উৎসব মিটেছে, পথে রয়ে গিয়েছে মণ্ডপ ও হোর্ডিং

একই ছবি উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রিট, উল্টোডাঙা, জোড়াসাঁকো, বড়বাজার থেকে শুরু করে দক্ষিণের ভবানীপুর, চেতলা, ডায়মন্ড হারবার রোড, গড়িয়াহাট-সহ বিভিন্ন এলাকায়।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য এবং মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১৪
Share:

অমান্য: বাগুইআটিতে রাস্তা আটকে এখনও রয়েছে জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপ। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিয়ম মানা তো দূর, নিয়ম বলে যে আদৌ কিছু আছে, সেটাই যেন বেমালুম উধাও হয়ে গিয়েছে শহরের প্রধান রাস্তাগুলি থেকে।

Advertisement

পুজো এবং অন্যান্য পরব মিটে গিয়েছে অনেক দিন। বিভিন্ন সম্মেলন, জমায়েত, অভ্যর্থনার পর্বও সারা। অথচ মূল রাস্তার দু’ধারে রয়ে গিয়েছে হোর্ডিং, তোরণ, ওভারহেড গেট। এমনটাই কার্যত দস্তুর হয়ে উঠেছে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিমের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি দমদম রোডের মতো রাস্তাতেও।

ধর্মতলায় টিপ সুলতান মসজিদের উল্টো দিকে, লেনিন সরণির পাশেই ঝুলছে হাওড়ার ফোরশোর রোডের একটি পুজোর হোর্ডিং। একই হোর্ডিং রয়েছে শহরের আরও কিছু জায়গায়। তাতে জ্বলজ্বল করছে ওই পুজোর সভাপতি, রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়ের ছবি। মসজিদের সামনেও রয়ে গিয়েছে উত্তর কলকাতার একটি পুজোর হোর্ডিং। এই প্রসঙ্গে অরূপবাবুর বক্তব্য, ‘‘শীঘ্রই সব হোর্ডিং খুলে ফেলতে বলব।’’

Advertisement

ভিআইপি রোডে পুজোর শুভেচ্ছার হোর্ডিং। ছবি: শৌভিক দে।

অভিযোগ, রাস্তা জুড়ে হোর্ডিং-ফেস্টুন-ব্যানার ঝুলে থাকায় দৃশ্যদূষণ তো হচ্ছেই। কোথাও আবার ছেঁড়া হোর্ডিং বিপজ্জনক ভাবে এসে পড়েছে ফুটপাতে। মাস তিনেক আগে ইদ পালিত হলেও তার হোর্ডিং এখনও রয়ে গিয়েছে চাঁদনি চক এলাকায়। ম্যা়ডান স্ট্রিটে গিয়ে দেখা গেল, স্থানীয় কাউন্সিলরের তরফে ইদের শুভেচ্ছার হোর্ডিং ঝুলছে পথ জুড়ে।

একই ছবি উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রিট, উল্টোডাঙা, জোড়াসাঁকো, বড়বাজার থেকে শুরু করে দক্ষিণের ভবানীপুর, চেতলা, ডায়মন্ড হারবার রোড, গড়িয়াহাট-সহ বিভিন্ন এলাকায়। যেমন, টালা পার্কের কাছে একটি ক্লাবের দুর্গাপুজো মিটে যাওয়ার পরেও ছড়িয়ে গিয়েছে মণ্ডপের কাঠামো! বাঙুর অ্যাভিনিউয়ে আবার খোলা হয়নি সদ্য মিটে যাওয়া জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপ।

দমদম রোড ধরে স্টেশন থেকে নাগেরবাজারের দিকে এগোলে দেখা যাবে, সেন্ট মেরি স্কুল, ইন্দিরা ময়দান, ঘুঘুডাঙা পুলিশ ফাঁড়ি, হনুমান মন্দিরের সামনে রাস্তার উপরে পেল্লায় ওভারহেড গেট। দু’পাশে বাঁশের কাঠামো তৈরি করে নানা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ। অনুষ্ঠান মিটে গিয়েছে। কিন্তু ওই গেট খোলার ব্যবস্থা করেননি সংশ্লিষ্ট আয়োজক বা ডেকরেটর।

কলকাতা পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী রত্না রায়মজুমদারের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সৌন্দর্যায়নের জন্য একাধিক প্রকল্প নিচ্ছেন। অথচ অবাঞ্ছিত হোর্ডিং, ফেস্টুন, ব্যানারে শহর সৌন্দর্য হারাচ্ছে।’’ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞাপন দফতরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘হোর্ডিং খোলার কাজ চলছে। অবিলম্বে সব হোর্ডিং খুলে ফেলা হবে।’’

স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, এমনিতেই দুর্গা, কালী, গণেশ পুজো উপলক্ষে রাস্তা আটকে তৈরি করা হয় মণ্ডপ। পাশাপাশি রাস্তা খুঁড়ে বাঁশ-খুটি পুঁতে লাগানো হয়েছে হোর্ডিং। আরও অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে ওভারহেড গেট রেখে দেওয়া হয়। কেবল বদলে যায় অনুষ্ঠানসূচি। অনেক ক্ষেত্রে তোরণ খুলে ফেলার পরেও রাস্তা পড়ে থাকে ভাঙাচোরা অবস্থায়।

জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, রাস্তা খুঁড়ে এমন ভাবে হোর্ডিং লাগানোর নিয়ম নেই। সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও রয়েছে আইনে। কিন্তু তা মানছে কে! অভিযোগ, রাস্তার উপরে ইমারতি দ্রব্য ফেলা থাকে। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি। বাজার দখল করেছে অর্ধেক রাস্তা। তার উপরে এই সব হোর্ডিংয়ের জন্য যাতায়াতের অংশটুকু এমনিতেই সরু হয়ে গিয়েছে। ফলে লেগেই থাকছে যানজট। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এক সপ্তাহের মধ্যে সব হোর্ডিং ও ওভারহেড গেট খুলে ফেলা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন