অটোয় লাগাম কবে, নেই দিশা

এক ছাদের নীচে উপস্থিত ছিলেন পরিবহণ দফতর, লালবাজারের কর্তা এবং অটো ইউনিয়নের নেতারা। যাত্রী সুরক্ষার কথা বলে ১৪ পাতার ‘অটো নীতি’ প্রকাশ হল। কিন্তু বেপরোয়া অটোয় লাগাম পরানোর কী হবে? সে কথাগুলোই উহ্য থেকে গেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৮ ০২:৫৮
Share:

অবাধ্য: বিধি উড়িয়ে যেমন খুশি চলছে অটো। বুধবার, উল্টোডাঙায়। ছবি: শৌভিক দে

যা গর্জাল, তার ছিটেফোঁটাও বর্ষাল না।

Advertisement

দেড় বছর ধরে শহরের বেপরোয়া অটোকে পথে আনতে পরিবহণ দফতরের শীর্ষস্তরের কমিটির ঢক্কা নিনাদের পরে খাতায়-কলমে জুটল না কার্যত কিছুই। বুধবার রাজ্য সরকার প্রকাশিত নয়া অটো নীতিতে অন্তত অটোচালকদের দৌরাত্ম্য ঠেকানোর কোনও পদক্ষেপ দেখা গেল না।

এক ছাদের নীচে উপস্থিত ছিলেন পরিবহণ দফতর, লালবাজারের কর্তা এবং অটো ইউনিয়নের নেতারা। যাত্রী সুরক্ষার কথা বলে ১৪ পাতার ‘অটো নীতি’ প্রকাশ হল। কিন্তু বেপরোয়া অটোয় লাগাম পরানোর কী হবে? সে কথাগুলোই উহ্য থেকে গেল।

Advertisement

বুধবার নজরুল মঞ্চে শহরের পুলিশকর্তা, পরিবহণকর্তাদের সামনে নয়া অটো নীতি প্রকাশ করেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। শহরের অটো রুটগুলিকে চিহ্নিত করা, চালকদের নথিভুক্তকরণ— ইত্যাদি নানা কথাই রয়েছে সরকার প্রস্তাবিত অটো নীতির খসড়ায়। অটো ইউনিয়নের নেতাদের কাছেই সে বিষয়ে চূড়ান্ত পরামর্শও চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ইচ্ছে মতো যত্রতত্র বা ‘কাটা রুটে’ অটো না-চালানো, নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি যাত্রী না-তোলা, স্টিয়ারিং হাতে কানে মোবাইল না-রাখা, সফরের সময়ে গাঁকগাঁকিয়ে সাউন্ড সিস্টেম চালানো বা চোখধাঁধানো বাহারি এলইডি লাইট ব্যবহার না-করা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট সরকারি পদক্ষেপ দেখা যায়নি। হিতোপদেশের ঢঙে এ সবই করা যাবে না বলে দায় সেরেছে সরকার। অটোচালকদের হাই-সিকিওরিটি রেজিস্ট্রেশন প্লেট লাগাতেও বলা হয়েছে। কিন্তু কবে, কী ভাবে এই সব নিয়ম অটোচালকেরা কার্যকর করবেন তার কোনও সুস্পষ্ট দিশা অটো-নীতির খসড়ায় মেলেনি।

অটোর সাজে চোখধাঁধানো এলইডি আলো।

যেমন, যাত্রীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার এবং অটোর ভাড়া ইচ্ছে মতো না বাড়ানোর কথা অটোচালকদের মনে করানো হয়েছে। কিন্তু কী ভাবে ভাড়া নিয়ন্ত্রিত হবে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি। শুধু উৎসব-অনুষ্ঠানে আচমকা ভাড়া বাড়ানো উচিত নয় বলা হয়েছে। পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের একাংশের অবশ্য ব্যাখ্যা, সরকার সময় নিয়ে পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ করতে চায়। এক কর্তা বলেন, ‘‘অটোচালকদের ইউনিয়নগুলি রাজনীতি-প্রভাবিত। তাই হুটহাট ধরপাকড় শুরু করলে মুশকিল হতে পারে।’’ পরিবহণ দফতরের আর এক আধিকারিকের মতে, বেআইনি অটোগুলিকে চিহ্নিত করাও অটোর যথেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার একটি পদক্ষেপ।
তাঁর কথায়, “সরকারের কাছে বেআইনি অটোর সংখ্যা নিয়ে তথ্য এখনও স্পষ্ট নয়। তাই অটো নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করার আগে সে-বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া দরকার।’’

নয়া নীতিতে যা বলা হল

• বেআইনি অটোর রেজিস্ট্রেশনের জন্য ন্যূনতম সময়।

• পরিবহণ দফতরের অনুমতি ছাড়া অটো বিক্রি করতে পারবেন না ডিলারেরা।

• হাই সিকিওরিটি নম্বর প্লেট বাধ্যতামূলক।

• শহর কলকাতা এবং কলকাতা পিভিডি এলাকায় (ব্যারাকপুর, হাওড়া, বিধাননগর, আলিপুর) রুট এবং রুট পিছু অটো নির্দিষ্ট।

• ইচ্ছে মতো রুট নয়। অনুমতি নয় নতুন রুটেরও।

• কাটা রুটে নয়, অটো ছাড়তে হবে নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড থেকে।

• টু-স্ট্রোক (তেলে চলা) অটো চলবে না। শহরতলির সব অটো ফোর-স্ট্রোক (গ্যাস বা বিদ্যুৎচালিত) হতে হবে।

• কলকাতার ক্ষেত্রে ৪ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না।

• লাগানো যাবে না সাউন্ড সিস্টেম এবং এলইডি আলো।

• কলকাতার অটো আলাদা করতে নির্দিষ্ট রং।

• যাত্রীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার।

খসড়া অটো নীতিতে কলকাতা ছাড়াও বিধাননগর, ব্যারাকপুর, হাওড়া এবং আলিপুর এলাকার মোট ৪৭৫টি অটো রুটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই রুটগুলিতে সর্বোচ্চ কতগুলি অটো চলতে পারে সেই সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ১ জানুয়ারি ২০১৫-এর পর থেকে যে সব অটো রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াই চলছে তারা সবাই নথিভুক্তিকরণের সুযোগ পাবে বলে সরকারের তরফে এ দিন অটোচালকদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ দিন পরিবহণ দফতরের এক কর্তা ওই অনুষ্ঠানে বলেন, “অটো নথিভুক্ত না হওয়ায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি, চালকেরাও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বিমার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই সরকার বেআইনি অটোকে নথিভুক্তকরণের সুযোগ দেবে।” পরিবহণমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমাদের সরকার মানুষের পক্ষে। তাই সরকার অটোর নথিভুক্তকরণ, পারমিট এবং বিমার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।” কিন্তু শাসক দলের অটো ইউনিয়নের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘সরকারি খসড়ায় বেঁধে দেওয়া রুটেই বিস্তর গোলমাল রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন