মৃতের অঙ্গ আনতে ফের গ্রিন করিডর

এ বার ইএম বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এসএসকেএমে নিয়ে গিয়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করে দিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০৭:০০
Share:

অঙ্গ নিয়ে ছুটছে অ্যাম্বুল্যান্স। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

ফের গ্রিন করিডর তৈরি করে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের নজির গড়ল শহর।

Advertisement

এ বার ইএম বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এসএসকেএমে নিয়ে গিয়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করে দিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, বুধবার কল্যাণী সরকার (৫৭) নামে এক মহিলা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার চিকিৎসকেরা কল্যাণীদেবীর ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণার আর্জি জানান স্বাস্থ্য দফতরে। পরিবারের সম্মতি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের নিযুক্ত নোডাল অফিসার ওই প্রৌঢ়ার ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করেন। শুক্রবার শুরু হয় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অনুমতির প্রক্রিয়া। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য সরকারের কাছে জমা পড়া আবেদনের তালিকা দেখে স্থির করা হয় গ্রহীতার নাম।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর জানায়, এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালে লিভার এবং একটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়। আর একটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয় ওই বেসরকারি হাসপাতালে।

পুলিশের সাহায্যে এ দিন বিকেলে গ্রিন করিডর তৈরি হয়। বাইপাস সংলগ্ন ‘রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস’ থেকে এসএসকেএম পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তায় সব ক’টি সিগন্যাল কিছু ক্ষণের জন্য সবুজ রাখা হয়। ওই সময়ে যাতে রাস্তায় যানজট তৈরি না হয়, সে দিকেও নজর রাখে ট্র্যাফিক পুলিশ। মাত্র বারো মিনিটে মৃতের দেহ থেকে সংগ্রহ করা লিভার এবং কিডনি পৌঁছয় এসএসকেএমে।

সম্প্রতি ওই বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য দফতর থেকে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের অনুমতি পেয়েছে। এ দিন রাঁচীর এক রোগীকে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের বিষয়ে জানানো হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাঁচী থেকে তিনি আসতে পারেননি। তাই সেই প্রতিস্থাপন হয়নি।

এসএসকেএমে শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছিল। প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চালান সেখানকার ‘স্কুল অব ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড লিভার ডিজিজ’-এর চিকিৎসকেরা। শুরু হয় কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারও।

স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অদিতিকিশোর সরকার বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। অঙ্গদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন। তাই এমন কাজ ধারাবাহিক ভাবে করা যাচ্ছে। পরিকাঠামোরও উন্নতি হচ্ছে। প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। তাই দ্রুত প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে।’’

তবে, স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের মতে, এ রাজ্যে চাহিদার তুলনায় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের হার যথেষ্ট কম। প্রতিদিন অঙ্গের আবেদনের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। বিশেষত, এ রাজ্যে পথ দুর্ঘটনায় জখমের ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা হাতে গোনা। দুর্ঘটনায় জখমের ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা হলে আরও বেশি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ থাকে। অন্য দিকে, কোনও সংক্রামক
রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে জটিলতা তৈরি হয়।

কিছু দিন আগেই একটি পথ দুর্ঘটনায় জখমের ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের নজির গড়তে সফল হয়েছিলেন কলকাতা পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। অঙ্গদানের এই প্রবণতা আরও বাড়া উচিত বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement