New Town

রজত মৃত্যু রহস্য লুকিয়ে ওই আধ ঘণ্টায়, স্ত্রীকে এ বার থানায় ডেকে টানা জেরা

কী হয়েছিল ওই ৩০ মিনিটের মধ্যে? কী ভাবে মৃত্যু হল রজতের? এই রহস্যের কিনারা করতে এ বার আসরে নামলেন বিধাননগরের খোদ পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৪৩
Share:

স্ত্রী অনিন্দিতার সঙ্গে মৃত আইনজীবী রজত দে।—ফাইল চিত্র।

মৃত্যুর আধ ঘণ্টা আগেও হোয়াটসঅ্যাপে ‘গ্রুপ-চ্যাটে’ ব্যস্ত ছিলেন নিউটাউনের আইনজীবী রজত দে। শেষ বার্তা পাঠানোর আধ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার হয় রজতের দেহ। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে এই তথ্য।

Advertisement

কী হয়েছিল ওই ৩০ মিনিটের মধ্যে? কী ভাবে মৃত্যু হল রজতের? এই রহস্যের কিনারা করতে এ বার আসরে নামলেন বিধাননগরের খোদ পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহ। শনিবার সকাল থেকে নিউটাউন থানায় ডেকে দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে স্ত্রী অনিন্দিতাকে।

গত শনিবার নিউটাউনের বিডি ব্লকের ফ্ল্যাটে উদ্ধার হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী, বছর ৩৪-এর রজত দে-র অচৈতন্য দেহ। এর পর থেকে গত সাত দিনে বারবার বয়ান বদলেছেন অনিন্দিতা। আগে তিনি দাবি করেন, অন্য ঘরে শুয়ে ছিলেন। পাওয়ার অফ হয়ে যাওয়ায় ঘুম ভেঙে যায়। পাশের ঘরে গিয়ে দেখেন মেঝেতে বসে রয়েছেন রজত। গায়ে হাত দিতেই তিনি পড়ে যান। ভয় পেয়ে তখন প্রতিবেশীর বাড়ি চলে গিয়েছিলেন বলে জানিয়ে ছিলেন অনিন্দিতা।

Advertisement

আরও পড়ুন: রজত মৃত্যু রহস্যে নয়া মোড়, খুনের মামলা দায়ের, সন্দেহের তালিকায় স্ত্রীও​

পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে জেরার সময় অনিন্দিতার দাবি, গলায় চাদর জড়িয়ে আত্মহত্যা করেন রজত। প্রমাণ হিসাবে ওই দিন তিনি একটি চাদরও পুলিশকে দেন।

এখানেই পুলিশের প্রশ্ন, তাহলে কেন প্রথমে ‘আত্মহত্যা’র বিষয়টি চেপে গেলেন অনিন্দিতা? এই কথাটি বলতে সাতদিন লেগে গেল কেন? শুক্রবারই এসেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, শ্বাসরোধ হওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে রজতের। এটা জানার পরই কি বয়ান বদলান অনিন্দিতা? প্রশ্ন উঠছেই।

পুলিশ সূত্রে খবর, গলায় সরু তার জাতীয় কোনও জিনিসের দাগ রয়েছে। ফলে এখানে চাদর জড়িয়ে আত্মহত্যার তত্ত্ব খাটছে না। উল্টে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গিয়েছে। তার থেকে পুলিশের অনুমান, ধস্তাধস্তির কারণে এমন আঘাত লেগে থাকতে পারে।

এই ঘটনায় তৃতীয় কোনও ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। ওই রাতে বাইরে থেকে কেউ কি রজতের ফ্ল্যাটে এসেছিল? খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ। উঠে আসছে অনিন্দিতার এক চিকিৎসক বন্ধুর নামও।

আরও পড়ুন: মুসলিম বন্ধুকে কিডনি দিতে বাধা পরিবারের! আদালতে যাচ্ছেন কাশ্মীরের শিখ তরুণী​

ঘটনার আগে শিশুপুত্র এবং বাড়ির পোষা কুকুরকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অনিন্দিতা। কেন? সে বিষয়টিও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

রজতকে যদি গলায় চাদর দিয়ে ঝুলতে দেখেন অনিন্দিতা, তবে কেন তিনি পুলিশে খবর দেননি সে প্রশ্নও আছে। অনিন্দিতা ডেকে পাঠান তাঁর ভাই অভীক পালকে। অভীকও পুলিশকে খবর দেননি বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেননি। তিনি বরানগরে ফোন করে জানান রজতের বাবা সমীর দে-কে। সমীরবাবু বরানগর থেকে নিউটাউনে আসার পর খবর দেন পুলিশে।

রজতের মৃত্যু রহস্য ক্রমশই জটিল হয়ে যাওয়ায়, পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহ নিজে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখেন। তদন্তের বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেন। অফিসারদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠকও করেন তিনি। তার পরই অনিন্দিতাকে থানায় তলব করে জেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ইতিমধ্যেই পুলিশ খুন ছাড়াও তথ্যপ্রমাণ লোপাট, ষড়যন্ত্রের ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। রজতের বাবা প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন, ছেলেকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন