কলকাতার নভরোজ, গুজরাতি সংলাপে পার্সি নাটক

আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতার এক শতাব্দী-প্রাচীন পরম্পরার গন্ধে কিছুটা উতলা না-হয়ে পারবেন না কয়েক শো বুড়োবুড়ির দল। চৌরঙ্গি রোডে পার্সি ট্রাস্টের অফিস-বাড়ির সামনে বাসেরও বন্দোবস্ত করা হয়েছে বিকেলে।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০২:২২
Share:

মহড়া: আজ, বৃহস্পতিবার পার্সিদের নববর্ষ। সেই উপলক্ষে মঞ্চস্থ হবে নাটক। বুধবার, জিডি বিড়লা সভাগারে চলছে তারই চূড়ান্ত প্রস্তুতি। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ধর্মতলার ‘পার্সি ম্যানশন’-এর বাসিন্দা ১০৭ বছরের হিলা সোরাব বিলিমোরিয়া বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না, ঠিকই! কিন্তু তাঁর ছোট ছেলে জেমির উৎসাহের অন্ত নেই।

Advertisement

আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতার এক শতাব্দী-প্রাচীন পরম্পরার গন্ধে কিছুটা উতলা না-হয়ে পারবেন না কয়েক শো বুড়োবুড়ির দল। চৌরঙ্গি রোডে পার্সি ট্রাস্টের অফিস-বাড়ির সামনে বাসেরও বন্দোবস্ত করা হয়েছে বিকেলে। তখন দেখা হলে, ‘নভরোজ মুবারক’ সম্ভাষণে মাতবেন তাঁরা। আর পার্সি নববর্ষ বা নভরোজের সন্ধ্যায় দল বেঁধে বচ্ছরকার নাটকের আসরে সামিল হবেন।

ময়দানের পার্সি ক্লাবের কর্তা জেমি বিলিমোরিয়ার দাবি, কলকাতার পার্সিদের এই নাট্য-ঐতিহ্য ১০০ বছরেরও পুরনো। ১৯০৭ সালে পার্সি অ্যামেচার ড্রামাটিক ক্লাব শুরু। সেই থেকে বছরের গোড়ার দিনটায় এ শখের থিয়েটারের রুটিনে নড়চড় নেই। কমতে কমতে এখন খান ৪০০ পার্সি টিকে আছেন কলকাতায়। তাঁদের গড় বয়স ষাটের বেশি! এই ‘বৃদ্ধাশ্রম’-এও বচ্ছরকার নাটক নিয়ে মাতামাতিতে ভাটা নেই।

Advertisement

সন্ধ্যায় বাঁধাধরা নাটক পড়া বা মহলা চলছে সেই জুন থেকে। দেখলে শিমূলতলা-মধুপুরের সেকেলে প্রবাসী বাঙালির কথা মনে হয়। অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ থেকে দিনভর অফিসে ব্যস্ত পেশাদার— কলকাতার পার্সিরা অনেকেই নাটকের জ্বরে আক্রান্ত!
উনিশ শতকের মুম্বইয়ে গুজরাতি ভাষার পার্সি নাটক একটি স্বতন্ত্র ধারা হয়ে ওঠে। কলকাতার পার্সিদের সংগ্রহে এমনই এক ঝাঁক নাটক। দেড় হাজার বছর আগে পারস্যমুলুক থেকে আসা জরাথ্রুষ্ট অনুগামীরা গুজরাতিকেই মাতৃভাষা বলে মেনে নিয়েছিলেন। কলকাতার পার্সিদের নাটকও সেই ধারা বজায় রেখেছে।

দুই নাটকপাগল প্রবীণ সাইরাস ম্যাডান ও ইয়াসমিন কাপাডিয়াকে তাই একটু বেশি খাটতে হয়। মুম্বইয়ের পটভূমিতে লেখা নাটকগুলো কলকাতার সঙ্গে মেলাতে সংলাপে মেরিন ড্রাইভের বদলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বসিয়ে নেন সাইরাস। আর গুজরাতি পড়তে না-পারা আনকোরা কুশীলবদের জন্য রোমান হরফ বা হিন্দিতে গুজরাতি সংলাপের পার্ট লেখার হ্যাপা সামলান ইয়াসমিন। বাংলাঅপটু ছেলেমেয়েদের রবীন্দ্র কবিতা বা নাটকের পার্ট রপ্ত করাতে বেঙ্গালুরু-পুণের বাঙালিদেরও তো একই পন্থা নিতে দেখা যায় ইদানীং।

কলকাতার পার্সিদের এই উৎসবে অবশ্য বাঙালিদের ভূমিকাও উজ্জ্বল। এ বছর জিডি বিড়লা সভাঘরে হাসির নাটক ‘পেস্টনজি নি পোপটি’-র প্রধান নারী চরিত্রে রয়েছেন ইন্দ্রাণী আঙ্কলেসারিয়া। আদতে ঘোষ-বাড়ির
মেয়ে। তাঁর শ্বশুর দারিয়ুস ও শাশুড়ি ডলি— দু’জনেই দীর্ঘদিন পার্সিদের নাটকে জড়িয়ে। রোম্যান হরফে পড়ে পড়ে শাশুড়ির তালিম নিয়ে গুজরাতি পার্ট এখন ঝরঝরে মুখস্থ পার্সি বাড়ির বৌমা ইন্দ্রাণীর। আর নাটকের পরে চৌরঙ্গি রোডে নববর্ষের নৈশভোজের রূপকারও এ বার বাঙালিনী সুপ্রিয়া মনশেরজি। পার্সি শাশুড়ির কিছু রেসিপি প্রয়োগ করে সম্প্রতি একটি ভাতের হোটেল খুলেছেন সুপ্রিয়া। নববর্ষের মেনুতে পার্সি মাংসের পোলাও, ফিশ ফ্রাই থেকে বাঙালি কষা মাংসও রাখা হয়েছে।

গোড়ায় এই নাটকে মেয়েদের ভূমিকা থাকত না। বেসরকারি সংস্থার কর্ত্রী তেহনাজ পুনওয়ানি এখন নাটকের ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। বছরের প্রথম দিন বৌবাজারের অগ্নিদেবতার মন্দিরে প্রভাতী উপাসনার ধারাও বজায় রেখেছেন শহরের পার্সিরা। কিন্তু নাটকের মজাই কলকাতার উৎসবের সুরটি বেঁধে দেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন