Crematorium

Crematorium: নিরাপত্তার বালাই নেই, অবারিত দ্বার দুই শ্মশানের

হাঁসখালিতে ধর্ষিতা কিশোরীকে কী ভাবে সকলের অলক্ষ্যে, ডেথ সার্টিফিকেট না দেখিয়েই দাহ করে দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২২ ০৬:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

চিত্র এক: বাঁশের বেড়া ঠেলে ভিতরে ঢুকে গাছপালার নীচ দিয়ে যাওয়ার যে মেঠো পথ, তার আশপাশে কেমন একটা গা-ছমছমে পরিবেশ। দিনেদুপুরেই এমন। রাতে কেউ সচরাচর সে পথে যান না। এক দিকে বয়ে যাচ্ছে হাড়োয়া খাল। অন্য দিকে ইটভাটা। দুইয়ের মাঝে একচিলতে হাড়োয়া খাল শ্মশান।

Advertisement

চিত্র দুই: রাজারহাটের নোয়াই খালের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার ধারে পাঁচিল ঘেরা জায়গা। লোহার গেট বন্ধ থাকলেও পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে পড়া যায়। দিনের বেলায় শ্মশান কমিটির দু’-এক জন থাকলেও রাতে গেট তালাবন্ধই থাকে। নজরদারির কেউ নেই।

হাঁসখালিতে ধর্ষিতা কিশোরীকে কী ভাবে সকলের অলক্ষ্যে, ডেথ সার্টিফিকেট না দেখিয়েই দাহ করে দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এমন অবস্থায় কলকাতার খুব কাছেই হাড়োয়া খাল এবং হাজরাতলা শ্মশানের এমন ছন্নছাড়া দশা চোখে পড়েছে। যদিও শ্মশানগুলিতে নিয়মিত দাহকাজ হয় না বলেই দাবি কমিটিগুলির। তবে শ্মশানের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো উচিত বলেই মনে করেন তাঁরা। স্থানীয় পঞ্চায়েত কিংবা সরকারের তরফে শ্মশানগুলির উপরে নজরদারি চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন কমিটির সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

বারাসত-২ ব্লকের কীর্তিপুর-২ পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা হাড়োয়া খাল শ্মশানে এক দুপুরে পৌঁছে দেখা গেল, নির্জন এলাকায় অবস্থিত ওই শ্মশানের প্রবেশপথ একটি নিচু বেড়া দিয়ে আটকানো। চাইলে যে কেউ ভিতরে ঢুকে পড়তে পারেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সন্ধ্যার পরে স্থানীয় যুবকেরা অনেকেই সেখানে আড্ডা মারেন। ভিতরে টিনের ছাউনির নীচে তৈরি চুল্লির আশপাশে পোড়া দাগ।

কীর্তিপুর-২ পঞ্চায়েতের প্রধান নীলিমা মণ্ডল জানান, ওই শ্মশানে দাহকাজ এমনিতে কমই হয়। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামের রীতি মেনে সাধারণত ওই শ্মশানে কবর দেওয়া হয়। খুব গরিব কেউ কেউ কখনও সখনও দাহকাজের জন্য আসেন। যে কোনও ধরনের সৎকারের আগেই ডেথ সার্টিফিকেট দেখা হয়। তবে নজরদারি সে ভাবে কিছু নেই।’’ শ্মশানে ডাক্তার নেই। দাহকাজের শংসাপত্র নিতেও অন্যত্র ছুটতে হয় মৃতের পরিবারকে।

আবার রাজারহাটের নোয়াই খালের ধারে তৈরি হাজরাতলা শ্মশানটি উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হলেও সেটি টপকে ভিতরে প্রবেশ করাটা খুব কঠিন নয়। শ্মশান কমিটির লোকজনও জানালেন, স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফে বিশেষ সাহায্য না মেলায় সব দিকে ঠিকমতো খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না। সপ্তাহে দু’-তিনটি দেহ আসায় কোনও মতে কাজকর্ম চলছে। নিরাপত্তারক্ষী রাখার আর্থিক ক্ষমতা কমিটির নেই।

শ্মশান কমিটির তরফে প্রশান্ত রায় জানালেন, দাহকাজের এক-দু’দিন পরে শংসাপত্র দেওয়া হয়। যাতে দাহকাজের পরে সমস্যা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময়ে দাহকাজের পরে শংসাপত্রের একাধিক দাবিদার এসে হাজির হন। তাই সব সময়ে শংসাপত্র দেওয়ার আগে দু’দিন সময় নেওয়া হয়। এক বার একটি দেহ নিয়ে সমস্যা হওয়ায় পুলিশকে খবর দিয়ে দাহকাজ আটকানো হয়েছিল।’’ তবে শ্মশানে ডাক্তার কিংবা অন্য পরিকাঠামো নেই বলেই জানালেন প্রশান্তবাবু। কোভিডের সময়ে হাজরাতলা শ্মশানে প্রচুর দাহকাজ হয়েছে বলে খবর।

সূত্রের খবর, নিউ টাউনে শ্মশানের প্রকল্প আটকে যাওয়ার পরে হাজরাতলা শ্মশানটি পরিদর্শন করেছিল হিডকো। সেটির উন্নয়নের কথাবার্তা চালু হলেও পরে সবটাই থিতিয়ে যায়।

রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, হাজরাতলা শ্মশানের পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা হচ্ছে। তিনি জানান, ওই শ্মশান অনেকটা জায়গা জুড়ে। সেখানে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা হবে। তাপসবাবু বলেন, ‘‘ওই শ্মশানটির উন্নয়ন হলে রাজারহাট ও লাগোয়া জেলার মানুষের সুবিধা হবে। তাঁদের আর কলকাতার উপরে নির্ভর করতে হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন