সেতুর ফুটপাথে মৃত্যুফাঁদ, গলে পড়ে জখম বৃদ্ধ

সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের ফুটপাথে একটা সিমেন্টের স্ল্যাব ভেঙে পড়ে থাকলেও তা সারানো হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। সেই ভাঙা অংশ দিয়ে গলে প্রায় ৩০ ফুট নীচে পড়ে গেলেন এক বৃদ্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০০:০৮
Share:

এখানেই ঘটে দুর্ঘটনা। বুধবার, হাওড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের ফুটপাথে একটা সিমেন্টের স্ল্যাব ভেঙে পড়ে থাকলেও তা সারানো হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। সেই ভাঙা অংশ দিয়ে গলে প্রায় ৩০ ফুট নীচে পড়ে গেলেন এক বৃদ্ধ। বুধবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার জিটি রোডের উপরে বাঙালবাবু ব্রিজের সামনে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সত্তরের অজ্ঞাতপরিচয় ওই ব্যক্তিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আর এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে নয়ের দশকের একটি ঘটনাকে। মায়ের সঙ্গে যাওয়ার সময়ে গিরিশ পার্কের কাছে খোলা ম্যানহোলে পড়ে গিয়েছিল একটি শিশু।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সন্ধ্যায় ফাঁসিতলা মোড় থেকে হেঁটে রাস্তার বাঁ দিকের ফুটপাথ ধরে বাঙালবাবুর ব্রিজের দিকে যাচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধ। সেতুর কাছে সেলস্ ট্যাক্স বিল্ডিং-এর সামনে একটা বড় গাছ থাকায় রাস্তায় আলো থাকলেও জায়গাটা কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। আর সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাতেই ছিল ফুটপাথের সিমেন্টের স্ল্যাব ভেঙে তৈরি হওয়া একটা চার বর্গফুটের মৃত্যু-ফাঁদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই বৃদ্ধ সম্ভবত অন্ধকারে ওই বড় গর্তটি দেখতে না পেয়ে সেখান দিয়ে গলে একেবারে সেতুর নীচে পড়ে যান।

যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটে, সেখান থেকে কিছুটা দূরেই তখন ছিলেন এক ফল বিক্রেতা মহম্মদ আক্রম। তিনি বলেন, ‘‘আমি ওই বৃদ্ধকে ওই ভাবে আসতে চিৎকার করে সাবধান করেছিলাম। কিন্তু তার আগেই তিনি ওই গর্ত দিয়ে পড়ে যান।’’ আক্রম জানান, এর পরে তিনিই চিৎকার করে লোকজনকে জানান ঘটনাটা।

Advertisement

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই বৃদ্ধ পড়েছিলেন প্রায় ৩০ ফুট নীচে সেলস্ ট্যাক্স অফিসের সিমেন্টের চাতালে। সেতুর উপর থেকেই লোকজন নীচে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে নিয়ে যান হাওড়া জেলা হাসপাতালে। সেখানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেতুটির দীর্ঘদিন ধরেই কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। এর ফুটপাথের সিমেন্টের স্ল্যাব প্রায়ই ভেঙে পড়ে থাকে। সেতুতে আলো থাকে না। রেল বা প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোনও ফল হয় না।

প্রশ্ন হল, সেতুর ফুটপাথে এত বড় গর্ত হয়ে থাকলেও সারানো হয়নি কেন? সারানোর দায়িত্বই বা কার? হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ঘটনাটা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। সেতুর ফুটপাথ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। তবে রেলও দায় এড়াতে পারে না। এর আগে পুরসভা সেতুতে রং করতে গেলে রেল আরপিএফ দিয়ে তাড়া করে। এখন কী বলবে?’’

হাওড়ার ডিআরএম আর বদ্রীনারায়ণের দাবি, ‘‘সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রেলের। কিন্তু ফুটপাথ রাজ্য পূর্ত দফতরের। আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের ফুটপাথ সারানোর জন্য বলব।’’

কিন্তু সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের ফুটপাথের দায়িত্ব যে সরকারি দফতরের উপরে, সেই সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা এ ব্যাপারে কথা বলতে অস্বীকার করেন। যোগাযোগ করা হয় পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আমি কার্শিয়াংয়ে আছি। ফিরে গিয়ে আমার দফতরের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন