কলকাতার ফুটপাতে আঁস্তাকুড়ে জোড়া কামান!

কামান দু’টি সিরাজদ্দৌলার আমলের ‌বলে দাবি করছেন কলকাতার এক গবেষক চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মতে, কলকাতা আক্রমণের সময়ে সিরাজদ্দৌলা এই কামান ব্যবহার করেছিলেন। যুদ্ধ শেষে কামানগুলি কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২৮
Share:

অযত্নে: জোড়াবাগান এলাকায় পড়ে রয়েছে কামান দু’টি। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

গোলা ভরা কামান গর্জে উঠে কয়েক মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বিরোধী শিবির। সিনেমার এই দৃশ্যের বাস্তবায়ন বহু আগেই লুপ্ত হয়েছে। সযত্নে নয়, বরং এ শহরে তেমনই স্মৃতির ঠাঁই হয়ে রয়েছে আঁস্তাকুড়ে। জোড়াবাগান এলাকার মহর্ষি দেবেন্দ্র রোডের ফুটপাতের আবর্জনার মাঝে দীর্ঘ বছর ধরে পড়ে দু’টি কামান! তার গায়ে পড়েছে নোংরা ছোপ, পানের পিক।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ১৮৭ নম্বর, দেবেন্দ্র রোডের ফুটপাতে সেই ২০১০ সাল থেকে পড়ে রয়েছে জোড়া কামান। ফুটপাতে পড়ে থেকে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজছে কামান দু’টি। তাঁদের দাবি, সেগুলিকে স্থায়ী কোনও জায়গায় স্থানান্তরিত করতে তাঁরা কয়েক বার পুরসভার প্রতিনিধিদের অনুরোধ করেছিলেন। বাসিন্দা রবীন্দ্রকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে গিয়েছে ফুটপাতে কামান প়ড়ে থাকার কথা। অনেকে আসেন জোড়া কামানের কাহিনি শুনতে। ছবিও তোলেন তাঁরা। এমনকি পুরনো কলকাতা নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েক জন কামানের ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছেন। তা-ও অবস্থার পরিবর্তন নেই।’’

স্থানীয় কাউন্সিলর অজয় সাহা বলেন, ‘‘মেয়ো হাসপাতালের কাছে জলের লাইন খুঁড়তে গিয়ে মাটির নীচ থেকে উদ্ধার হয়েছিল কামান দু’টি। তখন স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে দেবেন্দ্র রোডে কামান দু’টি আনিয়ে রাখি। তার পর থেকে এখানেই পড়ে রয়েছে।’’

Advertisement

বিশ্ব জুড়ে চলতি সপ্তাহ ‘হেরিটেজ সপ্তাহ’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। কলকাতাও শামিল হয়েছে সেই উদ্যোগে। কিন্তু খাস কলকাতার বুকে আট বছর ধরে এই উদাসীনতা প্রশ্ন তুলছে, যেখানে পুরনো জিনিসের কোনও কদরই নেই, সেখানে হেরিটেজ সপ্তাহ পালনের অর্থ কী?

কামান দু’টি সিরাজদ্দৌলার আমলের ‌বলে দাবি করছেন কলকাতার এক গবেষক চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মতে, কলকাতা আক্রমণের সময়ে সিরাজদ্দৌলা এই কামান ব্যবহার করেছিলেন। যুদ্ধ শেষে কামানগুলি কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। চন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘সত্তরের দশকে টালিগঞ্জ-দমদম মেট্রো রেলের জন্য খনন কার্যের সময়েও মাটির নীচ থেকে এমন অনেকগুলি কামান মেলে। এক সময়ে কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির সামনে আমি একটা কামান পড়ে থাকতে দেখেছিলাম।’’ চন্দ্রনাথবাবুর পরামর্শ, ‘‘ঐতিহাসিক কামানগুলির অবশ্যই সংরক্ষণ দরকার।’’ কলকাতার উপরে গবেষণা করেন সৌভিক মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা হেরিটেজ সপ্তাহ পালন করছি, কিন্তু চোখের সামনে এমন ঐতিহাসিক নিদর্শন পড়ে থাকলেও তার মূল্য দিচ্ছি না। প্রশাসনের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।’’

পুরনো কলকাতার উপরে কাজ করা সোশ্যাল মিডিয়ার একটি গ্রুপের সদস্য রমাপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা মাঝেমধ্যেই ‘হেরিটেজ ওয়াক’ করি। সে রকমই এক দিন বেরিয়ে দু’টি কামান পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। কিন্তু ও ভাবে ফেলে না রেখে, রাস্তার মো়ড়ে সাজিয়েও রাখা যেত। এতে ইতিহাসকে সম্মান জানানো হত, মানুষও জানতে পারতেন কামান দু’টি সম্পর্কে।’’

অজয়বাবুকে প্রশ্ন করা হয়, এত বছরেও কামান দু’টি রাখার কেন স্থায়ী ব্যবস্থা করা গেল না? সেই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আর অবহেলায় পড়ে থাকবে না। সিমেন্টের বেদি করে কামান দু’টি সেখানে সাজিয়ে রাখা হবে। সংক্ষেপে লিখে রাখা হবে কামানের ইতিহাসও।’’ বাসিন্দারা অবশ্য তাতেও বিশেষ আশাবাদী নন। তাঁদের দাবি, ‘‘এর আগেও উনি এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন