কসরত: পাড়ার গলিতে জমিয়ে ফুটবল। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
এটা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পাড়া! এখানকার আনাচ-কানাচে মিশে আছে তাঁর ছোঁয়া। অধিকাংশ সেকেলে বাড়ির মাঝে, কিছু নতুন ধাঁচের বাড়ি আর বহুতল যেন সময়ের ভারসাম্য বজায় রেখেছে।
ছোট থেকেই বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে আচার চুরি করে খাওয়া, ক্রিকেট, পিট্টু, আইসপাইস কিংবা চোর পুলিশ খেলতে খেলতে পাশের বাড়ির কার্নিশ টপকে বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার স্মৃতি আজও টাটকা। সন্ধ্যায় শাঁখ বাজলেই বাড়িতে ঢুকে পড়া ছিল অলিখিত একটি নিয়ম।
গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় বেলফুলওয়ালা, কুলফিওয়ালা কিংবা সনাতনের ঘুগনি কোথায় হারিয়ে গেল? রবিবার দুপুরে আসতেন এক বাউল। একতারা হাতে আপন মনে গান গেয়ে বাড়ি বাড়ি থেকে মিলত সামান্য চাল আর পয়সা। সেই সুর মিশত পাড়ার গলিঘুঁজির আনাচ-কানাচে।
প্রতিবেশী এখনও আন্তরিক। আগে পাড়ার কেবিন আর চায়ের দোকানে জমজমাট আড্ডা বসত। এখন মাঝেমধ্যে পাড়ার মুখে দু’টি দোকান আর ক্লাবঘরে আড্ডা বসে।
পাড়ার দুর্গাপুজো-জগদ্ধাত্রী পুজোর টান আজও অমোঘ। দেখা হয় কত পুরনো মানুষের সঙ্গে। নিয়মিত ভলিবল খেলা হয় এখানে। ছুটির দিনে মাঝেমধ্যে ছোটদের খেলতে দেখা যায়।
আগের চেয়ে পাড়াটা পরিচ্ছন্ন থাকছে। প্রবল বর্ষায় জল জমলেও তা নেমে যায় দ্রুত। তবে ইঁদুরের উপদ্রবে এলাকার রাস্তা ও বাড়ির ভিত দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এক সময়ে পাড়াতেই ছিল বিপ্লবী পুলিন দাসের আখড়া। সেখানে বিপ্লবীদের অস্ত্রশিক্ষা দেওয়া হতো। আজ সেখানেই দাঁড়িয়ে একটি কমিউনিটি হল। আর আছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি। পাড়ার মানুষের আক্ষেপ আজও এখানে তৈরি হয়নি সংগ্রহালয়। মাঝেমধ্যেই সেই বাড়িটি দেখতে ভিড় করেন দেশ-বিদেশের মানুষ। অনেকে উৎসাহ নিয়ে ছবিও তোলেন। তবে ভিতরে ঢুকতে না পারায় আধিকাংশ সময়ে নিরাশ হয়ে ফিরে যান। এই পাড়াতেই থাকতেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপিকার অনাদিকুমার ঘোষদস্তিদার, অভিনেতা দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, তপতী ঘোষও।
লেখক শিক্ষক