নিহত বৃদ্ধের বাড়িতে পুলিশ। নিউ আলিপুরে। ফাইল চিত্র।
নিউ আলিপুরের বৃদ্ধ মলয় মুখোপাধ্যায়ের হত্যাকাণ্ডে আততায়ীর সংখ্যা তিন বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। কারণ, ফরেন্সিক পরীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী মলয়বাবুর ঘর ও সিঁড়িতে তিন রকমের পায়ের ছাপ মিলেছে বলে দাবি লালবাজারের কর্তাদের।
তদন্তকারীরা জানান, কাকদ্বীপ এলাকার মোটরভ্যান চালক সুশান্ত ভাণ্ডারীর কাছ থেকে মলয়বাবুর একটি মোবাইল উদ্ধারের পরে তাঁরা এক প্রকার নিশ্চিত যে, সুশান্তকে যারা ওই ফোনটি গছায়, তারাই ওই খুনে জড়িত বা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। কিন্তু তৃতীয় ব্যক্তিটি কে?
পুলিশ সূত্রের খবর, মলয়বাবুর বাড়ির লোহার সিঁড়ি দিয়ে উঠে জাল কাটার পরে ভিতরের কাঠের দরজা ও কোল্যাপসিবল গেট ভাঙতে না-পেরে সামনের দরজার ‘হ্যাচবোল্ট’ ভেঙে বাড়িতে ঢুকেছিল তিন দুষ্কৃতী। লুঠপাট চালানোর পরে বাড়ির মূল গেট দিয়েই চম্পট
দেয় তারা।
তদন্তকারীদের মতে, মুখোপাধ্যায় পরিবারের অতি পরিচিত কারও যোগসাজশেই ওই হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু সেটা কে বা কারা, তা স্পষ্ট নয়। রাতের আয়া কবিতার কথায় একের পর এক অসঙ্গতি সামনে এসেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থানার বেদবেড়িয়ার দাঁড়িয়াহাট গ্রামের বাসিন্দা, কবিতার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কেও দফায় দফায় জেরা করেছেন তদন্তকারীরা। ওই আত্মীয় মলয়বাবুর বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তদন্তকারীরা জানান, ঘটনার পরে ওই ব্যক্তি নিজের মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলেন। এমনকী, সিম-ও টুকরো টুকরো করে ভাঙা হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, সাংসারিক অশান্তির জেরে মানসিক অবসাদে ফোনটি ভেঙেছেন তিনি। কিন্তু সিম টুকরো করা হল কেন? তথ্য গায়েব করতে? খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: শ্রাবন্তীর অভিমান জানত শুধু তাঁর ডায়েরি
নিজের ফোন ভাঙার পরেও ওই ব্যক্তি বিভিন্ন নম্বর থেকে কবিতার বিভিন্ন আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার কয়েক দিন আগেও মলয়বাবুর বাড়িতে যান তিনি।
তদন্তকারীদের ধারণা, এ কাজ কোনও পেশাদার খুনির নয়। সম্ভবত, লুঠপাটই ছিল মূল উদ্দেশ্য। লুঠের সময়ে আচমকা মলয়বাবুর ঘুম ভেঙে যাওয়াতেই তাঁকে খুন করে ফেলা হয়েছে বলে অনুমান। লুঠপাটের আগে দুষ্কৃতীরা মদ্যপানও করেছিল। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বাড়ির ভিতরে বিয়ারের খালি দু’টি বোতল মিলেছে। কিন্তু খুনি যে পেশাদার নন, তা কী ভাবে বুঝল পুলিশ?
তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, মলয়বাবুর ঘরের একপাশে মলত্যাগ করা হয়েছে। অনেক সময়ে প্রবল মানসিক চাপ তৈরি হলে কেউ কেউ মলত্যাগ করে ফেলেন। মলয়বাবু শারীরিক ভাবে সক্ষম ছিলেন। তিনি ঘরে মলত্যাগ করবেন না। দুষ্কৃতীদের মধ্যে কোনও এক জনই ওই কাজ করেছে।
তদন্তকারীদের ব্যাখ্যা, মলয়বাবুকে খুনের পরে হয়তো মানসিক চাপেই কোনও এক দুষ্কৃতী ওই কাজ করে ফেলে। পুলিশের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, লুঠপাটের আগে মদ্যপানের অভ্যাস বাংলাদশি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুষ্কৃতীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপিতে ডিসি (সাউথ) প্রবীণ ত্রিপাঠী নিজে কাকদ্বীপের সুশান্ত ভাণ্ডারীকে এক প্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সুশান্তের বয়ান অনুযায়ী কাকদ্বীপ, নামখানা ও ফ্রেজারগঞ্জ এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সমস্ত থানায় সুশান্তের বয়ান অনুযায়ী আঁকানো দুষ্কৃতীদের ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।