মেট্রো থামল কারশেডে, হেঁটে গেলাম স্টেশনে

চালকের কোনও সহযোগিতা না পেয়ে আমরা জনা দশেক যাত্রী স্টেশন মাস্টারের কাছে যাই। উনি ফোনে খোঁজ নেন। সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিতও হন।

Advertisement

পারমিতা মজুমদার

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৫
Share:

ফাইল চিত্র।

মেট্রো আমার প্রিয় একটাই কারণে। কলকাতার ভয়াবহ যানজট থেকে রেহাই দিয়ে তা সঠিক সময়ে পৌঁছে দেয় গন্তব্যে। চাকরির সুবাদে রোজ কবি সুভাষ থেকে মেট্রো ধরি নোয়াপাড়া যাওয়ার জন্য। কিন্তু বেশির ভাগ দিনই, কবি সুভাষ স্টেশনের ডিসপ্লে বোর্ডে নোয়াপাড়া লেখা থাকলে বা ট্রেনের মাথায় নোয়াপাড়া লেখা থাকলেও মাঝরাস্তায় গন্তব্য বদলে যায়। অধিকাংশ দিনই দমদমে ঘোষণা হয়, মেট্রো আর যাবে না। যদি নোয়াপাড়া না-ই যাবে, তবে ডিসপ্লে বোর্ডে নোয়াপাড়া লেখার মানে কী?

Advertisement

সোমবার যা ঘটল, তা নজিরবিহীন। কবি সুভাষ থেকে বিকেল ৪-৪০ নাগাদ ট্রেনটি ছাড়ে। দমদমে পৌঁছয় ৫টা ১৯ মিনিটে। ঘোষণা ছাড়াই নোয়াপাড়া লেখা মেট্রোকে দমদম কারশেডে নিয়ে যাওয়া হল। শেষ মুহূর্তের বাঁক নেওয়ার আগে, যাঁরা মেট্রোর মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের পক্ষে বোঝা মুশকিল যে ট্রেনটি নোয়াপাড়া যাচ্ছে, নাকি কারশেড। আর ট্রেনে যে-হেতু নোয়াপাড়া লেখা ছিল, তাই যাত্রীদেরও সংশয় ছিল না। কিন্তু পরে যখন কারশেডে গাড়ি ঢুকল। তখন আমরা কয়েক জন সামনের কামরায় এগিয়ে গিয়ে চালকের দরজায় ধাক্কা মারি। উনি সামান্যতম সহযোগিতা না করে আমাদের বলেন, ‘‘৭-৮ মিনিট হাঁটলেই নোয়াপাড়া। হেঁটে চলে যান।’’

ততক্ষণে অনেক যাত্রী বেরিয়ে আসতে থাকেন অন্যান্য কামরা থেকে। যে রাস্তাটা সাত আট মিনিটের বলে হাঁটতে বলা হয়, তা আসলে পরিত্যক্ত, ফাঁকা জায়গা। নিরাপদ যে নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Advertisement

চালকের কোনও সহযোগিতা না পেয়ে আমরা জনা দশেক যাত্রী স্টেশন মাস্টারের কাছে যাই। উনি ফোনে খোঁজ নেন। সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিতও হন। কিন্তু আমাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠাতে চান। বলেন, লিখিত অভিযোগ নেবেন না। আমি জেদ ধরে থাকায় শেষে লিখিত অভিযোগ নিতে বাধ্য হন। আমার অভিযোগ দু’টি।

প্রথমত, ওই চালক আমাদের সমস্যাটি শুনতেই চাননি। মেট্রোয় একজন হাঁটুর সমস্যায় ভাল করে হাঁটতে না-পারা মহিলাও ছিলেন। এক বারও ভাবা হয়নি, ঐ ৭-৮ মিনিটের পথ উনি কী ভাবে হাঁটবেন, কেনই বা হাঁটবেন। উনি মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও এতটুকু ভাবেননি।

দ্বিতীয়ত, প্রায় প্রতিদিনই নোয়াপাড়া লেখা মেট্রোর বোর্ড বা ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড মাঝরাস্তায় বদলে যায় কেন? গাড়ি কম থাকলে রুট তুলে দেওয়া হোক, প্রথমে একটা গন্তব্য দিয়ে শুরু করে মাঝপথে সিদ্ধান্ত বদলে গেল— এমন গল্প চলতে থাকলে যাত্রী নিরাপত্তা তলানিতে ঠেকবে। কারণ কারশেড অঞ্চলটি বেশ অসুরক্ষিত জায়গা। মেট্রো স্টেশন বাড়ছে অথচ পরিষেবা কমছে, এটারও বিরোধিতা করছি।

যা কলকাতার গর্ব, তা নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা চলছে।

(লেখক শিক্ষিকা, মেট্রোর নিত্যযাত্রী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন