শব্দমাত্রা পরীক্ষায় ফেল অধিকাংশ বাজি

পরীক্ষার্থী অর্থাৎ বাজি। গোটা কলকাতার পাঁচটি বাজি বাজারের ৩৪টি নতুন বাজির শব্দমাত্রা পরীক্ষা ছিল বৃহস্পতিবার টালা পার্কে। সেখানে এটাই চূড়ান্ত ফলাফল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১২
Share:

টালা পার্কে চলছে বাজির শব্দমাত্রা পরীক্ষা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৪। চূড়ান্ত ফল বেরোনোর পরে দেখা গেল, পাশ করেছে মাত্র পাঁচ। বাকিগুলির ক্ষেত্রে পড়েছে লাল দাগ। একটিকে আবার পরীক্ষায় বসতেই দেওয়া হয়নি।

Advertisement

পরীক্ষার্থী অর্থাৎ বাজি। গোটা কলকাতার পাঁচটি বাজি বাজারের ৩৪টি নতুন বাজির শব্দমাত্রা পরীক্ষা ছিল বৃহস্পতিবার টালা পার্কে। সেখানে এটাই চূড়ান্ত ফলাফল। লাইসেন্স না থাকায় চম্পাহাটির একটি বাজিকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। অন্য দিকে, অনুত্তীর্ণ হওয়া ২৮টি বাজির মধ্যে ছ’টি বাজি ফাটেনি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, ৯০ ডেসিবেলের বেশি শব্দমাত্রা থাকায় অধিকাংশ বাজি ফেল করেছে। সেখানে হাজির ছিলেন কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) সুখেন্দু হীরা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও দমকলের প্রতিনিধিরা।

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশের পরে বাজি পরীক্ষায় ধোঁয়ার গুণাগুণও বিচার্য হয়েছে। কিন্তু এ বছর ধোঁয়া পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিলেও বায়ুদূষণ মাপার পরিকাঠামো এখনও তৈরি হয়নি। তবে এ দিন যে পরিকাঠামোর মধ্যে বাজি পরীক্ষা হয়, তাতে ক্ষুব্ধ বিভিন্ন বাজি বাজারের প্রতিনিধিরা। ‘বড়বাজার ফায়ারওয়ার্কস ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক শান্তনু দত্তের অভিযোগ, ‘‘মাঠে ইট বিছিয়ে যে ভাবে বাজি ফাটানো হয়েছে, তা একেবারেই ঠিক পদ্ধতি নয়। এতে শব্দমাত্রা ঠিক মতো যাচাই হয় না।’’ একই অভিযোগ করে বেহালা বাজি বাজারের সভাপতি অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী কংক্রিটের উপরে বাজি ফাটিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। অন্য বছরে শব্দমাত্রা মাপার জন্য একাধিক যন্ত্র থাকত। কিন্তু এ বার ছিল মাত্র একটি।’’ যদিও বাজি বাজার সংগঠনের প্রতিনিধিদের অভিযোগ নস্যাৎ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সব কিছুই নিয়ম মেনে হয়েছে। আসলে বেশিরভাগ বাজি পরীক্ষায় ফেল করবে বুঝতে পেরে ওঁরা এই জাতীয় অভিযোগ আনছেন।’’

Advertisement

এই পরীক্ষায় একের পর এক ‘শেল’ বিকট শব্দে ফাটায় কান ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। যদিও পরীক্ষা দিতে আসা ১২টি ‘শেল’ই ফেল করেছে। বেশির ভাগ বাজি বিকট শব্দে ফাটায় পুলিশ আধিকারিকেরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলেন, ‘‘দিনের বেলাতেই এই! তা হলে গভীর রাতে ওই শব্দ কোথায় পৌঁছবে, বোঝাই যাচ্ছে।’’

পরীক্ষামূলক ভাবে শব্দবাজি আটকানো হলেও বাস্তবে কালীপুজো এবং দীপাবলির সময়ে আতসবাজির দাপট কি সত্যিই কমবে? উত্তরে ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) সুখেন্দুবাবু বলেন, ‘‘লাইসেন্সবিহীন বাজি বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ মেনে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে লাগাতার প্রচার চালানো হবে। কলকাতা পুলিশের তরফে ১০৫টি নিষিদ্ধ বাজির তালিকা আগেই ঘোষণা করা হয়েছে।’’

গত বছর টালা পার্কে বাজি পরীক্ষায় ১১ ধরনের বাজির শব্দমাত্রা পরীক্ষা হয়েছিল। এ বার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন গুণেরও বেশি। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প সমিতির সভাপতি শুভঙ্কর মান্না বলেন, ‘‘নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি ঠেকাতে গত এক বছর ধরে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। তাঁরা সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন। তাই বাজির নমুনা পরীক্ষাও বেড়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন