মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, রেশনের চাল-চিনি যাঁরা নিতে চান না, তেমন গ্রাহকের নাম খাদ্য সুরক্ষা যোজনার প্রকল্প থেকে বাদ দিতে হবে। সেই সব গ্রাকদের হাতে পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য নীল রঙের রেশন কার্ড তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু যে ফর্মে (VII-U) সেই আবেদন জানাতে
হবে, পুরসভার অনেক ওয়ার্ডে তা এখনও পৌঁছয়নি। বুধবার পুর অধিবেশনে এসে পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত সমাজকল্যাণ আধিকারিকের কাছে তেমনই অভিযোগ জানিয়েছেন উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর। সম্প্রতি কলকাতা-সহ একাধিক পুরনিগম জুড়ে ফের ডিজিটাল রেশন কার্ড নিয়ে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। সমীক্ষার কাজ করতে গিয়েই নানাবিধ সমস্যায় পড়েছেন সমীক্ষায় কর্মরতেরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সমীক্ষার কাজ চলছে। সমীক্ষার ফর্ম দেওয়া হচ্ছে তাঁদের কাছেই। তৃণমূলের একাধিক কাউন্সলরের কথায়, যিনি পুরসভার ওই কাজকর্ম দেখেন, তাঁকে জানিয়ে জবাব পেয়েছি, ‘এখন নেই, পরে পাঠাব।’
তা হলে কি ওই ফর্ম ছাপা হয়নি বা কম হয়েছে? কোনও জবাব দেননি পুরকর্তারা। তবে খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ফর্ম না থাকার কোনও কারণ নেই। জানি না কেন দেওয়া হচ্ছে না।’’
পুরসভার একাধিক মেয়র পারিষদের কথায়, রেশন কার্ড নিয়ে সমীক্ষার ব্যাপারটা এত দ্রুত করতে বলা হয়েছে যে তাতেই পদে পদে সমস্যা বাড়ছে। প্রথমত গত বার নাম ঢোকানোর সময়ে বলা হয়েছিল, যত পারো নাম তোলো। সে বার অর্থাৎ, ২০১৫ সালের পরে প্রতি ওয়ার্ডে খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় নাম তোলার হিড়িক পড়ে। কাউন্সিলর থেকে রেশন ডিলারেরাও দেদার নাম তুলতে থাকেন। তাতে দেখা যায়, কেবল কলকাতায় ৫৬ লক্ষেরও বেশি নাম উঠে গিয়েছে। অথচ ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, কলকাতার জনসংখ্যা ৪৫ লক্ষ। অর্থাৎ, জনসংখ্যার চেয়েও রেশন কার্ড হোল্ডারের সংখ্যা বেশি। তালিকায় নাম লেখোনো হলেও ডিজিটাল কার্ডে অজস্র ভুল ধরা পড়ে। কারও নামে ভুল, কোথাও ঠিকানায়, কোনওটার ক্ষেত্রে রেশন ডিলারের স্থানেও গরমিল ধরা পড়ে। সে সব সংশোধন-সহ সম্পন্ন পরিবারের নাম খাদ্য সুরক্ষা যোজনা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য নতুন করে সমীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। সিদ্ধান্ত হয়, নতুন করে সমীক্ষার পরে পুরনো সব কার্ড বাতিল করা হবে। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ওই সমীক্ষা ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে। এই সমীক্ষার কাজ আরও সময় নিয়ে করা উচিত ছিল বলে মনে করছেন তাঁরা।
কিন্তু তা হচ্ছে না কেন?
পুরসভার এক আমলার কথায়, রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে পয়লা মার্চ থেকে আর কোনও পুরনো কার্ড কার্যকর থাকবে না। গত ৮ ফেব্রুয়ারি পুরভবনে এক বৈঠকে সে সব জানানো হয়েছিল কাউন্সিলরদের। বুধবার ফের তা নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে অবশ্য বাম কাউন্সিলরদের তরফ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, তাঁদেরকে অন্ধকারের রেখেই তৃণমূল নিজেদের রাজনৈতিক কর্মীদের দিয়ে সমীক্ষার কাজ চালাচ্ছে। পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রত্না রায় মজুমদারের নেতৃত্বে বাম কাউন্সিলরেরা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে প্রতিবাদ জানান। রত্নাদেবীর অভিযোগ, ‘‘যে ওয়ার্ডে তৃণমূলের কাউন্সিলর রয়েছেন, সেখানে তাঁদের মাধ্যমে সমীক্ষার জন্য লোক নিযুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু একাধিক জায়গায় বাম কাউন্সিলরদের সেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।’’ মেয়র শোভনবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের অভিযোগ শুনেছি। পুর অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে সব ওয়ার্ডেই কাউন্সিলরদের পরামর্শ নেওয়া হোক।’’