Sinthee

পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, থানার মধ্যেই মারপিট করল তৃণমূল-বিজেপি, দর্শক পুলিশ কর্তারা!

কেন দু’জন শীর্ষ পুলিশ কর্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেন না? সে প্রশ্নের সোজাসুজি কোনও উত্তর দেননি লালবাজারের কর্তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:১৮
Share:

গণ্ডগোলের সময় বিজেপি নেতার গাড়ি ভাঙচুর। —নিজস্ব চিত্র।

সিঁথি থানায় তখন হাজির আশপাশের অন্তত তিন থানার ওসি। রয়েছেন বিভাগীয় ডেপুটি কমিশনার থেকে শুরু করে যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার অফিসারেরা। তার মধ্যেই গোটা থানা চত্বর দু’টি রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের দখলে চলে গেল। সোমবার রাতে পুলিশের সামনেই থানার মধ্যে মারামারি-ভাঙচুর চালালেন শাসক তৃণমূল এবং বিজেপির সদস্যরা। কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করল পুলিশ। পুলিশেরই একটি অংশের দাবি, প্রথম থেকেই পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ তাঁদের সহকর্মীদের একাংশ।

Advertisement

একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের ঘরে রাখা শৌচাগারের কল, পাইপ এবং বিভিন্ন ধরনের ‘বাথরুম ফিটিংস’-সহ মার্বেল পালিশ করার ৮টি বিভিন্ন মাপের মেশিন চুরির তদন্তকে কেন্দ্র করেই সোমবার জেরার জন্য ডাকা হয়েছিল ৫৪ বছরের রাজকুমার সাউকে। পুলিশ হেফাজতে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই মৃতের আত্মীয় এবং উত্তেজিত জনতা সোমবার সন্ধ্যাতেই এক দফা ভাঙচুর করে থানার ভিতরে। সেই সময়ে পুলিশ কোনও মতে মারমুখী জনতাকে থানা চত্বরের বাইরে বের করে তালা দিয়ে দেয় মূল ফটকে। সেই সময়ে বাইরে চলছিল বিক্ষোভ। তার মধ্যেই রাত ১০টা নাগাদ ঘটনাস্থলে হাজির হন সিঁথি চত্বরের এক বিজেপি নেতা। তিনি দাবি করেন, মৃত ব্যক্তি তাঁদের দলের সদস্য। যদিও রাজকুমার সাউয়ের দুই ছেলে অজয়-বিজয় এবং ভাই রাকেশ দাবি করেছেন যে, রাজকুমার কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

বিজেপির ওই নেতা পুলিশ কর্মীদের নিজের পরিচয় দিয়ে ঢুকে যান থানা চত্বরে। তার খানিক পরেই থানায় হাজির হন ওই এলাকার তৃণমূল নেতা সৃজন বসু। এলাকায় তিনি কাউন্সিলর এবং রাজ্য সভার সাংসদ শান্তনু সেনের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। রাত ১০টার পর থেকেই থানা চত্বরে ভিড় বাড়তে থাকে দুই দলের কর্মী নেতাদের। সাধারণ মানুষকে থানায় ঢুকতে না দিলেও, এঁরা থানায় ঢুকতে কোনও বাধা পাননি। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, রাত ১১টা নাগাদ থানায় পৌঁছন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর গৌতম হালদার। তিনি থানায় ঢোকার কয়েক মিনিটের মধ্যেই থানা চত্বরের মধ্যে শুরু হয়ে যায় দুই দলের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারি। ইতিমধ্যে চলে আসেন তৃণমূলের আরও এক কাউন্সিলর পুষ্পালি সিংহ। দলবল নিয়ে পৌঁছন বিজেপির উত্তর কলকাতা জেলার সভাপতি দীনেশ পাণ্ডে।

Advertisement

দু’পক্ষের মারামারিতে আহত এক বিজেপি কর্মী।

আরও পড়ুন: হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় এফআইআর সিঁথি থানার পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে​

থানার মধ্যে এক দফা মারামারির পর বেধড়ক মারধর শুরু হয় থানার বাইরে। অভিযোগ, তার পরেও পুলিশকে দেখা যায়নি কোনও পদক্ষেপ করতে। ঘটনার পর মঙ্গলবার বিজেপির নেতারা দাবি করেছেন, তাঁরা দলীয় কর্মীর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাতে থানায় গিয়েছিলেন। দীনেশ পাণ্ডে দাবি করেন, তাঁকে মারধর করে তৃণমূলের লোকজন, ভাঙচুর করা হয় তাঁর গাড়িও। পাল্টা সৃজন বসু এবং গৌতম হালদারের দাবি, বহিরাগত লোকজন থানায় ঢুকে ঝামেলা করছিল তাই এলাকার মানুষ প্রতিরোধ করেছেন। আর এখানেই পুলিশেরই একটা অংশের মন্তব্য, পুলিশ কী নিজেদের নিরাপত্তা দিতে পারে না? তার জন্য রাজনৈতিক দলের লোকজন দরকার হয়!

আর সেখানেই তাঁদের প্রশ্ন, কী ভাবে পদস্থ পুলিশ কর্তাদের উপস্থিতিতে গোটা মামলার সঙ্গে নূন্যতম যোগ নেই এমন লোকজন থানায় ঢুকল? তাঁরা থানা চত্বরে গন্ডগোল করার চেষ্টা করছে দেখেও কেন তাঁদের বাধা দেওয়া হল না? গোটাটাই সোমবার থানায় উপস্থিত পুলিশ কর্তাদের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ব্যর্থতা বলেই মনে করছেন লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের একটি অংশও। মঙ্গলবার দুপুরে থানায় যান অতিরিক্ত কমিশনার দময়ন্তী সেন। সূত্রের খবর, গোটা অবস্থা খতিয়ে দেখে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

সিঁথি থানার সামনে তৃণমূল-বিজেপির জমায়েত।

আরও পড়ুন: ঘৃণার রাজনীতির কোনও জায়গা নেই, দিল্লিতে বিজেপির হার নিয়ে বললেন মমতা​

কেন দু’জন শীর্ষ পুলিশ কর্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেন না? সে প্রশ্নের সোজাসুজি কোনও উত্তর দেননি লালবাজারের কর্তারা। তাঁরা জানান, রাজকুমারের মৃত্যু নিয়ে তাঁর ভাইয়ের করা অভিযোগে শুরু হওয়া মামলা ছাড়াও, আরও দু’টি এফআইআর করা হয়েছে। দুটোই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। দু’টি মামলাই করা হয়েছে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। একটি থানার মধ্যে ভাঙচুরের ঘটনায়, অন্যটি থানার বাইরে মারপিটের ঘটনায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন