খিদিরপুর ৭৪ পল্লীর পুজোমণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড়। ছবি: সংগৃহীত।
বৃষ্টি ঠেকাতে একগাদা ত্রিপল এনে রেখেছিলেন পুজো উদ্যোক্তারা। সেই ত্রিপল দিয়ে এখন চড়া রোদ আড়াল করার উপক্রম হয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে!
সোমবার বিকেল পর্যন্ত এ-ই ছিল কলকাতার আবহাওয়ার চেহারা। সকাল থেকেই রোদ ঝলমলে নীল আকাশ। হালকা ঠান্ডা আমেজও ছিল। কিন্তু বেলা বাড়তেই রোদের তেজ বেড়েছে। খটখটে রোদে ঠাকুর দেখতে বেরোলে গরম তো লাগবেই। কিন্তু এ সেই ভ্যাপসা গরম নয়। ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে বা মুখ থেকে মেকাপ খসে পড়ার মতো গরমও নয়। বৃষ্টিহীন আশ্বিনে যেমনটা হয়ে থাকে, এ-ও ঠিক তা-ই।
সকাল-দুপুরে আবহাওয়া মনোরম থাকলেও, সপ্তমীর সন্ধ্যা মাটি করবে না তো বৃষ্টি? এই প্রশ্ন কিন্তু সকাল থেকেই বাঙালির মনে উঁকি দিয়েছে। সে কারণে টালা প্রত্যয়, সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার বা সুরুচি সঙ্ঘে ঠাকুর দেখতে আসা অনেকের হাতেই একখানা ছাতা ছিল। দুপুর আড়াইটে নাগাদ সপরিবার টালা প্রত্যয়ের মণ্ডপ ঘুরে দেখে বেরোচ্ছিলেন হাবরার সৌমেন গুহ। ছোট্ট মেয়েকে আইসক্রিম কিনে দিতে দিতে বললেন, ‘‘বৃষ্টি হতে পারে ভেবেই ছাতা এনেছিলাম। এখন রোদে ছাতা খুলতে হবে, যা দেখছি!’’ আবহবিদেরাও আশ্বস্ত করে জানাচ্ছেন, ষষ্ঠীর মতো সপ্তমীও শুকনোই থাকবে। মহানগর বৃষ্টিতে ভেসে যাবে, এ রকম কোনও সম্ভাবনা নেই।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
গত সপ্তাহেই মাত্র ছ’ঘণ্টার বৃষ্টিতে বানভাসি হয়েছে গোটা শহর। কিন্তু পুজোর মধ্যে সে রকম বড়মাপের দুর্যোগের আশঙ্কা না-থাকলেও, আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, দিনে দু’-এক পশলা হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু ষষ্ঠীর সকালে কলকাতার আকাশ রোদ ঝলমলেই ছিল। বিকেলের দিকে আলিপুর বা দক্ষিণ কলকাতার আকাশে মেঘ খানিক বেগড়বাঁই করেছে। বেশ খানিক ক্ষণ মুখ ভার করে ছিল সে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই মেঘ কেটে গিয়েছে।
কিন্তু সপ্তমীর আকাশে সেই গুমোট ভাব কখনওই ছিল না। অবশ্য পূর্বাভাস তেমনই ছিল। উপকূলের জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝা়ড়গ্রামে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও, সপ্তমীতে কলকাতার ভেজার সম্ভাবনা যে নেই, তা আগেই জানিয়েছিল আবহাওয়া দফতর।
মাথার উপর যে হেতু মেঘের চোখরাঙানি নেই, তাই দিব্যি সাজগোজ করে ঠাকুর দেখতে বেরোতে পারেন সন্ধ্যায়। উত্তর-দক্ষিণ, যে দিকে খুশি নিশ্চিন্তে ‘প্যান্ডেল হপিং’ করতেই পারেন। পাশাপাশি এটাও জেনে রাখা প্রয়োজন, বর্ষা এখনও বাংলাকে বিদায় জানায়নি। আর স্থানীয় মেঘও কখন নিজের মুখ ভার করে বসবে, তা-ও নিখুঁত ভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে কোথাও যদি বৃষ্টি নামেও, তা খুব বেশি ক্ষণ স্থায়ী হবে না। বড়জোর মিনিট মিনিট পাঁচেকের! আধ ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা ধরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। রসিকতা করে এক আবহবিদ বললেন, ‘‘কোথাও বৃষ্টি হলেও, তা ঝিরঝিরে বৃষ্টিই হবে। আর তেমন হলে কোনও শেডের তলায় দাঁড়িয়ে পড়বেন। এত ভাবার কিছু নেই!’’
সপ্তমীর সন্ধ্যায় বা রাতে যে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই, তা মোটামুটি পরিষ্কার উপগ্রহচিত্র থেকেও। তাতে দেখা গিয়েছে, সন্ধ্যার পর থেকে দক্ষিণের বেহালা, পূর্বের কসবা, মধ্যের চাঁদনি চক বা উত্তরের শ্যামবাজার, কোথাওই সে ভাবে বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। ফলে নিশ্চিন্তে দক্ষিণের চেতলা অগ্রণী, ম্যাডক্স স্কোয়্যার বা উত্তরের টালা প্রত্যয়, বাগবাজার সর্বজনীন, যে দিকে খুশি যেতে পারেন।