তিন দিনে তিন হাসপাতাল ঘুরে বেরোল বাদাম

মঙ্গলবার ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে খেতে খেতে হঠাৎ চোখ-মুখ লাল হয়ে ওঠে হুগলির উত্তর রসুলপুরের অঞ্জনকুমার সামন্তের দেড় বছরের মেয়ে আরাধ্যার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫০
Share:

অস্ত্রোপচারের পরে আরাধ্যা সামন্ত। নিজস্ব চিত্র

তিন দিন ধরে তিনটি হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে সফল অস্ত্রোপচারের জেরে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারল বছর দেড়েকের খুদে।

Advertisement

মঙ্গলবার ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে খেতে খেতে হঠাৎ চোখ-মুখ লাল হয়ে ওঠে হুগলির উত্তর রসুলপুরের অঞ্জনকুমার সামন্তের দেড় বছরের মেয়ে আরাধ্যার। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি শুরু হয় কান্না। একরত্তি মেয়ে নিজের পছন্দের ছোলা-বাদাম ভাজা খেতে খেতে হঠাৎ কেন এমন করছে বুঝতে পারছিলেন না তনুজাদেবী। তখনই আরামবাগ হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে যান তাঁরা। ভর্তিও করা হয় তাকে।

কিছু দিন আগে নিউমোনিয়ার সমস্যায় ভুগেছিল সে। তাই প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসক জানান, নিউমোনিয়ার সমস্যা থেকেই হয়তো শ্বাসকষ্ট হচ্ছে আরাধ্যার। কিন্তু সেই অনুমান যে ঠিক নয় দ্রুত বুঝতে পারেন চিকিৎসক। এর পরেই তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়।

Advertisement

বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করার পরে আরাধ্যার এক্স রে-সহ প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। ধরা প়ড়ে তার শ্বাসনালীতে কিছু আটকে রয়েছে। বার কয়েক বমি করানোর চেষ্টা করলেও বমি হয় না। হাসপাতালের তরফে অঞ্জনবাবুকে জানানো হয়, শ্বাসনালীতে আটকে থাকা খাবার বার করার জন্য ব্রঙ্কোস্কপির পরিকাঠামো না থাকায় আরাধ্যাকে এনআরএসে রেফার করা হচ্ছে। বর্ধমান থেকে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে পৌঁছতে প্রায় রাত তিনটে বেজে যায়।

অঞ্জনবাবু জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে মেয়েকে নিয়ে এনআরএস হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন কথা বলার মতো কেউ নেই। ঘুমন্ত এক কর্মী জানান, সেখানে অস্ত্রোপচার হবে না। তাঁরা লিখে দেন এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। অঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘কলকাতায় পৌঁছনোর পরেও যখন শুনলাম অন্য হাসপাতালে ছুটতে হবে তখন হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছিল। মেয়েটা চোখ বন্ধ করে কোলে পড়েছিল। ভাবতে পারছিলাম না এর পরে কী হবে!’’

যদিও হাসপাতাল সূত্রে খবর, এনআরএস-এর ইএনটি বিভাগে ব্রঙ্কোস্কপি-র পরিকাঠামো রয়েছে। তা সত্ত্বেও শিশুটিকে কেন এসএসকেএমে রেফার করা হয় সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এনআরএস হাসপাতালের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন রোগীকে রেফার করা হল সেই রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। তবে সবটা খতিয়ে দেখব।’’

ভোর চারটে নাগাদ এসএসকেএমে পৌঁছয় আরাধ্যার পরিবার। ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকেরা প্রাথমিক পর্বের শারীরিক পরীক্ষা করেই জানান, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুস্থ হতে পারে আরাধ্যা। অঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু বলেছিলেন ঝুঁকি রয়েছে। তবে চেষ্টা করলে মেয়েটা বেঁচে যাবে। এটাই তখন অনেক ভরসা মনে হয়েছিল।’’

বৃহস্পতিবার সকাল ছ’টায় অস্ত্রোপচার হয় আরাধ্যার। কাটাছেঁড়া না করেই যন্ত্রের সাহায্যে শ্বাসনালী থেকে বের হয় আটকে থাকা বাদামের টুকরো। তনুজাদেবীর বলেন, ‘‘মেয়ে আবার মা বলে ডেকেছে। হাত-পা নেড়ে কথাও বলছে। তিন দিন পরেফের মেয়েটাকে আগের মতো লাগছে।’’

চিকিৎসকেরা জানান, আরাধ্যা বয়সে ছোট। তার উপরে কাটাছেঁড়া না করে প্রযুক্তির সাহায্যে শ্বাসনালীতে আটকে থাকা খাবার বের করা কঠিন। কারণ, ফুসফুস, শ্বাসনালীর মতো অঙ্গে সামান্য চোটও বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি ছিল। তবে, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। এখন সে সুস্থ।

এসএসকেএম হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত জানান, যে পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার হয়েছে সেটা খুব সূক্ষ্ম কাজ। সব জায়গায় হয়না বলেই হয়তো শিশুটিকে একাধিক হাসপাতাল রেফার করেছে। তবে, এই ধরণের অস্ত্রোপচারের প্রশিক্ষণ জেলার হাসপাতালগুলিকেও দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘ছ’মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণের কাজ শেষ হবে। ফলে শিশুদের এই ধরণের সমস্যা হলে পরিবারকে আর এত ছোটাছুটি করতে হবে না। রোগীর হয়রানি কমবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন