গঙ্গায় ‘ঝাঁপ’ বৃদ্ধ দম্পতির, মৃত স্বামী

শুক্রবার সকালের এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বারাসতের রথতলার বাসিন্দা, তাপসকুমার দত্ত (৭২) নামে ওই বৃদ্ধের। তাঁর স্ত্রী হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৭
Share:

প্রতীকী চিত্র।

হাওড়া থেকে বাগবাজারের দিকে যাচ্ছিল যাত্রী ভর্তি লঞ্চটি। আহিরীটোলা ঘাটের কাছে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিলেন এক প্রবীণ দম্পতি। শুক্রবার সকালের এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বারাসতের রথতলার বাসিন্দা, তাপসকুমার দত্ত (৭২) নামে ওই বৃদ্ধের। তাঁর স্ত্রী হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকাল ৯টা ১০ নাগাদ লঞ্চ থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন ওই দম্পতি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের বাঁচাতে জলে ঝাঁপান লঞ্চের এক কর্মী। তিনি তাপসবাবুকে উদ্ধার করেন। পিছনে আসা আর একটি লঞ্চের তিন কর্মী উদ্ধার করেন বছর পঁয়ষট্টির ওই বৃদ্ধাকে। এর পরে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাপসবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

কেন ঝাঁপ দিলেন ওই দম্পতি? হাসপাতালে শুয়ে তাপসবাবুর স্ত্রী জানান, পারিবারিক অশান্তি ও আর্থিক অনটনের জেরেই তাঁরা জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। তাপসবাবু সিইএসসি-র অবসরপ্রাপ্ত ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তাঁর স্ত্রী একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াতেন। তিনি পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, একমাত্র ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে তাঁদের বনিবনা হত না। তাই ছেলে তাঁদের সঙ্গে থাকতেন না। কয়েক মাস ধরে ছেলে তাঁদের টাকাও দিতেন না বলে অভিযোগ। এক রকম বাধ্য হয়ে অশান্তি ও আর্থিক অনটন থেকে মুক্তি পেতেই এই সিদ্ধান্ত নেন স্বামী-স্ত্রী।

Advertisement

ওই বৃদ্ধার কথায়, ‘‘আত্মহত্যার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। তাই লঞ্চে উঠি। কিন্তু আমার স্বামী আমাকে ফেলে চলে গেলেন। ওঁকে দাহ করার পয়সাটুকুও নেই আমার।’’ পুলিশ জানিয়েছে, বারাসত থেকে দু’দিন আগে হাওড়ার একটি হোটেলে এসে ওঠেন ওই দম্পতি। এ দিন সকালে হোটেল ছেড়ে বেরোনোর সময়েও টাকা মেটাতে পারেননি। তাই তাঁদের জিনিসপত্র আটকে রাখেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। এর পরে লঞ্চে উঠে জলে ঝাঁপান তাঁরা।

এ দিন দুপুরে বাবা-মার খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন ওই দম্পতির ছেলে মানস দত্ত। তাঁর দাবি, গত অক্টোবরে কেন্দ্রীয় সরকার পোষিত একটি সংস্থায় চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু নানা জটিলতায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বেতনের টাকা তুলতে পারছেন না তিনি। ফলে তিনিও আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। মানসবাবুর দাবি, সম্প্রতি স্ত্রীর সঙ্গেও বনিবনা হচ্ছিল না তাঁর। তাঁর কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবারও ফোনে বাবা-মাকে বলেছিলাম, কোনও ভাবে টাকার জোগাড় করে ফেলব। চিন্তা করো না। কিন্তু ওঁরা যে এমন কাণ্ড করবেন, ভাবতে পারিনি।’’ তদন্তে নেমে গোলাবাড়ি থানার পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, গোটা ঘটনায় দম্পতির ছেলের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন