বৃদ্ধের গাড়ির ধাক্কায় মৃত বৃদ্ধা, জখম দুই

গাড়ি যিনি চালাচ্ছিলেন, তাঁর বয়স ৭৭ বছর। পাশে বসে ৭৫ বছরের স্ত্রী। সেই পুরনো মারুতি জেন-এর ধাক্কায় যে বৃদ্ধা মারা গেলেন, তাঁর বয়স ৭৮ বছর। আর গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত অবস্থায় বাকি যে দু’জন হাসপাতালে ভর্তি হলেন, তাঁদের এক জনের বয়স ৬৮, অন্য জনের ৬৫।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০০:২৬
Share:

এখানেই ঘটে দুর্ঘটনা। (ইনসেটে) জখমদের এক জন কৃষ্ণা সরকার এবং সেই গাড়িটি। ছবি:নিজস্ব চিত্র

গাড়ি যিনি চালাচ্ছিলেন, তাঁর বয়স ৭৭ বছর। পাশে বসে ৭৫ বছরের স্ত্রী। সেই পুরনো মারুতি জেন-এর ধাক্কায় যে বৃদ্ধা মারা গেলেন, তাঁর বয়স ৭৮ বছর। আর গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত অবস্থায় বাকি যে দু’জন হাসপাতালে ভর্তি হলেন, তাঁদের এক জনের বয়স ৬৮, অন্য জনের ৬৫।

Advertisement

বৃহস্পতিবার দুপুরে গড়িয়াহাট মোড়ের কাছে এক শপিং মলের মুখে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন বয়স্ক মানুষদের এই দলটি। পুলিশ জানায়, যিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন সেই বিজয়প্রসাদ বসু-ও আহত। তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী নীহার বসু। সন্তোষপুরের ইস্ট রোডে ওই দম্পতির বাড়ি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বিজয়বাবুর গাড়ির ধাক্কায় যিনি মারা গিয়েছেন, সেই সন্ধ্যা সরকার বিধবা। ছেলেমেয়ে নেই। পুলিশ জানিয়েছে, রিজেন্ট পার্ক এলাকার নস্করপাড়ার বাড়িতে ভাসুরের ছেলেরাই তাঁকে দেখভাল করতেন। এ দিনও ঘটনার সময়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভাসুরের ছেলে গোরাচাঁদ সরকার ও তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা সরকার। বিজয়বাবুর গাড়ির ধাক্কায় তাঁরা দু’জনেই গুরুতর আহত। তাঁদের দু’জনকেও দক্ষিণ কলকাতার ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বিজয়বাবুর গাড়ির সামনে আচমকা ওই তিন জন চলে এলে ব্রেক কষার পরিবর্তে ভুল করে তিনি অ্যাক্সিলারেটরে চাপ দেন। গাড়ি প্রায় লাফিয়ে সোজা এসে ধাক্কা দেয় সামনে থাকা সন্ধ্যাদেবীকে। ছিটকে পড়েন তিনি। গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে পড়েন গোরাচাঁদবাবু ও কৃষ্ণাদেবীও। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সন্ধ্যাদেবীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ওই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এ দিন কৃষ্ণাদেবী আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘সবে মাত্র ওই শপিংমলের ভিতরে ঢুকেছি, তখনই পিছন থেকে মেরুন রঙের একটি গাড়ি হুড়মুড়িয়ে আমাদের উপরে এসে পড়ে। আমরা সকলেই ছিটকে পড়ি। দেখি আমার স্বামী ও কাকিমা দূরে গিয়ে পড়েছেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে তাঁদের শরীর। কোনও রকমে মুখে হাত দিয়ে দেখি, আমার মুখ থেকেও রক্ত পড়ছে। এর পরেই অচৈতন্য হয়ে পড়ি।’’

ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুপুরে সন্ধ্যাদেবীকে চোখের ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন কৃষ্ণাদেবী। গড়িয়াহাটের ওই মলের একটি তলায় চোখের চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। গড়িয়াহাট উড়ালপুলের নীচে গাড়ি পার্ক করেন তাঁরা। সেখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে ওই চিকিৎসাকেন্দ্র। কৃষ্ণাদেবী এ দিন জানান, বৃদ্ধা কাকিমা সন্ধ্যাদেবী সেখানে হেঁটে যেতে পারবেন কি না জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি পারবেন বলেই জানান।

পায়ে হেঁটে গড়িয়াহাটের ভিড় পেরিয়ে তিন জন যখন ওই শপিং মলে ঢুকছিলেন, তখন প্রায় দুপুর সাড়ে তিনটে। বিজয়বাবুও ঠিক সেই সময়ে গাড়ি নিয়ে ঢুকছিলেন শপিং মলে। প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে পুলিশ জেনেছে, শপিং মলে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে গেলে প্রথমে একটু উপর দিকে উঠতে হয়, তার পরে ঢালু বেয়ে নেমে পার্কিং লটে যেতে হয়। বিজয়বাবু এ দিন পার্কিং লটের দিকে যাবেন বলে ঢালু বেয়ে উপরের দিকে ওঠেন। এর পরে ঢালু বেয়ে নামার সময়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, সেই সময়ে গাড়ির গতি একটু বেশিই ছিল। ঢালু দিয়ে নেমে আসার সময়ে প্রথমেই ওই গাড়িটি বাঁ দিকের দেওয়ালে ধাক্কা মারে, সেখান থেকে সামলে নিয়ে ওই একই গতিতে ডান দিকে ফিরতেই সামনে পড়ে যান সন্ধ্যাদেবী ও বাকি দু’জন। লাফিয়ে উঠে গাড়ি ধাক্কা মারে তাঁদের। তিন জন তিন দিকে ছিটকে পড়েন। গাড়িটি না থেমে এর পরে বাঁ দিকের একটি দেওয়ালে ধাক্কা মারে।

গড়িয়াহাট মোড়ের কাছেই অনেক পুলিশকর্মী থাকেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন তাঁরা। চার জনকে উদ্ধার করে ঢাকুরিয়ার ওই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত বলে ঘোষণা করা হয় সন্ধ্যাদেবীকে।

বিজয়বাবুর ছেলে শান্তনু বসু এ দিন জানান, তাঁর বাবা, প্রাক্তন সরকারি অফিসার বিজয়বাবু বহু দিন ধরেই গাড়ি চালাচ্ছেন। তাঁর মাথায় চোট লেগেছে। মা বাড়িতে রয়েছেন। তাঁর পায়ে চোট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন