সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে শনিবার রাত-পাহারায় প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
রাত সাড়ে ১২টায় ঠক ঠক আওয়াজে দরজা খুলে কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছিলেন গৃহবধূ শ্রীমতি ঘড়ুই। গভীর রাতে দরজার সামনে একদল লোক নিয়ে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।
কান্তিবাবুকে দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন ওই গৃহবধূ। তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে কান্তিবাবু বললেন, ‘‘মা, ভয় পাবি না। ওদের সন্ত্রাস রুখতে মাঠে নেমে প্রতিবাদ করতে হবে। লড়াই ছাড়া কোনও রাস্তা নেই রে!’’ কয়েক দিন আগেই সিপিএম সমর্থক শ্রীমতির বাড়িতে রাত-দুপুরে ইট মারা হয়েছে, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শাসানি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। কান্তিবাবুর কথায় মাথা নেড়ে ওই গৃহবধূ বলেন, ‘‘তা-ই হবে দাদা। বঁটি নিয়ে নামব এ বার।’’ কান্তিবাবুর পাশে থাকা সিপিএম সমর্থকদের স্লোগানে গভীর রাতে একের পর এক বাড়ির দরজা খুলে যায়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে কান্তিবাবুর পিছু নেন সিপিএম সমর্থকরা।
শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত কলকাতা পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভগৎ সিংহ, শহিদ স্মৃতি প্রভৃতি কলোনিতে ঘোরেন কান্তিবাবু। তার পর ভগৎ সিংহ কলোনির মোড়ে বসে প্রায় ভোর পর্যন্ত চলে শাসক দলের সন্ত্রাস প্রতিরোধের পরিকল্পনা বৈঠক।
দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে শাসক দলের সন্ত্রাস রোখার এক মাত্র পথ হিসাবে ‘সক্রিয়-প্রতিরোধ’-এর পক্ষে সওয়াল করেছিলেন কলকাতা পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কান্তিবাবু। সেই মত হাতে কলমে প্রয়োগ করতেও নেমে পড়েছেন তিনি। রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসক দলের মোটর সাইকেল বাহিনীর চাপা সন্ত্রাস মোকাবিলায় নিজের ঘরের মাঠে চালু করেছেন ‘রাত পাহারা’। তাঁর কথায়, ‘‘শাসক দলের চাপে পুলিশ নিরপেক্ষতা ভুলতে বাধ্য হচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ ফেরাতে বাধ্য পুলিশ। শাসক দল ও প্রশাসনের যৌথ সন্ত্রাস রুখতে মাঠে নেমে সক্রিয় প্রতিরোধ ছাড়া কোনও উপায় নেই।’’ কান্তিবাবুর পরিকল্পনায় আপাতত রাতে আরজি পার্টির মতো বেশ কয়েকটি দল তৈরি করা হয়েছে। রাতে ওই দল এলাকায় টহল দেবে। শাসক দলের সন্ত্রাস দেখলেই প্রাথমিক ভাবে পুলিশে খবর দেওয়া হবে। পুলিশ সক্রিয় না হলে প্রতিরোধের পথে যাবেন বাম সমর্থকরা। সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠকে কান্তিবাবু বলেন, ‘‘যত রাতই হোক, আমাকে তোমরা পাশে পাবে। সেনাপতি মাঠে নেমে লড়াই করবে। দেখা যাক, কত সন্ত্রাস করতে পারে ওরা। আমরাও সক্রিয় প্রতিরোধের পথে যাব। দেখা যাক, শাসক দল আর পুলিশ কত লোককে জেলে ঢোকায়।’’ নির্বাচনের দিনও সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কান্তিবাবু। প্রসঙ্গত, গত লোকসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম সাড়ে তিন হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছে।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই ওই এলাকায় তাঁদের দলের সন্ত্রাসের অভিযোগ মানতে নারাজ। যাদবপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বলেন, ‘‘ওই ওয়ার্ডের কয়েকটি জায়গায় কিছু মদ্যপ ছেলে উপদ্রব করেছিল বলে শুনেছি। ওটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সে ক্ষেত্রে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। আমি সব বিষয় খতিয়ে দেখেছি।’’
বস্তুত, কান্তিবাবুর মতো গোটা বামফ্রন্টই এখন সক্রিয় প্রতিরোধের পথে যাচ্ছে। সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের আইন অমান্যে পুলিশের লাঠিচালনার প্রতিবাদে আজ, সোমবার বামপন্থী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলি ছাত্র-ছাত্রী, আইনজীবী, করণিক-সহ যাঁরা কলম ব্যবহার করেন, তাঁদের বেলা সাড়ে তিনটে থেকে ১৫ মিনিট পেন ডাউন (কলম ব্যবহারে বিরত থাকা) এবং সন্ধে পৌনে সাতটা থেকে সাতটা সকলকেই আলো নিভিয়ে প্রতিবাদ করার জন্য আর্জি জানিয়েছে তারা। তার পাশাপাশি, কিছু দিন আগে প্রতিবন্ধীদের কর্মসূচিতে পুলিশি লাঠিচালনার প্রতিবাদে কান্তিবাবুর নেতৃত্বে প্রতিবন্ধী সম্মিলনী আজই আইন অমান্য করবে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে।