ট্যাক্সিতে ধর্ষণ

প্রশ্নের মুখে রাতে পুলিশি নজরদারি

টি বোর্ডের সামনের ফুটপাথ থেকে এক কিশোরীকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। অথচ সেখান থেকে পঁচিশ পা দূরে থাকা কিয়স্কের পুলিশকর্মীরা তা দেখতে পেলেন না! শহরের এক নাবালিকাকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে লালবাজারের অন্দরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১৯
Share:

টি বোর্ডের সামনের ফুটপাথ থেকে এক কিশোরীকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। অথচ সেখান থেকে পঁচিশ পা দূরে থাকা কিয়স্কের পুলিশকর্মীরা তা দেখতে পেলেন না! শহরের এক নাবালিকাকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে লালবাজারের অন্দরে। তাঁরা এ-ও বলছেন, রাতের শহরে পুলিশের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু সক্রিয়তা বেড়েছে কি?

Advertisement

বস্তুত, গত কয়েক বছরে লালবাজারের একাধিক শীর্ষকর্তা রাতের শহরে নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশের টহলদারি-উপস্থিতির উপরে জোর দিয়েছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, পথেঘাটে উর্দিধারীদের দেখলে দুষ্ক়ৃতীরা ভয় পাবে। ফলে গোলমাল হবে না। কিন্তু বুধবার ভোরের ঘটনা দেখিয়ে দিল, উর্দিধারীরা পথে থাকলেও দুষ্কৃতীরা ভয় পাচ্ছে না।

লালবাজার সূত্রের খবর, রাতের শহরে ৬৫টি টহলদার গাড়ি, ২২টি পিকেট, কিয়স্ক মিলে হাজার তিনেক পুলিশ থাকে। তদারকির জন্য থাকেন ডিসি পদমর্যাদার এক জন অফিসার। গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি, এলাকায় নজরদারি, বিপদগ্রস্ত নাগরিকদের সাহায্য— এ সবের দায়িত্ব ওই পুলিশকর্মীদের উপরেই ন্যস্ত করেছে লালবাজার।

Advertisement

কিশোরীর খুনের প্রাথমিক তদন্তে পুলি‌শ জেনেছে, টি বোর্ডের সামনে থেকে ওই কিশোরীকে গাড়িতে তোলার পরে ফেয়ারলি প্লেস, স্ট্র্যান্ড রোড, বাবুঘাট, এজেসি বসু উড়ালপুল, পরমা উড়ালপুল হয়ে তপসিয়ায় পৌঁছেছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তদন্তকারীরা বলছেন, অপহরণ এবং কিশোরীর লাশ ফেলার মধ্যে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। এই যাত্রাপথের মাঝে কোথাও গাড়ি থামিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছিল ওই কিশোরীকে। পুলিশের সন্দেহ, সম্ভবত এজেসি বসু উড়ালপুল বা পরমা উড়ালপুলের উপরে গাড়ি থামিয়ে দুই অভিযুক্ত পালা করে কিশোরীর উপরে শারীরিক নির্যাতন করে। তার পর গলা টিপে খুন করা হয়। তার পর তিলজলার দিকে নেমে তপসিয়ায় ঢুকে খালে কিশোরীর দেহ ফেলে খিদিরপুরে নিজেদের বাড়ি চলে যায় তারা। রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে কিশোরীকে একাধিক বার ধর্ষণ করলেও তা নজরে আসেনি কোনও পুলিশকর্মীর।

এখানেই জোরালো হয়ে উঠছে রাতের শহরে পুলিশি সক্রিয়তার প্রশ্ন। অনেকে বলছেন, কেনই বা সিসিটিভিতে অপহরণের ঘটনা দেখতে পেলেন না কন্ট্রোল রুমে বসে থাকা পুলিশকর্মীরা?

কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তার ব্যাখ্যা, শহরে ৭০০টি সিসিটিভি রয়েছে। সেগুলি সব ক’টি এক সময়ে নজরদারি করা সম্ভব হয় না। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলির উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়। রাতে নিয়মিত টহলদারি চালানো হয় বলেও দাবি করেছেন তিনি। এই ঘটনা কেন কিয়স্ক বা টহলদার পুলিশের নজরে এল না, সে ব্যাপারে গাড়ির যাত্রাপথে ডিউটিতে থাকা সব পুলিশকর্মীর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানান। লালবাজারের আর এক পদস্থকর্তার যুক্তি, রাতের শহরে সন্দেহজনক গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করা হয়। অভিযুক্তদের গাড়ি দেখে তেমন কোনও সন্দেহ হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। ‘‘সব গাড়ি থামিয়ে তো তল্লাশি করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে অনেকে আপত্তিও জুড়তে পারেন,’’ বলছেন ওই কর্তা।

লালবাজারের কর্তারা এই যুক্তি দিলেও রাতের শহরে পুলিশকর্মীদের ‘সক্রিয়তা’ হাতেনাতে প্রমাণ পেয়েছেন কলকাতা পুলিশেরই এক পদস্থ অফিসার। সম্প্রতি গভীর রাতে নিজের গাড়ি নিয়ে টহল দিতে বেরিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অভিজ্ঞতা, রাস্তায় নিযুক্ত কনস্টেবলরা মালবাহী লরি এলেই গার্ডরেল বসিয়ে পথ আটকাচ্ছেন। তার পর কেবিনের কাছে গিয়ে হাত পেতে ‘সেলামি’ নিয়ে পথ ছেড়ে দিচ্ছেন তাঁরা। বাকি কোনও গাড়ির প্রতি কিন্তু তেমন নজর দিচ্ছেন না তাঁরা। ওই অফিসারের মন্তব্য, ‘‘কর্তারা যাই বলুন না কেন, রাতে রাস্তায় থাকা পুলিশকর্মীদের বেশির ভাগ কোন বিষয়ে সক্রিয় তা সবাই জানেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement