Ultadanga

অর্চনা খুনে নয়া মোড়: উদ্ধার আরও ১ বস্তাবন্দি দেহ, তিনিই কি ঝাড়খণ্ডের প্রেমিক?

গত ১৭ সেপ্টেম্বর মোবাইল সারাতে বেরোচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অর্চনা। উল্টোডাঙা থানা এলাকার জওহরলাল দত্ত রোডে তাঁর বাড়ি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:২২
Share:

অর্চনা পালংদার এবং বলরাম কেশরী। —ফাইল চিত্র।

উল্টোডাঙার বধূ অর্চনা পালংদারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় নয়া মোড়। শনিবার ওই ঘটনায় ঝাড়খণ্ড থেকে আশিস যাদব নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। আর তাঁকে জেরা করেই উদ্ধার হল আরও এক বস্তাবন্দি দেহ।

Advertisement

আশিস কলকাতা পুরসভার কাছে এক হোটেলে কাজ করেন। তাঁর দাবি, উদ্ধার হওয়া ওই দেহ বলরাম কেশরী নামে এক যুবকের। যে হোটেলে আশিস কাজ করেন, অর্চনার সঙ্গে সেই হোটেলেই বলরাম উঠেছিলেন। সেখানেই অর্চনা-বলরামের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। আর আশিসই নাকি ওই দু’জনের দেহ লোপাট করে খালের জলে ফেলে দেন। যদিও ওই দেহ বলরামের কি না তা নিয়ে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর মোবাইল সারাতে বেরোচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অর্চনা। উল্টোডাঙা থানা এলাকার জওহরলাল দত্ত রোডে তাঁর বাড়ি। তার পর আর ফেরেননি। তিন দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর আনন্দপুর থানার চৌবাগার লকগেট থেকে উদ্ধার হয় ৩৫ বছরের অর্চনার দেহ। সংবাদপত্রে মহিলার ছবি প্রকাশিত হওয়ার পরে এনআরএস হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তাঁর স্বামী পিন্টু পালংদার স্ত্রীর দেহ শনাক্ত করেছিলেন। পিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তদন্তকারীদের ধারণা হয়, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই খুন হয়েছেন অর্চনা।

Advertisement

এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অর্চনার সঙ্গে পিন্টুর অশান্তি লেগেই থাকত। বছর কয়েক আগে অর্চনা স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশে নির্যাতনের অভিযোগও জানিয়েছিলেন। পিন্টু এবং অর্চনার পরিজনদের কাছ থেকে পুলিশ জানে, অর্চনা এর আগে দু’বার স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। বছর চারেক আগে উল্টোডাঙার এক বাসিন্দার সঙ্গে তিনি গিয়েছিলেন। পরে ফিরে আসেন। মাস কয়েক আগে ফেসবুকে পরিচয় হওয়া এক যুবকের সঙ্গেও চলে যান তিনি। ফের ফিরে আসেন। তার পরেও ওই দু’জনের সঙ্গে অর্চনার যোগাযোগ ছিল বলে জেনেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: ‘চেষ্টা করেও ছেলেটাকে বাঁচাতে পারলাম না’​

আরও পড়ুন: ‘ফোন গেলে যাবে, আগে বাইরে চলো’​

অর্চনার মোবাইলের কললিস্ট ঘেঁটে উঠে আসে ঝাড়খণ্ডের রাঁচির এক বাসিন্দা বলরাম কেশরীর নাম। জানা যায়, তাঁর সঙ্গেই ইদানীং সব চেয়ে বেশি কথা হত অর্চনার। তাঁর বাপের বাড়ির দিক থেকে দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলরাম। কয়েক মাস আগে, কলকাতায় একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে অর্চনার সঙ্গে আলাপ হয় বলরামের। তার পর থেকেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো মাধ্যমে নিয়মিত কথাবার্তার পাশাপাশি, ভিডিয়ো কলেও কথা হত বলে তদন্তকারীরা জানতে পারেন।

এর পর বলরামের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তদন্তকারীরা। তিনি জানান, ১৭ তারিখ থেকে বলরাও নিখোঁজ। তাঁর সঙ্গে কোনও রকম ভাবে যোগাযোগ করতে পারছেন না তিনি। এ নিয়ে স্থানীয় থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরিও করেন বলে তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেন বলরামের স্ত্রী।

এর পরেই বলরামের মোবাইলের কললিস্ট খতিয়ে দেখা হয়। দেখা হয় অর্চনা এবং বলরামের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশনও। ১৭ তারিখ থেকে দু’জনের মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন খতিয়ে দেখা যায়, ১৭ থেকে ১৯— এই ক’দিন তাঁদের লোকেশন ছিল ধর্মতলার কাছে এসএন ব্যানার্জি রোডের কাছে। সেই লোকেশনে তদন্তকারীরা একটি হোটেলের সন্ধান পান। ৬ নম্বর এসএন ব্যানার্জি রোডের হোটেল আটলান্টিক এর পর খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানান, ওই নামে তাঁদের হোটেলে কোনও আবাসিক ছিলেন না। কিন্তু, ওই চত্বরে অর্চনা-বলরামের টানা টাওয়ার লোকেশন দেখানোয় তদন্তকারীদের সন্দেহ হয়। ওই এলাকায় আর কোনও থাকার মতো জায়গা নেই। তাঁরা হোটেল কর্মীদের ফের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। তাতে বেশ কিছু অসংলগ্ন বিষয় ধরা পড়ে। আর সেই সময়েই জানা যায় আশিস যাদব নামে হোটেলের এক কর্মীও ১৮ তারিখ থেকে আর কাজে আসছেন না। তাঁর বাড়িও ঝাড়খণ্ডে।

এর পর তদন্তকারীদের একটি দল ঝাড়খণ্ডে যান। সেখান থেকে গ্রেফতার করে আনা আশিসকে আটক করতেই বেরিয়ে আসে আর এক গল্প।

তদন্তকারীদের কাছে আশিস দাবি করেছেন, ১৭ সেপ্টেম্বর বলরাম এবং অর্চনা তাঁদের হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ওঠেন। কিন্তু ১৮ তারিখ সকালে তাঁদের ঘরে সকালে জলখাবার দিতে গেলে কোনও সাড়াশব্দ মেলেনি। অনেক বার ডাকাডাকির পর যখন তাঁরা দরজা খোলেননি, তখন মাস্টার চাবি দিয়ে দরজা খোলা হয়। দেখা যায়, বিছানার উপরে মৃত অবস্থায় প়ড়ে রয়েছেন বলরাম এবং অর্চনা। আশিসের দাবি, তাঁদের সন্দেহ, অর্চনাকে খুন করে বলরাম আত্মঘাতী হয়েছেন। তার পর? আশিস জানিয়েছেন, গোটা ঘটনার দায় হোটেল কর্তৃপক্ষের উপর আসতে পারে, এই ভাবনা থেকে তাঁরা দু’জনের দেহ বস্তায় পুরে অন্যত্র ফেলে দিয়ে আসেন। তিনি অর্চনার দেহ সরানোর কাজ করেছিলেন।

কিন্তু, আশিসের ওই বয়ান প্রাথমিক ভাবে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি তদন্তকারীদের কাছে। পরে আশিসের দেওয়া তথ্য থেকে বাইপাসের ধারে নোনাডাঙা খালপাড় থেকে একটি বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয়। যেমন বস্তায় অর্চনার দেহ মিলেছিল, এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই মিলেছে। এমনকি বস্তার মুখ বাঁধা নাইলনের দড়িটাও একই রকম। তবে, দেহটিতে সম্পূর্ণ ভাবে পচন ধরে গিয়েছে। ওই দেহ আদৌ বলরামের কি না, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। বলরামের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এসে শনাক্ত করবেন।

ওই হোটেলের মালিকের নাম শাম্মি কপূর। তাঁর দুই ছেলে অনিল এবং অর্জুন। তিন জনে মিলেই হোটেল ব্যবসা চালান। কিন্তু, আশিসকে গ্রেফতার করার আগে থেকেই ওই তিন জনকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। এমনকি, হোটেলের আবাসিকদের যে রেজিস্টার খাতা থাকে, সেটাও নতুন। সেখানে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে তথ্য রয়েছে।

ওই হোটেলের দু’জন কর্মীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের প্রশ্ন, এ ভাবে দেহ পাচার করে হোটেল কর্তৃপক্ষের লাভ কী? পুলিশকে জানালেই তো হত। আর রহস্যটা সেখানেই দানা বেঁধে উঠেছে। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘অনেক হোটেলেই বহু দম্পতির দেহ উদ্ধার হয়েছে এর আগে। কিন্তু, কোনও ক্ষেত্রেই হোটেলের লোকজন সেই দেহ সরিয়ে দিয়েছেন এমনটা শুনিনি। আর এ রকম হওয়ার পর পুলিশে খবর না দিয়ে কেন হঠাৎ এমন কাজ করা হল, তার কোনও যুক্তিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবটাই আমরা খতিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন