অবহেলাকে সঙ্গী করে ‘দখল’ উত্তমকুমারও

উপায় অবশ্য না থাকারই কথা। কারণ পুরসভা, রেল না কেএমডিএ— কার জমিতে ওই পার্ক তৈরি হয়েছে, সেটাই স্পষ্ট জানেন না কেউ।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৩:১৬
Share:

বেহাত: দোকান-ছাউনিতে ভরেছে হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন উত্তম উদ্যান। নিজস্ব চিত্র

প্রয়াণবার্ষিকীতে একটা মালাও পরানো হয়নি। বরং দখলদারে ঢাকা পড়েছে তাঁর অস্তিত্ব!

Advertisement

হাওড়ার গঙ্গার পাড়ে প্রতিনিয়ত এমন ভাবেই নিজের অস্তিত্ব রক্ষার অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে চলেছেন বাঙালির মহানায়ক উত্তমকুমার। নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে পথচারীদের অভিযোগ, ‘‘ওটা যে মহানায়কের নামে কোনও পার্ক, সেটা আজ আর বোঝার উপায় নেই।’’

উপায় অবশ্য না থাকারই কথা। কারণ পুরসভা, রেল না কেএমডিএ— কার জমিতে ওই পার্ক তৈরি হয়েছে, সেটাই স্পষ্ট জানেন না কেউ। ওই পার্কের বিষয়ে ঠিক তথ্যও নেই ওই তিন দফতরের কাছে। প্রত্যেকেই ‘জায়গাটি আমাদের নয়’ বলে দায় সেরেছেন। ফলে কার্যত ‘অনাথ’ অবস্থাতেই দিন কাটছে হাওড়ার মহানায়ক উদ্যানের।

Advertisement

হাওড়া স্টেশনের পুরনো কমপ্লেক্সের উল্টো দিকে, হুগলি নদী জলপথ পরিবহণের দু’নম্বর জেটির পাশে ছোট্ট একটি পার্ক। পেভার ব্লক দিয়ে বাঁধানো সেই পার্কের মাঝে বসানো রয়েছে উত্তমকুমারের একটি মুরাল। ফলক দেখলে বোঝা যায়, সেটি আদতে ‘মহানায়ক উত্তম উদ্যান’। উদ্বোধন হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ১৬ নভেম্বর। কিন্তু কোন সংস্থা বা কারা ওই উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন, অথবা উদ্যানটি তৈরি করেছে কোন সংস্থা— সে সম্পর্কে কোনও তথ্য লেখা নেই।

বুধবার মহানায়কের ৩৯তম প্রয়াণবার্ষিকীতে ওই উদ্যানে গিয়ে দেখা গেল, মুরালটিতে একটি মালাও পরানো হয়নি। বরং বেদির উপরেই বসে আছেন কয়েক জন। মুরালের পিছনে একটু উঁচু জায়গায় প্লাস্টিক টাঙিয়ে থাকার গুমটি-ঘরও বানিয়ে নিয়েছেন ভবঘুরেরা। রেলিং দিয়ে ঘেরা ওই জায়গায় প্লাস্টিকের ছাউনি টাঙিয়ে চলছে চা, ছাতুর দোকান থেকে চুল-দাড়ি কাটা। কোথাও আবার ডাঁই করা রয়েছে প্লাস্টিকের বস্তা। একটু অসতর্ক হলে আগুন লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। আর রাত হলে সেখানে একটা আলোও জ্বলে না বলে অভিযোগ পথচারীদের।

যখন ওই পার্কটি তৈরি হয়, সে সময়ে উত্তর হাওড়ার সিপিএম বিধায়ক ছিলেন লগনদেও সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘মহানায়কের নামে পার্ক তৈরির জন্য সম্ভবত কোনও সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছিল রেল। আগে ওঁর জন্ম ও মৃত্যুদিনে অনুষ্ঠানও হত। কিন্তু এখন আর কিছু হয় কি না জানি না।’’ পার্কটির দায়িত্ব পুরসভার নয় বলেই জানাচ্ছেন হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (উদ্যান) বিভাস হাজরা। তাঁর কথায়, ‘‘শহরে অনেক নতুন উদ্যান তৈরি হয়েছে। এমনকি যেগুলি বেহাল অবস্থায় ছিল সেগুলিও সাজানো হয়েছে। কিন্তু এই পার্কটি আমাদের নয়।’’

সকলেই যখন দায় এড়াচ্ছেন, পথচারীরা তখন প্রশ্ন তুলছেন, ‘জতুগৃহ থেকে আদৌ কি নবজন্ম হবে মহানায়কের?’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন