প্রতীকী ছবি।
গলার নলি ফালাফালা করে খুন করা হয় বৃদ্ধকে। কোনও নগদ, জিনিসপত্র খোয়া যায়নি। রান্নাঘরের একটি বঁটি শুধু উধাও। সম্ভবত সেটাই খুনের অস্ত্র। খুনি জানত, বঁটি কোথায় থাকে। জোর করে ঢোকা নয়, দোতলা বাড়িতে একা থাকা বৃদ্ধই তাকে দরজা খুলে দেন বলে বোঝা গিয়েছিল।
আপাতদৃষ্টিতে সূত্র নেই, খুনের মোটিভও বোঝা যাচ্ছে না। একেবারে আদর্শ খুনের মামলা, যেখানে ‘সোর্স ইনফরমেশন’ তেমন কাজ করবে না, গোয়েন্দাকে বার করতে হবে সূত্র। ‘বেণীসংহার’-এ যেমন করেছিলেন ব্যোমকেশ বক্সী।
গল্পে ব্যবসায়ী বেণীমাধব চক্রবর্তী, আর বাস্তবে নিহত কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অমল গুপ্ত (৭৪)। ২০১৬-র ১৯ জানুয়ারি। গল্পে সত্যান্বেষী সাফল্য পেলেও বাস্তবে হাওড়ার রামরাজাতলার বকুলতলা লেনে খুনের ঘটনার সওয়া বছর পেরোলেও সাফল্য পায়নি সিআইডি।
এতটা সময়ে কিনারা করতে না পারলে সাধারণত মামলার ফাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সিআইডি নতুন ভাবে তদন্ত শুরু করেছে।
বিপত্নীক অমলবাবুর সঙ্গে তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছাড়া আর যে বন্ধু ও আত্মীয়ের যোগাযোগ ছিল, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সূত্র পাওয়ার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
তাঁরা নিশ্চিত, পরিচিত বা ঘনিষ্ঠ কেউ অমলবাবুর সঙ্গে পুরনো বিরোধের জেরে তাঁকে খুন করে। সেই বিরোধের কথা বৃদ্ধ কথায় কথায় কাউকে জানিয়েছিলেন কি না, সেটা বার করার চেষ্টা করছে সিআইডি।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ঘটনাস্থল ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হওয়ার পরে মামলা তাঁদের হাতে আসে। যেখানে বৃদ্ধের রক্তাক্ত দেহ মিলেছিল, সেখান থেকে কোনও সূত্র মিলত বলে সিআইডি-র ধারণা।
কারণ খুনি বঁটি দিয়ে আঘাত করার সময়ে অমলবাবু যে ঠেকাতে গিয়েছিলেন, সেটা তাঁর হাতের ক্ষত থেকে বোঝা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে খুনির কাপড়ের অংশের মতো সূত্র ঘরেই থাকার কথা।
গোয়েন্দারা আরও বলছেন, বৃদ্ধের গলা কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে দেওয়ালে পড়ে। কাজেই খুনির গায়েও রক্ত লাগার কথা। রামরাজাতলার ওই ঘিঞ্জি তল্লাট থেকে রক্তমাখা অবস্থায় বেরোতে গেলে কারও নজরে পড়ত। তদন্তকারীদের মতে, খুনি ওই বাড়ির শৌচাগার ব্যবহার করে সাফসুতরো হয়েছিল। যা অপরিচিত বা ওই বাড়ির সঙ্গে সড়গড় নয়, তেমন কারও পক্ষে করা মুশকিল।
গোয়েন্দাদের অভিমত, খুনের পরেই পুলিশ কুকুর দিয়ে ঘটনাস্থল শোঁকানো উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। কুকুর গন্ধ শুঁকে কিছু দূর যেত, তাতে খুনি কোন রাস্তা ধরে পালিয়েছে, সেই সম্পর্কে আভাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকত। সিআইডি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘এটা সে অর্থে হাই-প্রোফাইল মামলা নয়। তবে এমন মামলা যেখানে আমাদের হাতে কোনও সূত্র নেই। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। তাই, নতুন উদ্যমে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।’’