শোভন চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
হইচই যে হবেই, তা জানতেন তৃণমূল কাউন্সিলরেরা। তাঁরা কোমর বেঁধেই এসেছিলেন। ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী আন্ত্রিক-কাণ্ডের জেরে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অবসর নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলতেই শুরু হয়ে গেল হট্টগোল।
বৃহস্পতিবার পুর অধিবেশনে মৃত্যুঞ্জয়বাবু মেয়রের উদ্দেশে বলেন, ‘‘পুরসভার জল খেয়ে কয়েক হাজার বাসিন্দা আক্রান্ত। জলের দায়িত্ব আপনার। আপনাকে জলশোভন বলা হয়। এ ঘটনার পরে আপনার স্বেচ্ছাবসর নেওয়া উচিত।’’
যেন আগুনে ঘি পড়ল। প্রায় তেড়েফুঁড়ে উঠলেন শাসক দলের কাউন্সিলরেরা। চেয়ারপার্সন মালা রায় বলতে থাকেন, ‘‘ওঁকে বলতে দিন।’’ এক সময়ে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার দলীয় কাউন্সিলরদের শান্ত করেন।
দক্ষিণ শহরতলির কয়েকটি ওয়ার্ডে আন্ত্রিকের প্রকোপ নিয়ে এ দিন মুলতবি প্রস্তাব এনেছিল সিপিএম। শুরু থেকেই তা নিয়ে উত্তপ্ত ছিল সভা। মেয়রকে লক্ষ্য করে কংগ্রেসের প্রকাশ উপাধ্যায় বলতে থাকেন, ‘‘জল নিয়ে রাজনীতি করতে আসিনি। তবে কলকাতা পুরসভার জল পরীক্ষার ল্যাবরেটরি নিম্নমানের। তা উন্নত করা দরকার। তা না হলে কেউ হয়তো এ বার ডায়রিয়া শোভন বলবে!’’
এ সব টিপ্পনীতে মেয়র চুপ থাকলেও, মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার, অতীন ঘোষেরা বলেন, অধিবেশন কক্ষে বিরোধীরা যে ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, এলাকার মানুষের কাছে তাঁদের সে ভাবে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। বামেরা জল নিয়ে রাজনীতি করছেন। দেবব্রতবাবু বলেন, ‘‘ওদের আমলেই বেহালার ভেজাল তেল আর গার্ডেনরিচে জল দূষণ হয়েছিল।’’
সিপিএমের কাউন্সিলর রত্না রায় মজুমদার মেয়রের উদ্দেশে পাল্টা বলেন, ‘‘ওঁর দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যে বিভ্রান্ত হয়েছেন বাসিন্দারা। এমনকী, প্রশাসনও। এর দায় মেয়র এড়াতে পারেন না।’’
আরও পড়ুন: কী জল খাব, ভেবেই অথৈ জলে গড়িয়া
গোলমাল শুরু হয় ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রিঙ্কু নস্করের বক্তব্য চলাকালীনও। ওই ওয়ার্ডেই আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রিঙ্কু বলতে থাকেন, ‘‘জলে প্রায়ই নোংরা, ময়লা থাকে। আন্ত্রিকের পরে আতঙ্ক এতটাই বেড়েছে যে, জল খেতে ভয় পাচ্ছেন বাসিন্দারা। মেয়র এলাকায় গিয়ে যদি বাসিন্দাদের জল ফুটিয়ে খেতে বলতেন, তা হলে কি তাঁর সম্মানহানি ঘটত?’’
এর পরেই রিঙ্কু বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভায় সর্বক্ষণের জন্য এক জন মেয়রের দরকার। ওঁর সরে দাঁড়ানো উচিত।’’ রিঙ্কুর বক্তব্যের জবাবি ভাষণে শেষ বক্তা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পুর প্রশাসনকে না জানিয়ে নিজে থেকে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জল না খাওয়ার জন্য মাইকে ঘোষণা করলেন। ওই ঘোষণার দায়িত্ব পুরসভা নেবে না। ভবিষ্যতে এ নিয়ে কী করা যায়, তা দেখতে হবে।’’
রিঙ্কু বলেন, ‘‘কী আর করবেন? আমার ওয়ার্ডে একটা বুস্টার পাম্পিং স্টেশন করার কথা হচ্ছিল। সেটা হয়তো বন্ধ করে দেবেন। তা দিন না। মানুষ এর জবাব দেবে।’’
মেয়র সিপিএমের কাউন্সিলরদের উদ্দেশে মন্তব্য করেন, ‘‘ফাঁকা কলসির শব্দ বেশি।’’ এর পরেই কক্ষ ত্যাগ করেন বাম কাউন্সিলরেরা।