আমরি হাসপাতালের বদ্ধ কেবিনে মৃত সেই মুখগুলো এখনও তাড়া করে প্রত্যক্ষদর্শীদের। দেহে কোথাও ক্ষতচিহ্ন নেই। যেন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে। শুধু নাকের কাছটায় খানিকটা কার্বনের গুঁড়ো।
বেসমেন্টে লাগা আগুনের ধোঁয়া ঢুকেই তিন-চার তলার কেবিনে দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অশক্ত বৃদ্ধ রোগীদের বেশির ভাগেরই বেরোনোর ক্ষমতা ছিল না। কার্নিশ বেয়ে উঠে জানলা ভেঙে স্থানীয় যুবকেরা তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা করলেও অনেকের ক্ষেত্রেই শেষরক্ষা হয়নি। উদ্ধারের পরেও কাহিল দশায় পুরোপুরি নিস্পন্দ হয়ে যান।
২০১১-র সেই ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা নিয়ে এত দিনে টনক নড়ছে দমকলের। মন্ত্রী জাভেদ খানের পরিকল্পনা, শহরের বহুতলে ঘরে-ঘরে অক্সিজেন মাস্ক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরি-র রোগীদের মাস্ক দেওয়া গেলে আরও কিছুক্ষণ হয়তো বিষাক্ত ধোঁয়ার সঙ্গে লড়তে পারতেন তাঁরা। অনেক বহুতলের ফ্ল্যাটেও তো শুধু বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই থাকেন। অঘটন ঘটলে মাস্ক পরে তাঁরা নিরাপদ পথ ধরে বেরোতে পারবেন।’’ শহরের যে কোনও বহুতল ফ্ল্যাট, হাসপাতাল, শপিংমল, হোটেল, অফিস ইত্যাদিতে অক্সিজেন মাস্ক রাখা বাধ্যতামূলক করার জন্য আইন করতে চাইছে দমকল। প্রাথমিক আলোচনাও শুরু করেছেন মন্ত্রী। আইন বিভাগের অনুমতি পেলেই বিধানসভার পরবর্তী অধিবেশনে বিল আনা হবে বলে জানান তিনি। তাঁর বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতাও এই পরিকল্পনা উস্কে দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘সিঙ্গাপুর, তাইল্যান্ডে তো হোটেলের ঘরেও অক্সিজেন মাস্ক থাকে। এ রাজ্যেও এটুকু করা যেতেই পারে!’’
এমনিতেই পাঁচতলার উপরে বহুতল হলেই অগ্নিসুরক্ষায় ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মেনে চলতে হয়। তবেই পুরসভা বা দমকলের তরফে সেই বাড়ির ছাড়পত্র দেওয়ার কথা। এখন অক্সিজেন মাস্ক রাখাও বাধ্যতামূলক করতে চায় দমকল।
কিন্তু সুরক্ষার জন্য গৃহস্থ ফ্ল্যাটে কী রাখবেন, তা কি সরকার ঠিক করতে পারবে? দমকলের এক কর্তার কথায়, ‘‘যাঁরা বহুতলে থাকছেন, আর যাঁরা মালিক— সকলেরই সুরক্ষা নিয়ে দায়িত্ব আছে। মাস্ক রাখার আইন কার্যকর করা যেতেই পারে।’’ দফতর সূত্রের খবর, দমকলের গাড়ি আসতে দেরি হলে বা কাউকে উদ্ধার করা কিছুটা কঠিন হলেও মাস্ক পরা বিপন্ন ব্যক্তি অন্তত মিনিট ২০-২৫ নিঃশ্বাস নিয়ে বিষাক্ত ধোঁয়ার সঙ্গে লড়তে পারবেন। অক্সিজেন মাস্ক-এর দাম দেড় থেকে দু’হাজার টাকার মধ্যে। বিভিন্ন বহুতলের প্রোমোটার বা বাড়ির মালিকদের পক্ষে এটুকু খরচ করা তেমন দুঃসাধ্যও নয়।
তবে কিছু প্রশ্ন থাকছেই। সম্প্রতি দেখা গিয়েেছ বিভিন্ন পুর-এলাকার বহুতলগুলিতে কে কতটা নিয়ম মেনেছে, সে নথি নেই দমকলের কাছে। ফলে, ফের একটা আইন সংযোজন নিয়ে সংশয় আছে। এক দমকলকর্তারই আক্ষেপ, ‘‘বহুতলের চলতি আইনগুলোই কে মানছেন আর মানছেন না, খেয়াল রাখতে পারছি না। নতুন আইন হলেই রাতারাতি সব পাল্টে যাবে বলে মনে হয় না।’’