হাতে হেঁচকা টান, গাড়ি ছুটল তরুণীকে নিয়ে

রবিবার রাতে গরফা রোডে এমন দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন দুই মোটরবাইক আরোহী। তাঁরা ধাওয়া করে গাড়িটির পথ আটকে মহিলাকে উদ্ধার করলেও গাড়ি-সহ চালক চম্পট দেয়। তবে রবিবার রাতে এ শহরে মহিলাদের শ্লীলতাহানি ও কটূক্তির ঘটনা অবশ্য এখানেই শেষ নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

বর্ষবরণের রাতে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে একটি গাড়ি। চালকের আসনের বাঁ দিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে রয়েছে এক মহিলার শরীরের অর্ধেকাংশ। বাঁচার জন্য তারস্বরে চিৎকার করছেন ওই মহিলা!

Advertisement

রবিবার রাতে গরফা রোডে এমন দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন দুই মোটরবাইক আরোহী। তাঁরা ধাওয়া করে গাড়িটির পথ আটকে মহিলাকে উদ্ধার করলেও গাড়ি-সহ চালক চম্পট দেয়। তবে রবিবার রাতে এ শহরে মহিলাদের শ্লীলতাহানি ও কটূক্তির ঘটনা অবশ্য এখানেই শেষ নয়।

কোথাও অভব্য আচরণের প্রতিবাদ করায় মেয়ের সামনেই রাস্তায় ফেলে মারধর করা হল মাকে। কোথাও আবার স্কুটারে চেপে যাওয়া তরুণীকে
কটূক্তির প্রতিবাদ করায় তাঁর সঙ্গীকে মারধর করল আর এক যুবক। পুলিশ জানায়, প্রথম ঘটনাটিতে এখনও অভিযুক্ত গ্রেফতার না হলেও পরের দু’টি ঘটনায় অভিযুক্তেরা ধরা পড়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: তরুণ তুর্কিদের মুখের ভাষাই এখন নয়া শব্দের কলম্বাস

পুলিশ সূত্রের খবর, বছর শেষের রাত দুটো নাগাদ ই এম বাইপাসের একটি উদ্যান থেকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শেষ করে নেতাজিনগরের বাড়িতে ফিরছিলেন এক দম্পতি। অভিযোগ, কালিকাপুর মোড়ের কাছে আচমকাই তাঁদের গাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে আর একটি গাড়ি। এর পরে ওই গাড়িটিকে ধরার জন্য ধাওয়া করেন ওই দম্পতি। কিন্তু গাড়িটি কিছুতেই পথ ছাড়ছিল না। শেষমেশ গরফার সাঁপুইপাড়া মোড়ে পৌঁছে গা়ড়িটিকে ধরেন ওই দম্পতি। ওই গাড়ির চালকের সামনে গিয়ে তাঁরা জানতে চান, কেন ধাক্কা দেওয়া হল?

অভিযোগ, তাঁদের কথায় কর্ণপাত না করে গাড়ির চালক ভদ্রলোককে ধাক্কা মারেন। স্বামীকে ধাক্কা মারতে দেখে ওই মহিলা গাড়িটির বাঁ দিকের দরজা খুলে চালকের সঙ্গে কথা বলতে যান। মহিলার অভিযোগ, আচমকাই তাঁর হাত ধরে হেঁচকা টান মেরে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে ওই চালক। তত ক্ষণে সিগন্যাল সবুজ হয়ে গিয়েছে। মহিলার শরীরের অর্ধেক বেরিয়ে আছে বাইরে। সেই অবস্থাতেই গাড়ি ছুটতে শুরু করে গরফা মেন রোড ধরে। স্ত্রীকে এমন ভাবে নিয়ে যেতে দেখে চিৎকার শুরু করেন স্বামী। প্রায় আধ কিলোমিটার যাওয়ার পরে দুই বাইক আরোহীর চোখে পড়ে বিষয়টি।

সোমবার সন্ধ্যায় ওই মহিলা বলেন, ‘‘তখন গাড়িতে প্রায় ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছি। ওই গাড়ির চালক আমার ডান হাতটা ধরে রেখে গাড়ি চালাচ্ছে। খুব ভয় করছিল।’’ ওই মহিলার হাতে, মাথায় ও ঘাড়ে চোট লেগেছে। এ দিন সকালে গরফা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা। উদ্ধারকারী এক বাইক আরোহী বলেন, ‘‘প্রথমে আমরা কিছু বুঝতে পারিনি। একটা চিৎকার কানে আসছিল। কিছুটা এগোতেই ওই দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলাম।’’ তিনি জানান, এর পরেই তাঁরা গাড়িটিকে ধাওয়া করে সেটির সামনে গিয়ে পথ আটকান। এক জন মহিলাকে উদ্ধার করেন। আর এক জন বাইক আরোহী গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা বলতে যান। অভিযোগ, তাঁকেও ধাক্কা মেরে চম্পট দেয় অভিযুক্ত গাড়ির চালক।

যদিও তদন্তকারীদের দাবি, সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছে, বচসার সময়ে ওই মহিলা নিজেই গাড়িতে উঠে বসেছিলেন। তবে পুলিশ শ্লীলতাহানি ও মারধরের মামলা দায়ের করে ওই গাড়ির খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে।

অন্য দিকে, ওই দিনই রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বেলেঘাটা মেন রোডের বাসিন্দা এক গৃহবধূ তাঁর দশ বছরের মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। স্থানীয় দুই তরুণ ও তিন তরুণীকে রাস্তার মধ্যেই অভব্য আচরণ করতে দেখে তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন। অভিযোগ, ওই দুই যুবক মহিলাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে লাথি, ঘুষি মারতে থাকে। মা ও মেয়ের চেঁচামেচিতে স্থানীয়েরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লে ভয়ে চম্পট দেয় তারা। এর পরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে ওই মহিলা বেলেঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার পরেই ওই এলাকা থেকে চঞ্চল চক্রবর্তী ও বিপ্লব দাস ওরফে বিল্লাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই মহিলা বলেন, ‘‘এলাকার মধ্যে এমন অভব্য আচরণ করছিল ওরা যে, প্রতিবাদ না করে থাকতে পারিনি।’’

আবার ওই রাতেই এপিসি রোড ধরে স্কুটারে চেপে ফিরছিলেন এক তরুণী ও তাঁর সঙ্গী। অভিযোগ, শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের সামনে রাস্তায় দাঁড়ানো এক যুবক তাঁকে লক্ষ করে কটূক্তি করে। তখন ওই তরুণীর সঙ্গী নেমে প্রতিবাদ করলে তাঁকে বেধড়ক মারধর শুরু করে ওই যুবক। পরে রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশ এসে সিকন্দর নামের ওই যুবককে গ্রেফতার করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন