পরিষেবাই নয়, ডাক্তারের সম্পর্ক হোক পারিবারিক

শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং এডিনবরার ‘রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ান, অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ান অব ইন্ডিয়া’ আয়োজন করেছে চতুর্থ মেডিকন আন্তর্জাতিক সম্মেলন। রবিবার আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল, চিকিৎসক এবং রোগীর সম্পর্ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৫
Share:

ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছেন পারিবারিক চিকিৎসকেরা। আর তার জেরেই কি রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের অবক্ষয়ের সূত্রপাত?

Advertisement

শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং এডিনবরার ‘রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ান, অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ান অব ইন্ডিয়া’ আয়োজন করেছে চতুর্থ মেডিকন আন্তর্জাতিক সম্মেলন। রবিবার আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল, চিকিৎসক এবং রোগীর সম্পর্ক। সেখানেই এই সম্পর্কের অবনতির কারণ অনুসন্ধান করেন বক্তারা।

সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, রাজ্য জু়ড়ে বাড়ছে চিকিৎসক হেনস্থার ঘটনা। কখনও চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে আবার কখনও হাসপাতালের বিল বাড়ার জেরে তাঁদের হেনস্থার শিকার হতে হয়। প্রশ্ন ওঠে, রোগী-চিকিৎসকের সম্পর্ক কি এ ভাবেই শেষ হয়ে যাবে, নাকি এই অবনতি আটকানো সম্ভব?

Advertisement

আলোচনায় উঠে আসে, চিকিৎসকও যে পরিবারেরই অংশ, এই ধারণা ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে। যার জেরে রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের সমীকরণ পাল্টাচ্ছে। তবে, সম্পর্ক যে শেষের মুখে, এমনটা মানতে নারাজ অনেকেই। যেমন, শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল মেডিসিন এবং ইমারজেন্সির ডিরেক্টর চিকিৎসক সুভাষ টোডি জানান, ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী-চিকিৎসক সম্পর্ক ভাল। কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে। যেটুকু সমস্যা রয়েছে, সেটা মিটিয়ে ফেলা যাবে বলেই তাঁর মত।

আলোচনায় উঠে আসে, যে কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে সময় খুব জরুরি। তাই রোগীকে সময় দেওয়া চিকিৎসকের বিশেষ দায়িত্ব। কিন্তু এ দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা হল চিকিৎসকের অভাব। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় বিশাল সংখ্যক রোগীর চাপ সামলাতে হয়। তাই রোগী পিছু পর্যাপ্ত সময় দেওয়া অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। এ প্রসঙ্গে এ দিনের আলোচনার অন্যতম বক্তা প্রসার ভারতীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান জহর সরকার বলেন, জুনিয়র ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্মীদের দায়িত্ব নিতে হবে। অনেক সময়ে রোগীর চাপে চিকিৎসক সব কিছু বিশ্লেষণ করে বোঝাতে পারেন না পরিজনেদের। সেই দায়িত্ব নিতে হবে জুনিয়র চিকিৎসকদের। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসকের কাজে যাঁরা সহযোগিতা করছেন, তাঁরা জুনিয়র চিকিৎসক হতে পারেন কিংবা কোনও হাসপাতাল কর্মী। সহজ করে রোগীর পরিজনেদের রোগ সম্পর্কে জানাতে হবে তাঁদের। ধৈর্য্য ধরে শুনতে হবে রোগীর কথা। কিন্তু অনেক সময়ে তাঁদের ব্যবহার সন্তোষজনক হয় না। যা রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে।’’

চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্কের সমীকরণ যে শুধু দু’জনের মধ্যেই আটকে নেই, সে কথা মেনে নিচ্ছেন রাজ্যের ‘ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার’-এর অধিকর্তা কৃষ্ণেন্দু রায়। এ দিন তিনি জানান, প্রশাসনিক দিকটিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা জরুরি। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজরদারি জরুরি। স্নাতক স্তর থেকে চিকিৎসকদের পড়াশোনার পাশাপাশি ‘সফট স্কিল’-এর গুরুত্ব বোঝাতে হবে। অর্থাৎ, রোগীর পরিজনদের সঙ্গে কথা বলা, রোগ সম্পর্কে জানানো এমনকী, হঠাৎ কোনও রোগী মারা গেলে কী ভাবে তাঁর পরিজনেদের জানাতে হবে, সে বিষয়ে আলাদা দক্ষতা থাকা জরুরি।

কৃষ্ণেন্দুবাবুর সঙ্গে একমত দিল্লির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, রোগীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলা খুব জরুরি। অনেক সময়ে রোগী আশঙ্কা করেন, হাসপাতালে ভর্তি হলেই তাকে ঠকিয়ে টাকা নেওয়ার চেষ্টা চালানো হবে। চিকিৎসকই তাঁর কাছে আত্মবিশ্বাসের মূল ভিত্তি। তাই তিনি কথা বলে সেই ভয় কাটাতে পারেন।

আলোচনায় উঠে আসে, রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের অবনতি রুখতে এগিয়ে আসতে হবে চিকিৎসককেই। রোগীর পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠার মন্ত্র জানা থাকলেও ফের প্রাণ সঞ্চারিত হবে এই সম্পর্কে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন