বাইক-বিধি চুলোয়, হুমকিতে পুলিশই ত্রস্ত

মাথায় হেলমেট নেই। মোটরবাইক চালানোর সময়ে নিজেই পা দিয়ে নামিয়ে দিচ্ছেন লোহার স্ট্যান্ড। বাইক কাত করে চালানোর সময়ে পিচের রাস্তার সঙ্গে সেই স্ট্যান্ড ঘষা খাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ০০:০৪
Share:

হেলমেটের বালাই নেই অধিকাংশের মাথায়। বুধবার, খিদিরপুরে। ছবি : শুভাশিস ভট্টাচার্য

মাথায় হেলমেট নেই। মোটরবাইক চালানোর সময়ে নিজেই পা দিয়ে নামিয়ে দিচ্ছেন লোহার স্ট্যান্ড। বাইক কাত করে চালানোর সময়ে পিচের রাস্তার সঙ্গে সেই স্ট্যান্ড ঘষা খাচ্ছে। গতি যত বাড়ছে, ততই পিচ রাস্তার সঙ্গে লোহার স্ট্যান্ডের ঘর্ষণের ফলে আগুনের ফুলকি ছিটকে আসছে। এটাই মজা। এটাই নেশা। এটাই বানিয়ে দেয় হিরো।

Advertisement

এতে যে জীবনের ঝুঁকি থাকে, গরম রক্ত তা মানতেই চায় না। মঙ্গলবার রাতে ডায়মন্ড হারবার রোডে পথ দুর্ঘটনায় শেখ শাহরুখ নামে ২৩ বছরের যে বাইকচালকের মৃত্যু হয়েছে, তা থেকে উঠে এসেছে এই তথ্য। পুলিশ জানিয়েছে, খিদিরপুরে স্ট্যান্ড নামিয়ে বাইক চালানোর সময়ে ট্রাম লাইনে পিছলে পড়ে যান শাহরুখ ওরফে রুবেল। পিছন থেকে যে লরিটি আসছিল, সেটি ব্রেক কষার সময়টুকুও পায়নি। লরির পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান তিনি। শাহরুখের মাথায় হেলমেট ছিল না।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি দিন রাত দশটার পরে একদল যুবক মোটরবাইক নিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়। শুরু হয় জোরে বাইক চালানো ও নানা কেরামতি দেখানোর প্রতিযোগিতা। অভিযোগ, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাইক নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে নাবালকের দলও। আর ওই সময়েই ওই এলাকায় মালবোঝাই বড় বড় লরি রাস্তায় নেমে পড়ে। সেই সব লরির ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে চলে বাইক নিয়ে ঝুঁকির খেলা।

Advertisement

আইনের শাসন নেই?

প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে যান পুলিশেরই এক অফিসার। তিনি বলেন, ‘‘হেলমেট ছাড়া আটকালে উল্টে হুমকি শুনতে হয়, ‘তু মুঝে জানতা নেহি, ম্যা কৌন হুঁ’। তাবড় নেতাদের নাম বলেন তাঁরা।’’ এক অফিসার এক জন বাইকচালককে দাঁড় করালে এক মুহূর্তে জড়ো হয়ে যান ৫০ জন যুবক। শাসাতে শুরু করেন পুলিশকেই। সেখানে আইন কোন পথে চলবে, তা তাঁরাই ঠিক করেন।

ঠিক যেমন মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনার পরে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধিয়ে দেন এলাকার কিছু যুবক। পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। রাস্তার পাশে থাকা ট্রাফিক সচেতনতার এলইডি বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়। পুলিশকর্তা পৌঁছলে তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এলাকার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কিছু মানুষের সাহায্যে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। রবিবার রাতেও খিদিরপুরে ফ্যান্সি মার্কেটের একটু আগে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। সে দিনও একটি গাড়ির চাকায় পিষ্ট হন এক বাইকচালক। তার পরে ওই গাড়ির উপরে উল্টে যায় একটি ট্যাঙ্কার। মৃত্যু হয় গাড়িতে থাকা এক যুবকের। লরি ও ট্যাঙ্কারের মাঝে পিষে যায় অন্য একটি ট্যাক্সি।

কেন বারবার এমন দুর্ঘটনা?

পুলিশের একাংশই জানাচ্ছে, আইন ভাঙাই যেন দস্তুর হয়ে উঠেছে গোটা এলাকায়। বাইক নিয়ে কেরামতি তো রয়েইছে, তা ছাড়াও বেশির ভাগ মানুষই ট্রাফিক সিগন্যালের তোয়াক্কা করেন না। রাস্তার মোড়ে লাল আলো জ্বললেও পুলিশের চোখের সামনে দিয়েই অটো-বাইক নিয়ে ঢুকে পড়ে সটান। এলাকা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট গলি। সেগুলি এসে মিশেছে বড় রাস্তায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় রাস্তায় গাড়ির গতিও বেড়ে যায়। আর ছোট ছোট গলি দিয়ে বেপরোয়া ভাবে হুশ করে বাইক নিয়ে বড় রাস্তায় উঠে আসেন যুবকের দল।

খিদিরপুর ব্রিজ থেকে নামার সময়ে এমনিতেই গাড়ির গতি বেশি থাকে। ব্রিজ থেকে নামতেই বাঁ পাশে রয়েছে মনসাতলা লেন। ডান পাশে রামকমল স্ট্রিট। এই সব গলি থেকে কার্যত ফিল্মি কায়দায় সাঁ সাঁ করে বাইক নিয়ে পথে নেমে পড়েন যুবকের দল। চোখের নিমেষে গাড়ির মুখোমুখি চলে আসে মোটরবাইক। প্রতি মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকেন স্থানীয়েরা। এবং নজিরবিহীন ভাবে দুর্ঘটনাপ্রবণ ওই এলাকাটির দেখভালের জন্যে রয়েছেন এক জন ট্রাফিক কনস্টেবল!

কলকাতা পুলিশের দায়িত্ব নিয়ে কমিশনার রাজীব কুমার ট্রাফিক আইনের উপরেই বেশি জোর দেন। হেলমেটহীন বাইকচালককে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। কী হল সেই নির্দেশের? বুধবার ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমারকে ফোন করে, মোবাইলে বার্তা পাঠিয়েও ধরা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন