন্তের মেলা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন