পরীক্ষার ফল প্রকাশে দেরি থেকে প্রশ্ন বিভ্রাট, অপরিচ্ছন্ন পরিসর থেকে শিক্ষকের আকাল। বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের। যদিও সব কিছু ছাপিয়ে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকানো। এ বার তাই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে ফের পথে নামছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে প্রাক্তন রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্যাম্পাসের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে রক্ষীর ভূমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছিল। এ বার সেই একই পথে হাঁটতে দেখা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক প্রশাসনিক অফিসারকে।
রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সপ্তাহের প্রতি দিন বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে নজরদারি চালাবেন প্রশাসনিক অফিসারেরা।’’ পাশাপাশি, পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের জন্য গলায় কার্ড ঝোলানোর ব্যবস্থা থাকবে। যাতে বহিরাগতদের সহজেই চিহ্নিত করা যায়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ে একাধিক বার অভিযোগ করেছেন পড়ুয়ারাই। একাধিক পদক্ষেপ করলেও কোনওটিই বাস্তবের মুখ দেখেনি। কিন্তু এ বার খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তিরস্কারের মুখে পড়ে নড়েচড়ে বসেছেন কর্তৃপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে বাস উদ্বোধন করতে এসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিরস্কারের সুরে মন্ত্রী সে দিন বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বহিরাগত কী করে ঢোকে? সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (প্রাক্তন রেজিস্ট্রার) আমলে কিছুটা কাজ শুরু হয়েছিল। তিনি চলে যাওয়ার পরে কাজ কেন থেমে গেল, সেটা বুঝতে পারলাম না। এটা দেখা দরকার।’’ মঞ্চে তখন বসে উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার। তার পরেই টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে তো নিরাপত্তারক্ষীদের কোনও ভূমিকাই চেখে পড়ে না। তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজনে নিরাপত্তারক্ষীর ওই সংস্থাকে ডেকে পাঠানো হবে। নিজেদের দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতে না পারলে তাদের সরে যাওয়ার পরামর্শ দেব। দরকারে অন্য সংস্থাকে দিয়ে নিরাপত্তার কাজ করানো হবে।’’
এর আগে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রতিটি ক্যাম্পাসের মূল ফটকে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। নজরদারি চালানো হবে খোদ রেজিস্ট্রারের ঘর থেকে। প্রাক্তন রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলেই উদ্যোগী হয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। সূত্রের খবর, অর্থাভাবে তখন তা করা যায়নি। এ বারে সিসিটিভি বসাতে বদ্ধপরিকর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু বহিরাগত নিয়ে কেন এত বিতর্ক। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের জুলাইতে কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের ভিতরে বহিরাগতদের ঢুকিয়ে শিক্ষককে মারধর করার অভিযোগ ওঠে তৎকালীন ছাত্র সংসদের একাংশের বিরুদ্ধে।
এ বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময়ে কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল মারামারি হয়। তাদের মধ্যে এক পক্ষ বহিরাগত ছিল। এমনকী, যে দিন শিক্ষামন্ত্রী বহিরাগতদের প্রসঙ্গ তুলে কর্তৃপক্ষকে তিরস্কার করেন, তার কিছু পরেই বিভিন্ন কলেজের পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন মন্ত্রী। সে কারণেই রেজিস্ট্রার বলেন, ‘‘পাকাপাকি ভাবে এ সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক পদক্ষেপ করছি।’’