নিউ টাউনে সিন্ডিকেটের লড়াইয়ে এ বার আক্রান্ত হলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। এত দিন সিন্ডিকেটের লড়াইয়ে আক্রান্ত হয়েছেন সমর্থকেরা। এ বার আক্রান্ত তৃণমূলের নেতা তথা জ্যাংড়া-হাতিয়ারা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য প্রহ্লাদ মণ্ডল। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ প্রহ্লাদবাবুকে লক্ষ করে গুলি চালায় কিছু দুষ্কৃতী। গুলি লাগে প্রহ্লাদবাবুর হাতে। প্রহ্লাদবাবুর সঙ্গে থাকা তিন যুবককে কোপানো হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে এই গুলি চালানোর ঘটনায় ফের আঙুল উঠেছে তৃণমূলেরই এক গোষ্ঠীর দিকেই।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। প্রহ্লাদবাবুর বাড়ি নিউ টাউন থানা এলাকার যাত্রাগাছিতে। তিনি জানান, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ খাওয়া দাওয়া সেরে যখন ঘুমোতে যাচ্ছিলেন তখন বাইরে গণ্ডগোলের আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে আসেন। প্রহ্লাদবাবু বলেন, “বাইরে যেতেই কয়েক জন আমার উপরে চড়াও হয়। আমাকে বাঁচাতে কয়েক জন আত্মীয় ঘটনাস্থলে এলে তাঁরাও আক্রান্ত হন। তাঁদের কোপানোও হয়। দুষ্কৃতীরা আমাকে গুলি করতে গেলে আমি হাত দিয়ে থামাতে যাই। তখনই হাতে গুলি লাগে।”
ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার রাতেই উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। ঘটনাস্থলে আসে নিউ টাউন থানার পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আপাতত এলাকায় কোনও গণ্ডগোল নেই। তবে পুলিশি টহলদারি রয়েছে।”
ঘটনার পরে রক্তাক্ত অবস্থায় প্রহ্লাদবাবুকে প্রথমে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, “গুলি চালিয়েছে তৃণমূলের লোকেরাই। ওঁরা আমাদের দলেরই কর্মী।” কিন্তু কেন গুলি চালানো হল তা নিয়ে অবশ্য তিনি মুখ খোলেননি।
এলাকার তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেন, “শাসক দলের একাংশের মদতেই তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যের উপরে আক্রমণ হয়েছে। আফতাবউদ্দিনের লোকজন এই কাজ করেছে। আফতাব কার ঘনিষ্ঠ তা সবাই জানেন।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, আফতাবউদ্দিন নিউ টাউন এলাকায় সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের অনুগামী বলেই পরিচিত। তবে কাকলিদেবীকে বার বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। আফতাবউদ্দিন বলেন, “অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রথমে বিধায়কের ‘দল’-এর কয়েক জন রাত দশটা নাগাদ আমাদের দলের কয়েক জনকে আক্রমণ করে। এ নিয়ে গণ্ডগোল শুরু হয়। প্রহ্লাদরা ঘটনাস্থলে এসে আরও গণ্ডগোল পাকায়। ওরা আমাদের কয়েক জনকে রড দিয়ে বেধড়ক মারে। এর মধ্যেই কোনও ভাবে প্রহ্লাদ আক্রান্ত হয়। গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেনি।”
তবে শুক্রবার সকালেও এলাকাবাসীর একাংশ জানান, ৫ থেকে ৬ রাউন্ড গুলি চলেছে এলোপাথাড়ি ভাবে। এক স্থানীয় বাসিন্দার প্রশ্ন, “রাত সাড়ে দশটায় এলাকায় গুলি চলছে। এ সময়ে এলাকায় যথেষ্ট লোক জন থাকে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? সিন্ডিকেটের লড়াইয়ে এ বার তো সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হবে।”
সিন্ডিকেটের দখল নিয়ে নিউ টাউনে লড়াই অবশ্য নতুন নয়। অভিযোগ, তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এই লড়াইয়ে কখনও প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মারপিট হয়েছে কখনও পোড়ানো হয়েছে পার্টি অফিস। অভিযোগ, এলাকার বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত ও সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের অনুগামীদের মধ্যে এলাকা দখল ও সিন্ডিকেট দখল নিয়ে এই লড়াই।
সব্যসাচীবাবু অবশ্য বলেছেন, “২০১১ থেকে ২০১৪ সালের গোড়া পর্যন্ত অশান্তি ছিল না। এখন এলাকার দুষ্কৃতী রুইস মণ্ডল ও তার দলের লোক অশান্তি করছে। রুইস জেলে যাওয়ায় তার সঙ্গী আফতাবউদ্দিন এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। রুইস বা আফতাব কার ঘনিষ্ঠ তা সকলেই জানেন।” সব্যসাচীবাবু আফতাব বা রুইসকে কাকলিদেবীর ঘনিষ্ঠ বলে ইঙ্গিত করলেও কাকলিদেবী অবশ্য এ দিন ফোন ধরেননি। তবে কিছু দিন আগে এ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, “এদের কাউকে আমি চিনি না। সিন্ডিকেটের ব্যপারে আমার কিছু জানা নেই।”