অচল: রোগীবিহীন নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগ। —নিজস্ব চিত্র।
টেকনিশিয়ান নেই। তাঁদের নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য দফতর যে টাকা খরচ করে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে টেকনিশিয়ান পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, আপাতত বেতন-বিধি পরিবর্তনের বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে না। আর তাই সরকারি পরিকাঠামোয় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে চালু হওয়া রাজ্যের একমাত্র নিউক্লিয়ার মেডিসিন চিকিৎসা-কেন্দ্র ফের কবে কাজ শুরু করবে, সেটাই অনিশ্চিত। টেকনিশিয়ানের অভাবে গত পাঁচ বছর ধরে কার্যত অচল পড়ে রয়েছে এই বিভাগ।
সাধারণ মানুষের উপর থেকে চিকিৎসার খরচের বোঝা কমাতে সরকারি হাসপাতালে যাবতীয় চিকিৎসা পরিষেবা নিখরচায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতাল হিসেবে চিহ্নিত এসএসকেএমে অসংখ্য রোগীকে অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরের ল্যাবরেটরিতে গুণাগার দিতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। আট বছর আগে রাজ্যের একমাত্র এই নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগটি এসএসকেএমে চালু হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি ছিল, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার চেহারা বদলে দেবে এই বিভাগ। চালু হওয়ার পরে প্রথম কিছু দিন পরিষেবা মিলেওছিল। কিন্তু তার পরে সবটাই থমকে যায়। রোগীরা কেন পরিষেবা পাচ্ছেন না, সে প্রশ্নের উত্তর বিগত বছরগুলিতে পাওয়া যায়নি।
লিভারের অবস্থা কেমন, হাড়ের ঘনত্ব কতটা, হাড়ে ক্যানসার ছড়িয়েছে কি না, থাইরয়েড-ক্যানসার ঠিক কতটা ছড়িয়েছে, ইস্কিমিক হার্টের সমস্যা কতটা প্রবল ইত্যাদি বুঝতে ওই পরীক্ষা-কেন্দ্রটি চালু হয়েছিল। শুধু কলকাতা নয়, দূর-দূরান্তের জেলা থেকেও রোগীরা এখানে আসতেন পরীক্ষার জন্য। এখানে ডাক্তার রয়েছেন। রয়েছেন অন্য কর্মীরাও। কিন্তু যন্ত্র যাঁরা চালাবেন, সেই টেকনিশিয়ানের অভাবেই সব থমকে।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে গামা ক্যামেরা-সহ একাধিক আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। যেগুলি ঠিক মতো চালানোর জন্য উপযুক্ত টেকনিশিয়ান দরকার। কিন্তু গোটা রাজ্যেই এঁরা সংখ্যায় খুব কম। যে কোনও বেসরকারি কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের টেকনিশিয়ানের বেতন প্রায় ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে তাঁদের জন্যই বরাদ্দ মাত্র ২৫ হাজার টাকা। তাই ওই টাকায় চুক্তিভিত্তিক চাকরি করতে টেকনিশিয়ানরা রাজি হচ্ছেন না।
বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘কোটি কোটি টাকা দামের যন্ত্র স্রেফ পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে সরকার কোনও ব্যবস্থা না নিলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তখন টেকনিশিয়ান এলেও যন্ত্র আর কাজ করবে না।’’
হাসপাতাল সূত্রে খবর, নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে গোড়ায় দু’জন টেকনিশিয়ান ছিলেন। এক জন ২০১১ সালে চাকরি ছেড়ে দেন। তার পরে কোনও মতে এক জনকে দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছিল। কিন্তু তিনিও বছরখানেক পরে অন্যত্র চলে যাওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, এই ধরনের বিভাগে ন্যূনতম এক জন টেকনিশিয়ান না থাকলে বিভাগ চালানোর অনুমতি দেয় না ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র।
কেন বেতন বাড়ানো হচ্ছে না? এক কর্তার কথায়, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী, চিকিৎসকদের থেকে বেশি বেতন টেকনিশিয়ানদের দেওয়া যায় না। তার জেরে এই সমস্যা থেকে গিয়েছে। নিয়ম না পাল্টালে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে ফের বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।’’
এসএসকেএম হাসপাতালের অধিকর্তা অজয়কুমার রায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনে একাধিক বার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। সাড়া মেলেনি। তবে এই নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা হচ্ছে। নির্দেশ অনুযায়ী কাজ হবে।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রোগীদের এই পরিষেবা আমরা দেবই। দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
কিন্তু সেটা কী ভাবে? সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।