খোলা নর্দমায় পড়ে মৃত শিশু, ক্ষুব্ধ পাড়া

পুলিশ জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ওই বস্তির বাসিন্দা উমেশ তুরিয়া ও সোনি তুরিয়ার দুই মেয়ে ঘরের বাইরের ফাঁকা একচিলতে জায়গা খেলছিল। এক সময়ে বছর চারেকের বড় মেয়ে ঘরে ঢুকে গেলেও ছোট মেয়ে আলিয়া সেখানেই বসে ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫২
Share:

অঘটন: আলিয়া তুরিয়া এই নর্দমাতেই পড়ে যায় শিশুটি (ডান দিকে)। শনিবার, গরাগাছায়। নিজস্ব চিত্র

খোলা নর্দমায় পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল দেড় বছরের এক শিশুকন্যার। শিশুটির নাম আলিয়া তুরিয়া। শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে তারাতলা থানা এলাকার গরাগাছা রোডে। ওই দুর্ঘটনার পরেই প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতা শহরে বিপজ্জনক ভাবে খোলা নর্দমা রয়েছে কেন? পুরসভা সূত্রের খবর, পুরনো কলকাতায় খোলা নর্দমা না থাকলেও সংযোজিত এলাকার বহু জায়গায় এখনও খোলা নর্দমা রয়েছে। তা থেকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তেমনই এ ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।

Advertisement

কী ঘটেছিল এ দিন?

আরও পড়ুন: বাঙুরে যুবকের মৃত্যু, প্রশ্নে রেফার-সংস্কৃতি

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ওই বস্তির বাসিন্দা উমেশ তুরিয়া ও সোনি তুরিয়ার দুই মেয়ে ঘরের বাইরের ফাঁকা একচিলতে জায়গা খেলছিল। এক সময়ে বছর চারেকের বড় মেয়ে ঘরে ঢুকে গেলেও ছোট মেয়ে আলিয়া সেখানেই বসে ছিল। ঘণ্টাখানেক পরে ছোট মেয়েকে দেখতে না পেয়ে বাইরে এসে সোনি দেখেন, সেখানে কেউ নেই। পাশের আত্মীয়ের বাড়িতে মেয়ে রয়েছে ভেবে সেখানে খোঁজ করলে জানতে পারেন, সে সেখানেও যায়নি। মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে আশপাশের বাড়িতেও যান তিনি। কিন্তু কোথাও খোঁজ মেলেনি তার।

শোকার্ত মা সোনি

এর পরে ১০টা ২০ নাগাদ পড়শিরা দেখেন, শিশুটি বাড়ির কয়েক হাত দূরে নর্দমায় ভাসছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে ছোট্ট শিশুটির দেহ নিথর হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, মারা গিয়েছে সে। খবরটি পুরো বস্তিতে ছড়াতেই লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, শিশুটির মা, ঠাকুরমা-সহ আত্মীস্বজনেরা ঘরের বাইরে বসে রয়েছেন। মায়ের কোল ঘেঁষে বসে আছে মৃত শিশুটির চার বছরের দিদি। আর পাশেই এক জনের কোলে তাদের পাঁচ মাসের ভাই।

মৃত শিশুটির ঠাকুরমা ছায়া তুরিয়া ও বাকি আত্মীয়দের অভিযোগ, নর্দমাটি ঢেকে দেওয়ার জন্য অনেক বার স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তাঁদের আরও অভিযোগ, একটু বৃষ্টি পড়লেই জল জমে যায়। তখন কোথায় রাস্তা আর কোথায় নর্দমা, বুঝতে পারা যায় না। কিন্তু সব জেনেও পুরসভা কিংবা কাউন্সিলর কোনও ব্যবস্থাই নেননি। কারণ, এখানেও সেই সীমানার গল্প। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই নর্দমার এক দিক ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন আর অপর দিকটি ৮০ নম্বর ওয়ার্ডে পড়ে। ফলে কে কাজ করবে, তা নিয়ে দুই ওয়ার্ডের টানাপড়েনে ভুগছেন বস্তির বাসিন্দারা।

পুরসভার নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ তারক সিংহ জানান, ওই নর্দমাটি বহু পুরনো। অনেক জায়গায় স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে বাস করছেন বাসিন্দারা। মাঝে মাঝে ফাঁক রয়েছে। পুরসভার লোকজন যন্ত্র বসিয়ে নর্দমাটি মাঝে মাঝে পরিষ্কার করেন। স্থায়ী ভাবে সেটি ঢাকা দিয়ে ম্যানহোল করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু স্থানীয় সমস্যায় তা হয়ে ওঠেনি।

অন্য দিকে, ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পুরসভার আর এক মেয়র পারিষদ রাম পিয়ারি রামের দাবি, ওই নর্দমায় সাধারণত জল জমে থাকে না। তা বেরিয়ে যায়। কিন্তু মেট্রোর কাজের জন্য ডায়মন্ড হারবার রোডের নর্দমাগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে গরাগাছা রোডের এই নর্দমায় জল জমে থাকছে। আর তাতেই এ দিন দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। অন্য সময়ে নর্দমাটি শুকনোই থাকে বলে তাঁর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন