যৌন হেনস্থা, ৩ বছর জেল সত্তরোর্ধ্বের

অভিযোগকারিণী কিশোরীও আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়েছে। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে, কী ভাবে নানা ভাবে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে তাকে। হেনস্থার পরে প্রথমে তার মুখ বন্ধ রাখার জন্য চেষ্টা করা হয়। মেয়েটিকে হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩৬
Share:

সোমবার উত্তরবঙ্গ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে।

বাড়িতে সারা ক্ষণের কিশোরী পরিচারিকাকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে ৭২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারকে জেলে পাঠালেন বিচারক। পকসো আইনে মামলা করা হলেও বয়সের জন্য বৃদ্ধ অভিযুক্তকে অবশ্য কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। পকসো ৮ নম্বর ধারায় পাঁচ বছরের জায়গায় ন্যূনতম তিন বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার শিয়ালদহের পকসো বিশেষ আদালতে বিচারক জীমূতবাহন বিশ্বাস এই নির্দেশ দেন।

Advertisement

গত ৩১ অক্টোবর অভিযোগ দায়ের করার ২০ দিনের মধ্যেই এ দিন তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শেষে সাজা ঘোষণা করেছেন বিচারক। অভিযুক্ত তপন ভট্টাচার্যের তিন বছরের জেল হয়েছে। সেই সঙ্গে ২০ হাজার টাকা জরিমানা। জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাস সংশোধনাগারে থাকতে হবে অভিযুক্তকে।

ফুলবাগান থানা এলাকার বাসিন্দা তপন ভট্টাচার্যের বাড়িতে স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ রয়েছেন। অভিযুক্তের ছেলে-বৌমার সন্তানের দেখভালের জন্যই ১৪ বছরের কিশোরী পরিচারিকাকে বাড়িতে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কাটোয়া থানা এলাকার গ্রামের বাসিন্দা মেয়েটি দরিদ্র ঘর থেকে এসেছিল। তার বাবা কেরলে দিনমজুরের কাজ করেন। তিন মাস আগে মেয়েটি তপনবাবুর বাড়িতে কাজ শুরু করে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। জোর করে মেয়েটির গোপন অঙ্গে স্পর্শ করা বা স্নান করার সময়ে লুকিয়ে-চুরিয়ে মেয়েটিকে দেখার অভিযোগ উঠেছে এই তপনবাবুর বিরুদ্ধেই। পকসো আইনের ৮ নম্বর ধারায় যৌন হেনস্থার অভিযোগ ছাড়াও ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪এ এবং ৩৫৪সি ধারায় মেয়েটির সম্ভ্রমহানির অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। গত ৩১ অক্টোবর ফুলবাগান থানায় জনৈক প্রতিবেশী মহিলার সাহায্যে পুলিশের দ্বারস্থ হয় মেয়েটি। পরের দিনই অভিযুক্ত তপনবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০১২ সাল থেকে চালু প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস (পকসো) আইন যুক্ত হওয়ায় মামলাটি আরও জোরালো হয়। চার্জশিট পেশ করে মামলার নিষ্পত্তি ঘটল কয়েক দিনের মধ্যেই।

Advertisement

পুলিশের বক্তব্য, এ সব ক্ষেত্রে বাড়ির নাবালিকা পরিচারিকারা সাধারণত মুখ খুলতে চায় না। এ যাত্রায় তেমনটা ঘটেনি। ফুলবাগান থানার সাব-ইনস্পেক্টর বর্ণা ঘোষাল দ্রুত তদন্ত শুরু করেন। প্রতিবেশী এক মহিলা নামমাত্র শিক্ষিত মেয়েটিকে অভিযোগ লিখতে সাহায্য করেছিলেন। মেয়েটির মা-ও কাটোয়া থেকে এসে সাক্ষী দিয়েছেন। তপনবাবুর প্রতিবেশীদের একাংশও মেয়েটির পাশেই ছিলেন। অভিযুক্তের পরিবার অবশ্য তপনবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ মানতে চায়নি। কিন্তু পুলিশি তদন্তে এবং বিভিন্ন সাক্ষীর বয়ান খতিয়ে দেখেন বিচারক। পকসো আদালতের বিশেষ সরকারি আইনজীবী বিবেক শর্মা বলেন, ‘‘দ্রুত মামলাটির নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি ছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তি সমাজে প্রভাবশালী। হতদরিদ্র ঘরের মেয়েটির জন্য সুবিচার চাওয়ার পথ সব দিক দিয়ে সোজা ছিল না।’’

অভিযোগকারিণী কিশোরীও আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়েছে। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে, কী ভাবে নানা ভাবে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে তাকে। হেনস্থার পরে প্রথমে তার মুখ বন্ধ রাখার জন্য চেষ্টা করা হয়। মেয়েটিকে হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। জনৈক প্রতিবেশী পাশে দাঁড়াতেই মেয়েটি পুলিশের দ্বারস্থ হয়। বিচারক জীমূতবাহন বিশ্বাস পরিচারিকাকে গৃহকর্তার যৌন নির্যাতনের এই ঘটনাটি গুরুতর বিশ্বাসভঙ্গের বলে তাঁর রায়ে মন্তব্য করেছেন। এই ধরনের ঘটনা চলতে থাকলে গৃহ পরিচারিকার নিরাপত্তা ও ভরসার জায়গাগুলি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলেও রায়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement