সচেতনতাই ক্যানসার রোধের মূল অস্ত্র, মত ডাক্তারদের

দু’সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলেও মুখের ঘা সারছিল না বালিগঞ্জের সুমন বিশ্বাসের। স্থানীয় চিকিৎসক ওষুধ পাল্টে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। ঝুঁকি না নিয়ে সুমনবাবু সোজা চলে গিয়েছিলেন এক পরিচিত ক্যানসার চিকিৎসকের কাছে। কয়েকটি পরীক্ষা করার পর ওই চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, মুখের ক্যানসার হয়েছে সুমনবাবুর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২১:৪১
Share:

দু’সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলেও মুখের ঘা সারছিল না বালিগঞ্জের সুমন বিশ্বাসের। স্থানীয় চিকিৎসক ওষুধ পাল্টে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। ঝুঁকি না নিয়ে সুমনবাবু সোজা চলে গিয়েছিলেন এক পরিচিত ক্যানসার চিকিৎসকের কাছে। কয়েকটি পরীক্ষা করার পর ওই চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, মুখের ক্যানসার হয়েছে সুমনবাবুর। তবে প্রথম ধাপ। চিকিৎসার পর এখন দিব্যি সুস্থ তিনি।

Advertisement

স্নান করতে গিয়ে বাম স্তনে একটি যন্ত্রণাহীন মাংসপিণ্ডের উপস্থিতি টের পেয়েছিলেন কসবার বাসিন্দা চন্দ্রাণী দে। বাড়িতে জানানোয় স্বামী রীতিমতো জোর করে নিয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক বলেছিলেন, ‘‘সময়মতো এসেছেন তাই জোর বেঁচে গেলেন। ফার্স্ট স্টেজ ক্যানসার, তবে সেরে যাবে।’’ ক্যানসারকে হারিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছেন তিনি।

শুধু সুমনবাবু বা চন্দ্রাণীদেবীই নন, একটু সচেতন হওয়ায় ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইটায় জিতে গিয়েছেন অনেকেই। চিকিৎসকেরাও বলছেন, ক্যানসারের সঙ্গে জীবনের লড়াই মোটেই অসম নয়। শুধু একটু আগে আগে চিহ্ণিত করতে হবে রোগটাকে।

Advertisement

বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার অ্যাপোলো গ্লেনেগেলস এবং হাওড়া নারায়ণা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আয়োজিত বিশেষ আলোচনাসভায় বারে বারে উঠে এল এই একই প্রসঙ্গ। এ দিন নারায়ণার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্যানসারকে হারিয়ে দিয়েছেন এমন অনেকেই। তাঁরা সকলের সঙ্গে তাঁদের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। তাঁদের মুখের রেখায় ফুটে উঠছিল আত্মবিশ্বাস।

এ দিন চিকিৎসকেরা জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের প্রত্যেকটি পরিবারে অন্তত এক জন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন। অত্যন্ত দ্রুত মহামারীর আকার নিতে চলেছে ক্যানসার। তাই এর বিরুদ্ধে লড়তে গেলে সাধারণ মানুষ থেকে সরকার, সবাইকেই একজোট হতে হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। আর তাঁদের মতে এর সব চেয়ে ভাল পদ্ধতি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় (স্ক্রিনিং)।

ক্যানসার চিকিৎসক জয় বসু জানান, বিদেশে স্ক্রিনিং করেই ক্যানসার কমানো গিয়েছে। কিন্তু ভারতে সরকারি তরফে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অ্যাপোলো নিজের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় স্ক্রিনিং করে প্রায় তেরোশো জনের প্রাথমিক ভাবে ক্যানসার নির্ণয় করেছে। তাঁদের কারও চিকিৎসা চলছে। কেউ বা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। জয়বাবু বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ খুবই সামান্য। তবে সরকার যদি এগিয়ে আসে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইটা সহজ হবে।’’

ক্যানসার চিকিৎসক সৈকত গুপ্ত জানান, স্ক্রিনিং ছাড়াও মানুষ যদি নিজেই ক্যানসারের কিছু সাধারণ উপসর্গ সম্বন্ধে সচেতন হয় তা হলে রোগ নির্ণয় আরও অনেক দ্রুত হবে এবং নিরাময়ও হবে সহজ। তিনি বলেন— শরীরে কোনও অস্বাভাবিক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ক্যানসারের প্রাথমিক কিছু উপসর্গ, যেমন- হঠাৎ গলা ভেঙে যাওয়া, যে কোনও রকমের আলসার, শরীরে যন্ত্রণাহীন কোনও মাংসপিণ্ডের উপস্থিতি, অবাঞ্ছিত রক্তপাত ইত্যাদি ঘটলেই সাবধান হতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও নতুন উপসর্গ, যদি দু’-তিন সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে তা হলে বুঝতে হবে কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে। সেটাকে ফেলে রাখা ঠিক নয়।’’

একই মত চিকিৎসক সৌরভ দত্তেরও। তিনি জানান, রোগী যদি নিজেই নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন হন তা হলে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইটা অনেক সহজ হয়ে যায়। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ক্যানসারকে দূরে রাখে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন